অকেজো বেইলি সেতুতে গ্রামবাসীর চাঁদার টাকায় বাঁশের বেড়া



মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিন, বাঁশখালী (চট্টগ্রাম):

বাঁশখালী উপজেলার পুঁইছড়ি ও ছনুয়া ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষের চলাচলের একমাত্র মাধ্যম জলকদর খালের ওপর নির্মিত বেইলি সেতু। দীর্ঘদিন ধরে এ সেতুটির পাটাতন নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তা সংস্কার না হওয়ায় এবং সংস্কারের বিকল্প পথ না থাকায় বাধ্য হয়েই বাঁশ দিয়ে সেতু মেরামত করে চলাচল করছে এলাকাবাসী।



জানা যায়, রাজাখালী আরবশাহ্ বাজারের উত্তরে অবস্থিত ১৩০ মিটার দীর্ঘ পুঁইছড়ি-ছনুয়া বেইলি সেতুটি ২০০৬ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের আমলে নির্মাণ করা হয়। লবণ বোঝাই ট্রলি চলাচলের কারণে ব্রিজটির পাটাতন নষ্ট হয়ে যায়। এরপর ২০১৭ সালে বাঁশখালী উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ব্রিজটি সংস্কার করা হয়। কয়েকবছর যেতে না যেতেই লবণাক্ততার কারণে আবারও মরিচিকা ধরে যায় পাটাতনে। এই সেতুটি ছনুয়া ও পুঁইছড়ি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষের একমাত্র পথ।


এছাড়াও সেতুটি রাজাখালী ফৈজুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজ, রাজাখালী বিইউআই ফাজিল মাদ্রাসা, পুঁইছড়ি মদিনাতুল উলুম মোহাম্মদিয়া মাদ্রাসা, পুঁইছড়ি কাদেরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ছনুয়া কাদেরিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও ছনুয়া ছেলবন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাতায়াতের মাধ্যম।



 সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিদিন এই সেতু দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন শিক্ষার্থীসহ দুই ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ। হাঁটার সময় একটু এদিক-সেদিক হলেই ঘটে যায় দুর্ঘটনা। সেতুটি এলাকাবাসীর কাছে পঙ্গু ব্রিজ নামেও পরিচিত। এ সেতুর উপরে ওঠে দেখা যায় সেতুর ৯৫% পাটাতন নষ্ট হয়ে গেছে। এ কারণে যান চলাচল তো দূরের কথা, জনসাধারণের হাঁটাচলাও বেশ কষ্টসাধ্য। যেকোনো মুহূর্তে ঘটে যেতে পারে বড় কোনো দুর্ঘটনা। সেতুর ওপর একপাশে বাঁশের বেড়া দিয়ে পাটাতন নির্মাণ করা হলেও অন্যপাশ খালি রয়েছে। সেতুর দুই পাশে সংযোগস্থলে সরে গেছে মাটি।




সম্প্রতি এই সেতু দিয়ে পারাপারের সময় রাজাখালী ফৈজুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ের এক ছাত্রী নষ্ট হয়ে যাওয়া পাটাতনে পা আটকে মারাত্মক আহত হয়। এরপর সেতুটি সংস্কারের জন্য এলাকাবাসী স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে ধর্ণা দিয়েও কোনো প্রতিকার না পেয়ে এলাকাবাসী চাঁদা তুলে বাঁশ দিয়ে সেতু মেরামত করেছেন।


 স্থানীয় বাসিন্দা আতিকুর রহমান বলেন, ‘সম্প্রতি রাজাখালী ফৈজুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ের এক ছাত্রী ব্রিজটি পার হতে গিয়ে পাটাতনে পা আটকে আহত হয়। বর্তমানে তার স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়াও পুঁইছড়ি পণ্ডিতকাটা গ্রামের এক ছেলে মাথায় করে লাকড়ি নিয়ে যাওয়ার সময় পা ফসকে পড়ে যায়। সারাদেশে উন্নয়নের জোয়ার বয়ে গেলেও আমাদের ছনুয়ায় এখনোও ভাটা।’


ছনুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম. হারুনুর রশীদ একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘ব্রিজটির জন্য আমি উপজেলা এলজিইডি অফিসে গিয়ে অনেকবার ধর্ণা দিয়েছি। বারবার ওঁরা এসে পরিদর্শন করে আর মাপঝোঁক করে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। আমার এলাকার মানুষের কষ্টের সীমা ছাড়িয়ে গেছে।’


এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাঁশখালী উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) কাজী ফাহাদ বিন মাহমুদ একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘স্টীল ব্রীজের কোনো প্রকল্প বর্তমানে চালু নেই। আমরা ব্রীজটি নিয়ে অনেকবার প্রাক্কলন প্রস্তুত করে পাঠিয়েছি। কিন্তু প্রকল্প আসেনি। ব্রীজটি সংস্কার করতে অনেক টাকার প্রয়োজন। সামনে জাতীয় নির্বাচন। তাই আপাতত কিছু হওয়ার সম্ভাবনা দেখছি না। এরপরেও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ