বিএন ডেস্কঃ
দীর্ঘ দিন ধরে কোটার সংস্কারের জন্য আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা। নানা
মহল থেকে এর য়ৌক্তিকতা রয়েছে বলেও মতামত পাওয়া গেছে। মূলত এ কারণেই দেশ
জুড়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলনের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়। কোন ধরণের
রাজনীতি এই দাবী আদায়ের লড়াইয়ে সম্পৃক্ত নয় বলে একাধিকবার উল্লেখ করেছে
আন্দোনরত শিক্ষার্থীরা। কিন্তু শুরু থেকেই এই আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা
সাধারণ শিক্ষার্থীদের রাজনীতির রঙ দেয়া চেষ্টা করে তাদের উপর নির্যাতন
চালানোর অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার সকালেও শহীদ মিনারে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বিক্ষোভ
কর্মসূচি পালন করার সময় তাদের উপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ কর্মীরা।
হামলাকারীদের মধ্যে ছিল ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক সাইফ বাবু,
স্কুলছাত্র–বিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আবেদিন, মহসীন হলের ছাত্রলীগের সাধারণ
সম্পাদক মেহেদী হাসান সানিসহ বেশ কয়েকজন।
অন্যদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র
অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খানের বিরুদ্ধে করা
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ড
দিয়েছেন আদালত। সোমবার ঢাকার মহানগর হাকিম রায়হানুল ইসলাম এ আদেশ দেন।
এদিকে গত শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে
ছাত্রলীগের বেধড়ক মারধরের শিকার বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ
পরিষদের যুগ্ন আহ্বায়ক নূরুল হক নূর প্রকাশ্যে চিকিৎসা নিতে পাচ্ছেন না।
আহত অবস্থায় প্রথমে ঢাকা মেডিকেল পরর্তীতে এক প্রাইভেট হসপিটাল থেকে নেপথ্য
হুমকীর কারণে বের হয়ে আসতে হয়েছে।
এ সম্পর্কে নূরুলের ভাবী মিতা আক্তার বলেন, ‘গত রাত (রোববার) ১ টার
দিকে হাসপাতাল থেকে আমাদের বলা হয় আধা ঘণ্টার মধ্যে বের হয়ে যান। কিন্তু
কেন বের হয়ে যেতে হবে তার কোনো নির্দিষ্ট কারণ বলেনি কর্তৃপক্ষ। তখন
হাসপাতালের নিচে অনেক পুলিশ ছিল। নূরকে নিয়ে আমরা যখন নিচে নামি তখন তারা
আবার গেট বন্ধ করে রেখেছিল। এখন অন্য জায়গায় তার চিকিৎসা চলছে।’
আন্দোলনের অন্য নেতারাও হয় হামলার শিকার নয়তো বা হয়রানীর মধ্যে রয়েছেন।
আর তাদেরকে সবচেয়ে বেশি গায়েল করা হচ্ছে, ছাত্র শিবির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ
এনে। অথচ খোঁজ নিয়ে জানা যায় আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া অধিকাংশ শিক্ষার্থীরাই
ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্ট। কোন কারণে মতের মিল না হওয়ায় ছাত্র শিবির বলে তাদের
উপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রধান চার নেতার একজন রাশেদ খান। তার বিরুদ্ধে
অভিযোগ পূর্বে সে ইসলামী ছাত্র শিবিরের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তিনি কোটা
বিরোধী আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক। তার গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহ জেলায় সদর
উপজেলার মুরারীদহ গ্রাম। তার বাবার নাম সবাই বিশ্বাস। তিনি একজন
রাজমিস্ত্রি। মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন বাবার একমাত্র পুত্র সন্তান, তার দুই বোন
রয়েছে। মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন সূর্যসেন হলের আবাসিক ছাত্র। তবে সে হলে থাকতো
না। ২০১২ সালে সূর্যসেন হলের ৫০৫ নম্বর কক্ষে থাকতো। কোন ধরণের রাজনীতির
সাথে সংশ্লিষ্টতা নেই উল্লেখ করে রাশেদ জানিয়ে ছিলেন, আমি একজন সাধারণ
শিক্ষার্থী। আমি কোনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না । ফেইক আইডির মাধ্যমে তার
বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।’
এদিকে কোটা বিরোধী আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসান আল মামুনের বিরুদ্ধেও বিএনপি
ও শিবির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আনা হয়েছে। অথচ তিনি ছাত্রলীগের ঢাবির মহসিন
হল শাখার সহ-সভাপতি। নেত্রকোনার সদর উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নের নন্দীপুর
গ্রামের বাসিন্দা সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে তিনি।
হাসান আল মামুন বলেন, আমার বাবা ১৯৬৯ সালে বাংলাদেশে ছাত্রলীগের একটি ইউনিটের সভাপতি ছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেছেন কিন্তু সনদ নেননি। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে তিনি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক সেটি ভালোভাবেই জানেন। শিবির সংশ্লিষ কোনো পেজে লাইক বা কমেন্টস নেই বলে দাবি করে তিনি বলেন, আমি হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল ছাত্রলীগের চলতি কমিটির সহ-সভাপতি।
হাসান আল মামুন বলেন, আমার বাবা ১৯৬৯ সালে বাংলাদেশে ছাত্রলীগের একটি ইউনিটের সভাপতি ছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেছেন কিন্তু সনদ নেননি। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে তিনি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক সেটি ভালোভাবেই জানেন। শিবির সংশ্লিষ কোনো পেজে লাইক বা কমেন্টস নেই বলে দাবি করে তিনি বলেন, আমি হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল ছাত্রলীগের চলতি কমিটির সহ-সভাপতি।
কোটা বিরোধী আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হোসেন। তার বাড়ি ঠাকুরগাঁও
সদরে। বালিয়াডাঙ্গি সমীর উদ্দিন কলেজে এইচএসসিতে ভর্তি হয়েছিল। পাস করে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হলের
তত্কালীন ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হয়। অথচ এখন তাকেও বলা
হচ্ছে শিবির কর্মী। ফারুক হাসান বলেন, তিনি ঢাবি এসএম হল ছাত্রলীগের সাবেক
আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক। ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে তার কোনো
সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করেন।
কোটা বিরোধী আন্দোলনের আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুর। তার বাড়ি
পটুয়াখালীর কলাচিপা উপজেলার চরবিশ্বাস ইউনিয়নে। তার বাবার নাম ইদ্রিস
হাওলাদার। সাবেক ইউপি সদস্য। স্থানীয় জনতা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে নুর
সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করে। এরপর গাজীপুরে তার বোনের বাসায় থেকে
পড়ালেখা করে। গাজীপুরে এইচএসসি পাস করে সে ঢাবিতে ভর্তি হয়।
নুরুল হক নুর বলেন, ২০০৬ সালের চর বিশ্বাস জনতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়
ছাত্রলীগ কমিটির দপ্তর সম্পাদক ছিলাম। ২০১৩ সালে সেপ্টেম্বর থেকে ঢাবি
মুহসীন হল ছাত্রলীগের উপ-মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ছিলাম। আমার বাবা
২০০৯ থেকে ১৪ পর্যন্ত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক
ছিলেন। তিনি বর্তমান চর বিশ্বাস ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি।
0 মন্তব্যসমূহ