কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের আইনী সহায়তার ঘোষণা ২০ আইনজীবীর

বিএন ডেস্কঃ
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ফ্রি আইনী সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের ২০ জন আইনজীবী। সোমবার সুপ্রিম কোর্টের ল’রিপোর্টার্স ফোরামের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে আইনী সহায়তার দেওয়ার কথা জানান এই আইনজীবীরা।
আইনজীবীরা বলেন, আন্দোলনকারীদের মধ্যে যারা গ্রেফতার হয়েছেন কিংবা যারা গ্রেফতার আতঙ্কে আছেন তারা চাইলে আমরা তাদের আইনী সহযোগীতা করতে প্রস্তুত। আমরা সুপ্রিম কোর্টের ২০ জন আইনজীবী আলোচনা করে একত্রিত হয়েছি। আন্দোলনকারীদের মধ্যে হয়রানীর শিকার হওয়া ছাত্রদের পরিবরারের সদস্যরা যোগাযোগ করলে আমরা তাদের সহযোগিতা করবো। প্রয়োজনে নিম্ন আদালতে গিয়েও সহযোগিতার কথা জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, অ্যাডভোকেট আইন্নুনাহার সিদ্দিকী সহ সহায়তা করতে ইচ্ছুক আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
আরো পড়ুন : 
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর ফের হামলা, নারীদের হেনস্থা
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর ফের হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় তাদের মারধর করা হয়। এতে চার-পাঁচজন আহত হয়েছেন। এক নেতাকে তুলে নিয়ে যাওয়ারও অভিযোগ করেছেন আন্দোলনকারীরা।
আজ সকাল পৌণে ১১টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাকর্মীরা মানববন্ধনের জন্য দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নেওয়ার সময় এ হামলা ও মারধরের ঘটনা ঘটে।
আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেছেন, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এ হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হোসেনকে আহত অবস্থায় তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
সকাল ১০টা ৫০ মিনিটের দিকে ফারুকের নেতৃত্বে ১৫/২০ জন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী দাঁড়িয়ে থাকলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় স্কুল ও ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক জয়নুল আবেদীন, মহসিন হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সানীসহ ১০/১৫ জন হামলা করে। এতে ফারুক নিচে পড়ে যায়। মারধর শেষে বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল আমিনকে তুলে নিয়ে যায় বাইকে করে। এই সময় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী নারী নেতৃদের গায়ে হাত তুলে। বেলা ১১টা ৫ মিনিটের দিকে আবার কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা শহীদ মিনারে জড়ো হলে ছাত্রলীগের নেতারা আবার হামলা চালায়। এতে নেতৃত্ব দেয় ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক সাইফ বাবু, মহসীন হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সানী।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা ফারুককে মারধরের সময় আন্দোলনরত মেয়েদের গায়ে হাত দেয়ার অভিযোগ করে এই দুই নারী শিক্ষার্থী বলেন, ‘তারা (ছাত্রলীগ নেতারা) গায়ে হাত দিয়েছে, তারা ধাক্কাধাকি করে আমাদের সেখান থেকে চলে যেতে বলেছে, তারা তুই করে কথা বলতেছে। তারা এমন বেয়াদব, একটা মেয়ের সঙ্গে কীভাবে কথা বলতে হয় ন্যূনতম সেটাও জানে না। আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী একজন মেয়ে , বিরোধীদলীয় নেত্রী মেয়ে, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মেয়ের সঙ্গে এমন আচরণ করা হলো কেন?’
কারা হামলা করেছে জানতে চাইলে তারা বলেন, হামলাকারীদের তারা চেনেন কিন্তু নাম জানেন না। নারীদের একজন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘ আমি আসলে নাম বলতে পারবো না। তারা ছাত্রলীগের বিভিন্ন হলের নেতা। মোটরসাইকেলে করে এখানে এসেছিল।’
তারা আরো বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের মতো একটি যৌক্তিক আন্দোলনকে ছাত্রলীগ দিয়ে প্রতিহত করা যাবে না।
তবে সেখানে উপস্থিত ছাত্রলীগ কর্মীরা বলেছেন, সংগঠন থেকে নয়, সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে তারা ‘শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ’ বজায় রাখতে কাজ করছেন।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রাব্বানী বলেছেন, হামলা বা মারধরের বিষয়ে কেউ তাকে জানায়নি। অভিযোগ পেলে তারা ব্যবস্থা নেবেন।
এর আগে গত শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করতে গিয়ে পিটুনির শিকার হন আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক হাসান আল মামুন ও যুগ্ম আহ্বায়ক নূরুল হক নূর।
ঢাকার পর চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের কর্মসূচিতে হামলা চালিয়ে মারধর করা হয়।
এ বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ৯ এপ্রিল সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে ৭ মে পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করেন আন্দোলনকারীরা। পরে প্রধানমন্ত্রী সংসদে কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন। আন্দোলনকারীরা এ জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে আনন্দ মিছিলও করে। কিন্তু সেই প্রজ্ঞাপন এখনো প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ