বাঁশখালীতে বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি, মুদির দোকানেও বিক্রি হচ্ছে এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার

বাঁশখালীর বিভিন্ন ইউনিয়নে পানের দোকান থেকে শুরু করে মুদির দোকানে অবাধে বিক্রি হচ্ছে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার গুদামজাতও করা হয়েছে। সরকারি নিয়মনীতিকে উপেক্ষা করে অসাধু ব্যবসায়ীরা ঝুঁকি নিয়ে এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে যে কোনো সময় এলপি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে এলাকায় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।
উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার মধ্যে প্রায় ৬ লক্ষ মানুষের বসবাস। অধিকাংশ মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পাওয়ায় বিভিন্ন স্থানে পাকা দালান গড়ে উঠেছে। পাকা দালানসহ ঘর-বাড়িতে কাঠের জ্বালানির পরিবর্তে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার অনেক বেড়ে গেছে। পাশাপাশি চায়ের দোকানগুলোতেও জ্বালানি কাঠের পরিবর্তে ছোট-বড় গ্যাসের সিলিন্ডার ব্যবহৃত হচ্ছে।
স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, পৌরসদর জলদীসহ বৈলছড়ি, খানখানাবাদ, বাহারছড়া, কাথারিয়া, সরল, পুকুরিয়া, সাধনপুর, কালীপুর, গন্ডামারা, ছনুয়া, শেখেরখীল, শীলকূপ, চাম্বল, পুইছড়ি এলাকায় প্রায় ২ শতাধিক দোকানে এলপি গ্যাস সিলিন্ডারে বিক্রি হচ্ছে। ত্রুটিযুক্ত সিলিন্ডারও বাজারে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। নি¤œমানের রেগুলেটর, গ্যাস সরবরাহের পাইপ ও নি¤œ মানের চুলাও বাজারে মিলছে। বিক্রি হচ্ছে মরিচিকা ধরা গ্যাস সিলিন্ডারও। সরকারি নিয়ম অনুসারে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রিতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পর্যাপ্ত আলো-বাতাসসহ সংযুক্ত দোকানঘর, ফায়ার সার্ভিস লাইসেন্স, জ্বালানি অধিদপ্তরের লাইসেন্স, পরিবেশ অধিদপ্তর ছাড়পত্রের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কিন্তু এইসব নিয়মকানুন, লাইসেন্স ছাড়াই চলছে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসা। এই ব্যবসাকে আরো লাভবান হিসেবে ধরে নিয়ে ব্যবসায়ীরা একই দোকানে পাশাপাশি পেট্রোল, ডিজেল, কেরোসিন, অকটেন এই সব জ্বালানি তেল বিক্রি করছেন।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, এলাকায় পাকা বসতবাড়ি গড়ে ওঠায় বিভিন্ন পরিবারে গ্যাসের চুলা ও সিলিন্ডারের চাহিদা রয়েছে। এই ব্যবসা লাভবান হিসেবে ধরে নিয়ে ব্যবসায়ীরা যেখানে সেখানে গড়ে তুলেছে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির দোকান।
পরিবেশ অধিদপ্তর দক্ষিণ চট্টগ্রামে দায়িত্বরত কর্মকর্তা জানান, বাঁশখালী উপজেলায় গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসার জন্য আবেদনকারীর সংখ্যা জানা নেই। তবে বেশ কয়েকজন গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির জন্য আবেদন করেছে।
পুকুরিয়া ইউনিয়নের চৌমুহনী বাজারের ব্যবসায়ী নুরুল কবির জানান, সম্প্রতি বাজারের চায়ের দোকানে গ্যাসের চুলার সিপি খুলে গিয়ে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়ে আগুন ধরে। ব্যবসায়ীরা দ্রুত এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। একইভাবে মনছুরিয়া বাজার গুদামে, গুনাগরি ও চাম্বল এলাকায় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। গ্যাস সিলিন্ডার গুদামজাত এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ভয়ভীতি বিরাজ করছে।
বাঁশখালী পৌরসভার মেয়র মুক্তিযোদ্ধা সেলিমুল হক চৌধুরী বলেন, পৌর এলাকায় ছোট-বড় অনেক ভবন গড়ে উঠেছে। এ সমস্ত ভবনে জ্বালানি কাঠের পরিবর্তে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহৃত হচ্ছে। পৌর এলাকায় গ্যাস সিলিন্ডারের দোকানগুলোতে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের লাইসেন্স, ডকুমেন্ট রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, এগুলো তদারকির জন্য কর্মকর্তা রয়েছেন। শুনেছি অনেক দোকান ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে গড়ে উঠেছে। এই ব্যাপারে অভিযান চালানো হবে।
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার বলেন, গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির জন্য জ্বালানি অধিদপ্তর থেকে অনুমতিপত্র অবশ্যই প্রয়োজন। মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার ঝুঁকিপুর্ণ। যেকোন মুহূর্তে বড় ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। অবৈধ গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি বন্ধের ব্যাপারে অভিযান চালানো হবে।
/পূর্বকোণ! 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ