বাঁশখালীর ভৌগোলিক ও ঐতিহাসিক তথ্য


বাঁশখালী চট্টগ্রাম জেলার একটি উপজেলা। এই উপজেলার উত্তরে সাঙ্গু নদী (শঙ্খ নদী) ও আনোয়ারা থানা, পূর্বে পাহাড় শ্রেণী ও সাতকানিয়া উপজেলা পশ্চিমে সমুদ্র (বঙ্গোপসাগর) এবং দক্ষিনে কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলা (বতর্মানে চকরিয়া দুভাগে বিভক্ত হয়ে পেকুয়া উপজেলা) ।বাঁশখালী থানা সৃষ্টি ১৯৫৮ সালে। ১৯৮৩ সালে একে উপজেলায় রূপান্তরিত করা হয়।

বাঁশখালী নামের বুৎপত্তি সম্পর্কে প্রামান্য কোন তথ্য পাওয়া যায়না, এই নামের উৎপত্তি কবে হয় তা সঠিক ভাবে জানার শত চেষ্ঠা করেও সফল হওয়া যায়নি, নানা মুনির নানা মত হওয়ায় যুক্তি থাকা স্বত্তেও তা গ্রহনযোগ্যতা পায়নি। এ ক্ষেত্রে বাঁশখালীর প্রবাদ পুরুষ বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ড.আবদুল করিম প্রণিত“বাঁশখালীর ইতিহাস ও ঐতিহ্য”গ্রন্থে তিনটি কিংবদন্তির উল্লেখ আছে।তিন নম্বর বর্ণনাটি লোক মুখে শোনা । তথ্যগত দিক দিয়ে স্যার এর বর্নিত কিঙবদন্তি গুলো বিশেষ গুরত্ব বহন করে ।

কিংবদন্তি-১:বাঁশখালী পাহাড়ের পূর্বে সাতকানিয়া থানা অবস্থিত। কথিত আছে যে, ঐ এলাকায়২ ভাই ১ বোনের এক পরিবার ছিল।বোনটির বিয়ে হয় পশ্চিমে অর্থাৎ বাঁশখালীতে, সে সখোনে স্বামী সহ জমি আবাদ করে বাস করতে থাকে। পরবর্তিতে পৈত্রিক সম্পত্তি ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে ভাই বোন বিবাদে জড়িয়ে পড়ে। বিাবদের এক পর্যায়ে বোনের পক্ষে মারামারিতে প্রচুর বাঁশ ব্যবহার করা হয়। এক পর্যায়ে বাঁশ ঝাড়ে আর কোন বাঁশ অবশিষ্ট না থাকায় বোনের পক্ষের লোকেরা বলতে থাকে বাঁশ সব শেষ করে দিল অর্থাৎ বাঁশ কেটে খালী করে দিয়েছে। এইভাবে বাঁশ খালী বলতে বলতে বাঁশখালী নামের উৎপত্তি।

কিংবদন্তি-২:কথিত আছে যে, বাঁশখালী এলাকায় প্রথম জরিপ চলা কালে এক জায়গায় একটি বাঁশ খুটিঁ স্বরূপ পুতে রাখা হয়। ঐ বাঁশ দুর থেকে দেখা যাওয়ার জন্য খুটির ডগায় একটি কাক মেরে বেধে দেয়া হয়। পরবর্তিতে কাকটিকে খুটির ডগায় আর দেখা যায়নি। তখন একে অপরকে বাঁশ খালী বলে জানায়। এভাবে বাঁশখালী নামের উৎপত্তি বলে ধরে নেয়া হয়।

কিংবদন্তি -৩:বাঁশখালীতে সোনাইছড়ি (হোনাইছড়ি)নামে একটি খাল আছে। পার্শ্ববর্তী চকরিয়া উপজেলা থেকে ব্যবসায়ীরা বাঁশ ক্রয় করে সোনাইছড়ি খালে জমা করত। পুরাখাল বাঁশের ভেলায় ভর্তি হয়ে যেত। তারপর অন্যান্য খালে নিয়ে যেতো। এর থেকেই নাম হলো বাঁশখালী। 

কিংবদন্তি -৪:সাতকানিয়া থানার বাজালিয়ায় সাঙ্গু নদীর তীরে মরহুম মৌলানা শরফ-উদ-দীন বেহাল(র: ) এর মাজার দৃষ্ট হয়। জনশ্রুতি মতে ঐ বেহাল সাহেব মযযুব ছিলেন। আরো শুনা যায় জোর করে তিনি মগ মহিলাদের দুধ পান করতেন এতে মগেরা বিরক্ত হয়ে মস্তক কেটে তাকে হত্যা করলে দেখা যায় বার বার তিনি সুস্থ হয়েউঠছেন।তখন মগেরা তার ছিন্ন মস্তকটি সমুদ্রে নিক্ষেপ করে আসে । অনেক দিন পরে সমুদ্র বক্ষ থেকে জেলেরা ঐ মস্তক উদ্ধার করে এবং আশ্চার্য হয় দেখে যে, মস্তকটি এখনও তাজা। ছিন্ন মস্তকটির দেহের খোঁজ নেয়ার উদ্দ্যেশে একটি বাশেঁর উপর ডগায় ঝুলিয়ে রাখা হয়। অপরদিকে মুণ্ডু বিহীন দেহটি বেশ কয়েকদিন তরতাজা থাকায় বাজালিয়া বাসী কিছু মুসলমান ও কিছু মগও খন্ডিত মস্তকটির খোঁজে সমুদ্র উপকূলে আসে। মস্তকটির খোঁজ পেলে দুই পক্ষই দেহটি (মস্তক ও দেহ) রেখে দিতে চায়। শেষ পর্যন্ত ফয়সালা হল পরের দিন শিরটি যদি সকাল পর্যন্ত বাঁশের ডগায় থাকে তবে শির সহ দেহটিকে সমুদ্র উপকূলে দাফন করতে হবে আর যদি বাঁশের ডগা থেকে শিরটি পড়ে যায় তবে দেহটি বাজালিয়ায় দাফন করা হবে। পরদিন সকালে যথারীতি দেখা যায়শিরটি মাটিতে পড়ে আছে। উল্লেখ্য উভয় পক্ষের লোক সারারাত পাহারায় ছিল তাদের অলক্ষ্যে কখন যে শিরটি মাটিতে ছিটকে পড়ল তারা বুঝতে পারেনি। সবাই বলতে লাগল বাঁশ তো খালী । পরে দেহটি বাজালিয়ায় দাফন করা হয়। সাতকানিয়ায় বেহাল সাহেবের মাজার অত্যন্ত সম্মানিত। যাত্রীবাহী গাড়ী মাজার অতিক্রমকালে যাত্রি নামিয়ে দেয়। সেই ছিন্ন মস্তক ছিটকে পড়ার পর থেকে অর্থাৎ বাঁশটি খালী হয়ে যায় । এভাবে বাঁশখালী নামের গোড়াপত্তন হয়।

পরিশেষে বলতে হয় ড. আবদুল করিম স্যার এর আলোচিত শেষেক্তো বর্ননাটি সর্বাধিক প্রচলিত। 
তাঁর মতে দ্বিতীয় কিংবদন্তির যৌক্তিকতা থাকতে পারে, তবে এতে যে জরিপটির কথা উল্রেখ করা হয়েছে তা যদি ইংরেজ আমলে হয়ে থাকে তবে তা ইংরেজ আমলের আগেই বাঁশখালীর নামকরন করা হয়ে থাকবে। তাই কিংবদন্তিটি সত্য হতে পারেনা। প্রথম কিংবদন্তিটি যেহেতু বাঁশ কেটে খালী করার সাথে সম্পৃক্ত তাই এটি সত্য কিংবা সত্য নাই হউক না কেন এতে ধরে নেয়া যায় যে, বাঁশ এবং খালী দুই শব্দের সহমিলনে বাঁশখালী নামটি গঠিত।

গ্রন্থনা : রহিম সৈকত
তথ্য সূত্র:
*বাঁশখালীর ইতিহাস ও ঐতিহ্য,পৃষ্ঠা নং৩৩-৩৫, 
প্রণেতা ড. আবদুল করিম, সাবেক উপচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
* বাংলা পিডিয়া।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ