বাঁশখালীতে ২০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে চম্পট প্রতারক চক্রের

উপজেলার পুকুরিয়া চৌমুহনীতে ভাড়ায় আসবাবপত্র ও অফিস নিয়ে জাগরণ মহিলা সমিতি গঠন করে ঋণ দেয়ার নাম করে ১০ সদস্যবিশিষ্ট প্রতারক চক্র অর্ধশতাধিক সমিতির সদস্যের কাছ থেকে ২০ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হয়েছে।
গত ১৩ মার্চ সকালে সমিতির সদস্যদের টাকা নিয়ে দুপুরের পর প্রতারকচক্র পালিয়ে গেলে পুকুরিয়া ও পার্শ্ববর্তী চরতি ইউনিয়নের সমিতির সদস্যদের মাথায় হাত পড়ে। সন্ধ্যা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এনজিও জাগরণ মহিলা সমিতির পরিচয়দানকারী সংস্থার লোকজনদের না পেয়ে অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ ব্যাপারে স্থানীয় লোকজন ১৪ মার্চ দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দিয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
জানা যায়, পুকুরিয়া ইউনিয়নের চৌমুহনী বাজার এলাকায় ছালেহ আহমদের বাসভবনে গত সপ্তাহে জাগরণ মহিলা সমিতির সাইনবোর্ডে ১০ যুবক কার্যালয় খুলে বসেন। গত ৩ দিন ধরে পুকুরিয়ার চৌধুরী পাড়া, নতুন পাড়া, তুলাতলী, নাটমুড়া, চা-বাগান, পল্লান পাড়া ও তালগাঁও এলাকায় জাগরণ মহিলা সমিতি গঠন করার নামে কমিটি গঠন করা হয়। মহিলাদের সহজ কিস্তিতে ঋণ প্রস্তাবে এলাকার মহিলারা নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য প্রতারকচক্রের কথামতো রাজি হয়ে যায়। সমিতির কর্মকর্তারা ১ লক্ষ টাকা ঋণের জন্য ১০ হাজার টাকা জমা প্রদানের জন্য প্রস্তাব দেন। সেই প্রস্তাব সমিতির মহিলারা মেনে টাকা প্রদান করেন। গত বুধবার পুকুরিয়ার মুন্সি পাড়ায় শাপলা সমিতি নাম দিয়ে ৫০ হাজার টাকা ঋণ প্রস্তাবে দরব আলীর স্ত্রী আছিয়া বেগমকে সভাপতি করে সকালে ১১টার দিকে ১৫ সদস্যবিশিষ্ট সমিতি গঠন করে দেয়া হয়। তার কাছ থেকে আরো ২টি সমিতির নামে ৬৫ হাজার টাকা আদায় করা হয়। একইভাবে নতুন পাড়ায় নুরুল আমিনের স্ত্রী রুমাকে সভাপতি করায় ৫ লক্ষ টাকা ঋণ প্রস্তাবের জন্য তিনি ৫২ হাজার টাকা প্রদান করেন। গৃহিণী জেয়াসমিন আক্তারকে সভাপতি করায় ৫ লক্ষ টাকা ঋণ প্রস্তাবে তিনি ৪৮ হাজার টাকা প্রদান করেন। চায়ের দোকানদার সোহাগের স্ত্রী রুমা আক্তার ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ঋণ প্রস্তাবে ১৫ হাজার টাকা প্রদান করেছেন। একইভাবে ফজলুল কাদের তার স্ত্রীর নামে ১০ হাজার, সমশুল আলম তার স্ত্রীর নামে ১০ হাজার টাকা, আবু ছৈয়দ তার স্ত্রীর নামে ২০ হাজার টাকা প্রদান করেন।
পুকুরিয়া ইউনিয়নের মুন্সিপাড়ার ক্ষুদ্র মাছ ব্যবসায়ী দরব আলী জানান, দ্রুতভাবে পাওয়ার আশায় স্ত্রীর মাধ্যমে মহিলা সমিতি গঠন করে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে ঋণ প্রস্তাব করা হয়। মোহাম্মদ শহিদ ও মামুন নামে দুই ব্যক্তি দলবদ্ধভাবে গত ৩ দিন ধরে এলাকার বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে মহিলা সমিতি গঠনের নামে প্রস্তাব দেন। গত ১৩ মার্চ সকালে ১৪/১৫টি সমিতি গঠন করে ১৫০/২০০ জন গ্রাহকের ২০ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে গেছে। গত ১৩ মার্চ দুপুর ১২টার থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী এলাকায় নেই। অফিস তালাবদ্ধ রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ঋণ দেয়ার কথা থাকলেও দুপুরে অফিস তালাবদ্ধ ছিল। এরপর গ্রাহকেরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তারের নিকট অভিযোগ করে প্রতারকদের গ্রেপ্তার ও টাকা উদ্ধারের দাবি জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আমিন জানান, প্রতারকচক্র সালেহ আহমদের বিল্ডিংয়ে দারোয়ানের কাছ থেকে মাসিক চুক্তিতে ভাড়া নেয়। ডেকোরেশন থেকে চেয়ার টেবিল ভাড়া নিয়ে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে জাগরণ মহিলা সমিতি গঠনের কার্যক্রম শুরু করে। গত ১৩ মার্চ এলাকার ৮/১০ গ্রামের নিরীহ মানুষদের কাছ থেকে ২০ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতারণার শিকার হওয়া লোকজন বাজারে সালেহ আহমদের ভাড়া নেয়া বাসাতে প্রতারকদের খুঁজে না পেয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষ ঋণের আশায় প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে গেল।
বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামাল হোসেন বলেন, প্রতারকচক্রের খপ্পরে পড়ার আগেই তো তাদের সমিতি সঠিক কিনা, খোঁজ নেয়া দরকার ছিল। সুযোগ বুঝে প্রতারকচক্রটি নিরীহ মানুষদের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে তদন্ত করে দেখছি।
/পূর্বকোণ! 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ