এবিসি সড়ক হয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার যোগাযোগ থমকে আছে একযুগ

নিউজ ডেস্কঃ
চট্টগ্রামের আনোয়ারা, বাঁশখালী ও কক্সবাজারের পেকুয়া-চকরিয়ার (এবিসি) ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের কাজ গত একযুগ ধরে থমকে আছে। এতে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার গমনের একমাত্র রাস্তা আরাকান সড়কের ওপর যেমনি বাড়ছে তীব্র চাপ, তেমনি চরম ভোগান্তিতে আছে দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার উপকূলের লক্ষ লক্ষ জনসাধারণ। সরেজমিনে দেখা গেছে, উক্ত আঞ্চলিক মহাসড়ক পুরোদমে চালু না হওয়ার বড় কারণ হচ্ছে উক্ত সড়কের ওপর নির্মিতব্য চারটি সেতুর কাজ গত ১৫ বছর ধরে ঝুলে থাকা। জানা যায়, এলজিইডির আওতায় দুটি এবং সড়ক ও জনপথ (সওজ) এর আওতায় দুটি সেতু ২০০৮ সালে নির্মাণকাজ সমাপ্ত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অদ্যাবধি এসব ব্রিজের কোন সুরাহা হয়নি। সওজ সূত্রে জানা গেছে, ২০০২ সালের ডিসেম্বরে বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে এবিসি মহাসড়কের পেকুয়া উপজেলার সীমান্ত এলাকা টইটং গ্রামে তিন কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০০৫ সালে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের মৃত্যু হলে নির্মাণকাজ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এরই মধ্যে ঐ সড়কের নির্মাণকাজ শেষ হলেও অসমাপ্ত সেতুর কারণে বাঁশখালী-পেকুয়া-চকরিয়া হয়ে কক্সবাজারের সাথে সংযুক্ত হতে পারছে না। একই সময়ে সওজ ওই মহাসড়কের পেকুয়া উপজেলার কাটাফাঁড়ি এলাকায় তিন কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘সমুদ্র সরণি’ নামে আরেকটি সেতুর নির্মাণ কাজ আরম্ভ করে। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার সেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ করে আত্মগোপন করায় কার্যাদেশ বাতিল করা হয়। গত ১০ বছরেও আর এ সেতুর কাজ শুরু করা হয়নি। এলজিইডি সূত্র জানায়, ২০০২ সালে ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া-করিয়ারদিয়া সড়কে একটি এবং ৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে উজানটিয়া-মাতারবাড়ি মৈত্রী সেতু নামে আরেকটি সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সংশ্লিষ্ট দুই ঠিকাদার আত্মগোপন করায় সেতু দুটির নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সেতু দুটির সাগরতল থেকে উঠানো চারটি পিলার ইতিমধ্যে ¯্রােতের তোড়ে হেলে গেছে। এ প্রসঙ্গে এলজিইডির তৎকালীন প্রকৌশলী শাহ আলম একটি জাতীয় দৈনিককে জানিয়েছিলেন, দীর্ঘ সময় কাজ বন্ধ রাখার অভিযোগে নিয়োগপ্রাপ্ত দুই ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু উপযুক্ত বরাদ্দ না থাকায় আর ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

খোঁজ-খবর নিয়ে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে তৎকালীন সরকারের সময় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সরাসরি সড়ক যোগাযোগের উন্নয়নে আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণের প্রাথমিক উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে এবিসি আঞ্চলিক মহাসড়ক (আনোয়ারা-বাঁশখালী-চকরিয়া) এর ৭৬ কি.মি. রাস্তা বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ২০০৫ সালের ৫ অক্টোবর তৎকালীন যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী নির্মাণকাজ শেষে উদ্বোধন করেছিলেন। সড়কটির টইটং সীমান্ত ব্রিজ হতে পেকুয়া অংশে বাঘগুজরা ব্রিজ পর্যন্ত এবং চকরিয়া অংশে বাঘগুজারা ব্রিজ হতে ঈদমনি ব্রিজ পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়েছিল। উপরোল্লিখিত চারটি ব্রিজ যথাসময়ে নির্মাণ সম্পন্ন না হওয়ায় মহাসড়কটি চালু করতে না পারার কারণে সড়কের নির্মিতাংশও অবহেলা-অব্যবস্থাপনা ও সংস্কারের অভাবে খানা-খন্দকে ভরে ওঠে। এতে স্থানীয়ভাবে যোগাযোগে যেভাবে জনসাধারণকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তেমনি সরকারের ব্যয়িত বিশাল বাজেটের অপচয় হচ্ছে। অভিজ্ঞ মহলের মতে, আরাকান সড়ক দিয়ে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের দূরত্ব ১৫০ কি.মি। যদি যথাযথ গুরুত্ব সহকারে এবিসি আঞ্চলিক মহাসড়ক পুরোদমে চালু করা হয় তাহলে এ দূরত্ব ৪৫ কি.মি. কমে ১০৫ কি.মি. এসে দাঁড়াবে; যাতে জনগণের সময় ও অর্থের ব্যাপক সাশ্রয় হবে। এ প্রসঙ্গে বাঁশখালী সরকারি আলাওল (ডিগ্রি) কলেজের লেকচারার মুহাম্মদ আমিনুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এবিসি মহাসড়কের আনোয়ারা চাতরী চৌমুহনী, বাঁশখালীর গুণাগরী, রামদাশহাট, জলদি মিঞার বাজার ও চাম্বল বাড়ির হাটে প্রায় সময় অসহনীয় যানজট লেগে থাকে। অবৈধ দখলদাররা রাস্তার ওপর দোকানপাট খুলে বসেছে। এতে প্রতিদিন চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এ রোডের যাত্রীদের। উপরোক্ত জংশনগুলো সংস্কার ও সম্প্রসারণ করে এ মহাসড়ক চালুর দাবিতে তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। এফবিসিসিআই’র গভর্নিং বডির সদস্য বাঁশখালীর জমিদার শেখ ওয়াজেদ আলী চৌধুরীর দৌহিত্র শেখ মঈনুদ্দীন রেজা আলী চৌধুরী বলেন, সরকার চট্টগ্রামের মিরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকা দিয়ে মেরিন ড্রাইভ রোড নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। যাতে ৭ হাজার কোটি টাকার ঊর্ধ্বে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে। সে তুলনায় মাত্র ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হলে এবিসি আঞ্চলিক মহাসড়কের ৪টি সেতু ও জরাজীর্ণ অংশ সুন্দরভাবে নির্মাণ করা সম্ভব হবে। এতে মৎস্য, চিংড়ি ও লবণ শিল্পসমৃদ্ধ দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারবাসীর অর্থনৈতিক জীবনে নতুন গতি সঞ্চার হবে। একইভাবে আরাকান সড়কের ওপর ব্যাপক চাপ কমবে এবং স্বল্প সময় ও স্বল্প খরচে বাণিজ্য ও পর্যটননগরী চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের মাঝে যোগাযোগের ক্ষেত্রে নবদ্বার উন্মোচিত হবে। এ ব্যাপারে যাচাই-বাছাই করে সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সরকারি দায়িত্বশীলদের প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানান।
সূত্রঃ দৈনিক পূর্বকোণ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ