বাঁশখালী তেচ্ছিপাড়ায় বালু উত্তোলনে গৃহহীন শতাধিক পরিবার

বি,এন ডেস্কঃ
বাঁশখালীর পুকুরিয়া তেচ্ছিপাড়ায় শঙ্খনদী থেকে প্রতিদিন ৭/৮টি ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে নদী গহ্বরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে এলাকার বসতভিটা।
এ ব্যাপারে এলাকাবাসী সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীকে অবহিত করলে কিছুদিন বালু উত্তোলন বন্ধ থাকে। মাস অতিক্রম করতেই বালু ব্যবসায়ী ফরিদ আহম্মদের নেতৃত্বে আবার বালু উত্তোলন শুরু হয়েছে। শঙ্খনদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলনের কারণে গতমাসে তেচ্ছিপাড়ায় ১০টি বসতঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে শতশত পরিবার সহায়সম্পদ, বসতবাড়ি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পুকুরিয়া ইউনিয়নের তেচ্ছিপাড়া সংলগ্ন শঙ্খনদী হতে গত ৩ মাস যাবৎ উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ড্রেজার মেশিন দিয়ে টাগবোটের মাধ্যমে শঙ্খনদী থেকে বালু উত্তোলন করে ব্যবসা করা হচ্ছে। বালুগুলো চন্দনাইশের বরমা, আনোয়ারা, বরুমছড়া, পুকুরিয়া ও সাতকানিয়ার চরতিতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ বালু উত্তোলনে ৩০ জনের সিন্ডিকেট সদস্যের মধ্যে ফরিদ আহাম্মদ, আমজাদ আলী, বেদার আলী, আবদুল খালেক, আলমাস ও জয়নাল অন্যতম। এছাড়াও ফয়সল, হুমায়ুনের নেতৃত্বে অপর একটি গ্রুপ বালু ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন জোয়ারের সময় ৮-১০টি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে কার্গো টাগবোটগুলো ভর্তি করে বালু নিয়ে যাচ্ছে।
পুকুরিয়া এলাকার বাসিন্দা গিয়াস উদ্দিন বলেন, শঙ্খনদী থেকে বালু উত্তোলনের মাধ্যমে প্রতি ট্রিপ টাগবোট থেকে ২৮-৩০ হাজার টাকা করে আদায় করে নিচ্ছে কতিপয় ব্যক্তি। এ টাকার ভাগ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিতরণ করা হচ্ছে। দৈনিক ১০/১২টি টাগবোট দফায় দফায় বালু উত্তোলন করার ফলে নদীর স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। এ কারণে শঙ্খনদীর ভাঙনে বসতভিটা হারাচ্ছে সাধারণ মানুষ। সরেজমিনে স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পুকুরিয়া তেচ্ছিপাড়া কুমারখালী ঘাট এলাকায় জোয়ারের সময় ৩টি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে টাগবোটে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। উত্তোলন করা বালুগুলো নদীপথে বরমা সীমান্তের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তেচ্ছিপাড়ার এক স্থানীয় ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গত ১ মাসে ১৬টি বসতঘর ভেঙে গেছে। বালু উত্তোলনকারী ব্যক্তিরা রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতা দেখিয়ে শঙ্খনদীতে মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে।
পুকুরিয়া ৬ নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য মোহাম্মদ হাশেম বলেন, তেচ্ছিপাড়া এলাকায় বালু উত্তোলনের কারণে প্রতিদিন বসতবাড়ি ও সহায়-সম্পদ হারাচ্ছে মানুষ। গত ১৫ দিনে বসতবাড়ি হারিয়েছে আবদুল কাদের, কবির আহাম্মদ, আবদুল মান্নান মোস্তফা আলী, জাফর আহাম্মদ, নুরুল আবছার, নুরুল আমিন, নাছির উদ্দিন, মোহাম্মদ আলী, মোহাম্মদ মোজাম্মেলসহ আরো ৪ পরিবার। আবুল বশর নামের এক ব্যক্তি জানান, শঙ্খনদী থেকে বালু উত্তোলন ব্যবসা বন্ধ না হলে পুরো তেচ্ছিপাড়া নদীগর্ভে হারিয়ে যাবে। কৃষক আবু তাহের জানান, শঙ্খনদীর ভাঙনে ২/৩ বার বসতবাড়ি স্থানান্তর করেছে। জোয়ারের টানে নদীর ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। তেচ্ছিপাড়া ও উত্তর পুকুরিয়ায় গত ৫ বছরে শতাধিক পরিবার শঙ্খনদীর ভাঙনের কবলে পড়ে বসতবাড়ি হারিয়ে পাহাড়ে আশ্রয় নিয়েছে। পুকুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসহাব উদ্দিন বলেন, শঙ্খনদীতে বালু উত্তোলনের বিষয়টি প্রশাসনিকভাবে বন্ধ করা হয়েছিল। বর্তমানে বালু উত্তোলন করছে কিনা আমার জানা নাই। বাঁশখালী থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামাল হোসেন বলেন, পুকুরিয়া তেচ্ছিপাড়ায় শঙ্খনদী থেকে বালু উত্তোলনের বিষয়টি আমার জানা নেই। দ্রুত পুলিশ পাঠিয়ে বালু উত্তোলনের মেশিন আটক করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সুত্রঃ দৈনিক পূর্বকোণ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ