‘কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা বিষয়ে প্রক্টর জানেন না‘

বিএন ডেস্কঃ
কোটা সংস্কার আন্দোলনের কর্মীদের ওপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছাত্রলীগ কর্মীদের হামলা সম্পর্কে জানেন না বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী। আজ সোমবার বেলা পৌনে একটার দিকে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিকদের তিনি বলেন এ কথা বলেন হামলা সম্পর্কে তিনি ‘অবহিত নন’।
আজ এবং গত কয়েক দিনের হামলা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রক্টর বলেন, এসব বিষয়ে তিনি অবহিত নন। বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এ সময় যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার অবরুদ্ধ করে কর্মসূচি দিয়েছে তাদের সম্পর্কেও আপনাদের জানতে হবে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর আজ সোমবার সকালে আবার হামলা হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে জড়ো হতে গেলে ছাত্রলীগের কর্মীরা হামলা চালান। তাঁদের কিল, ঘুষি, লাথি মেরে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। দুজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, হামলাকারীরা ছাত্রলীগের কর্মী। তাঁদের মধ্যে ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক সাইফ বাবু, স্কুলছাত্র-বিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আবেদিন, মহসীন হলের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সানিসহ বেশ কয়েকজনকে দেখা গেছে।
গত শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনেও কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ।
গত শনিবার সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় ব্যাপক মারধরের শিকার হন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী। এই হামলার জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিতকরণ ও বিচারের দাবিতে আজ দুপুর পৌনে ১২টার দিকে অপরাজেয় বাংলার সামনে মানববন্ধন করেন ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন বিভাগের কয়েকজন শিক্ষকও। তাঁরা সেখানে ১০ মিনিটের মতো অবস্থান নেন।
মানববন্ধনে শিক্ষক তাসনিম সিরাজ মাহবুব বলেন, ‘আমরা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নই। আমরা নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই। আমরা চাই আমাদের শিক্ষার্থীরা নিরপেক্ষভাবে মত প্রকাশ করতে পারুক।’

কোটা আন্দোলনের নেতা রাশেদ গ্রেপ্তার
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ছাত্রলীগের এক নেতার করা মামলায় রাশেদকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এর আগে রাশেদের আত্মীয় ও বন্ধুরা অভিযোগ করেন, আজ রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাশেদকে ধরে নিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় রাশেদের সঙ্গে থাকা মাহফুজ খান নামের অপর একজনকেও ধরে নিয়ে যাওয়া হয় বলে তাঁদের অভিযোগ।
পরে বেলা দেড়টার দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার উপপুলিশ কমিশনার জানান, রাশেদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রাশেদের বন্ধু বিন ইয়ামিন বলেন, আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তিনি, রাশেদ ও মাহফুজ ভাষানটেকের মজুমদার মোড়ে রাশেদের আত্মীয়ের বাসার সামনে ছিলেন। এ সময় পুলিশের পোশাক পরে ও সাদাপোশাকে কয়েকজন তাঁদের সামনে আসেন এবং তাঁদের পরিচয় জিজ্ঞাসা করতে থাকেন।
পুলিশের সঙ্গে ওই এলাকার কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাও ছিলেন। একপর্যায়ে তাঁদের গতিবিধি সন্দেহ হলে রাশেদ পাশের বাসার ছাদে আশ্রয় নেন। এ সময় সেখান থেকে তাঁকে খুঁজে বের করে আটক করা হয়। নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই রাশেদের মুঠোফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।
বিন ইয়ামিন বলেন, রাশেদের সঙ্গে থাকা মাহফুজ খানকেও তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।

ফের হামলা
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর ফের হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় তাদের মারধর করা হয়। এতে চার-পাঁচজন আহত হয়েছেন। এক নেতাকে তুলে নিয়ে যাওয়ারও অভিযোগ করেছেন আন্দোলনকারীরা।
আজ সকাল পৌণে ১১টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাকর্মীরা মানববন্ধনের জন্য দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নেওয়ার সময় এ হামলা ও মারধরের ঘটনা ঘটে।
আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেছেন, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এ হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হোসেনকে আহত অবস্থায় তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
সকাল ১০টা ৫০ মিনিটের দিকে ফারুকের নেতৃত্বে ১৫/২০ জন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী দাঁড়িয়ে থাকলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় স্কুল ও ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক জয়নুল আবেদীন, মহসিন হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সানীসহ ১০/১৫ জন হামলা করে। এতে ফারুক নিচে পড়ে যায়।
মারধর শেষে বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল আমিনকে তুলে নিয়ে যায় বাইকে করে। এই সময় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী নারী নেতৃদের গায়ে হাত তুলে। বেলা ১১টা ৫ মিনিটের দিকে আবার কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা শহীদ মিনারে জড়ো হলে ছাত্রলীগের নেতারা আবার হামলা চালায়। এতে নেতৃত্ব দেয় ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক সাইফ বাবু, মহসীন হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সানী।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা ফারুককে মারধরের সময় আন্দোলনরত মেয়েদের গায়ে হাত দেয়ার অভিযোগ করে এই দুই নারী শিক্ষার্থী বলেন, ‘তারা (ছাত্রলীগ নেতারা) গায়ে হাত দিয়েছে, তারা ধাক্কাধাকি করে আমাদের সেখান থেকে চলে যেতে বলেছে, তারা তুই করে কথা বলতেছে।
তারা এমন বেয়াদব, একটা মেয়ের সঙ্গে কীভাবে কথা বলতে হয় ন্যূনতম সেটাও জানে না। আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী একজন মেয়ে , বিরোধীদলীয় নেত্রী মেয়ে, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মেয়ের সঙ্গে এমন আচরণ করা হলো কেন?’
কারা হামলা করেছে জানতে চাইলে তারা বলেন, হামলাকারীদের তারা চেনেন কিন্তু নাম জানেন না। নারীদের একজন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘ আমি আসলে নাম বলতে পারবো না। তারা ছাত্রলীগের বিভিন্ন হলের নেতা। মোটরসাইকেলে করে এখানে এসেছিল।’
তারা আরো বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের মতো একটি যৌক্তিক আন্দোলনকে ছাত্রলীগ দিয়ে প্রতিহত করা যাবে না।
তবে সেখানে উপস্থিত ছাত্রলীগ কর্মীরা বলেছেন, সংগঠন থেকে নয়, সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে তারা ‘শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ’ বজায় রাখতে কাজ করছেন।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রাব্বানী বলেছেন, হামলা বা মারধরের বিষয়ে কেউ তাকে জানায়নি। অভিযোগ পেলে তারা ব্যবস্থা নেবেন।
এর আগে গত শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করতে গিয়ে পিটুনির শিকার হন আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক হাসান আল মামুন ও যুগ্ম আহ্বায়ক নূরুল হক নূর।
ঢাকার পর চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের কর্মসূচিতে হামলা চালিয়ে মারধর করা হয়।
এ বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ৯ এপ্রিল সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে ৭ মে পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করেন আন্দোলনকারীরা। পরে প্রধানমন্ত্রী সংসদে কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন। আন্দোলনকারীরা এ জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে আনন্দ মিছিলও করে। কিন্তু সেই প্রজ্ঞাপন এখনো প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ