বাঁশখালীতে কথিত সোর্স রহিমের যত অপকর্ম, নেপথ্যে এসআই শহীদ, পর্ব-১ (ভিডিও সহ)


মোঃ মনছুর আলম (এম আলম): বিভিন্ন সময় কথিপয় পুলিশের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, ইভটিজিং, ভিকটিমকে হয়রানি ও হত্যাকাণ্ডসহ নানা অপকর্মের ঘটনা ঘটেছে। এর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নেতৃত্বে থাকে সোর্স, আর পেছনে থাকে পুলিশ। সাধারণত অপরাধী সনাক্ত ও তদন্ত সংশ্লিষ্ট কাজেই এসব সোর্সের সহযোগিতা নিয়ে থাকে পুলিশ। তবে বেশ কিছু ঘটনায় পেশাগত কাজের বাইরে সোর্সদের সহযোগিতায় ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের ঘটনায় ফেঁসে গেছে পুলিশ সদস্য। অভিযোগ, মামলা, পাল্টা-মামলা, চার্জশিট ইত্যাদির নামেও তদবির করে সোর্সরা বিশাল অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অথচ পুলিশের সোর্স রাখার কোনও বিধান আইনের কোথাও নেই। ফৌজদারি কার্যবিধি কিংবা পুলিশের পিআরবি’র (পুলিশ রেগুলেশন অব বাংলাদেশ) কোথাও পুলিশের সোর্স রাখা বা পালনের বিষয়টিও উল্লেখ করা নেই। পুলিশ সূত্র জানায়, আসামী ধরা ও অপরাধীদের স্থান নির্ধারণ করতে ব্যক্তিগতভাবে সোর্সের সহযোগিতা নিতে পারে। তবে থানায় সোর্সের আনাগোনাও রাখা যাবে না এমনটাই নির্দেশনা ছিল পুলিশ সদর দপ্তর থেকে।

এদিকে চট্টগ্রাম রেঞ্জের বাঁশখালী থানা পুলিশের সোর্সরা নিয়ন্ত্রণ করছেন মাদক ব্যবসা। পুলিশের পরোক্ষ সহযোগিতা থাকায় প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে চলছে মাদক বিকিকিনি। পাড়া-মহল্লায় ইয়াবা, চোলাই মদ, গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক ব্যবসা এখন জমজমাট। থানার সোর্সরা আসামী ধরার নামে পুলিশের সঙ্গে ঘুরে বেড়ান। যে কারণে সোর্সরূপী মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় বাঁশখালীতে মাদকের এখন ছড়াছড়ি। এসব সোর্সদের নাম শুনলে এলাকার লোকজন আঁতকে উঠেন। তাদের দৌরাত্মে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। নিরীহ লোকজনকে ফাঁসিয়ে অর্থ আদায় সহ নানা অপরাধেও জড়িত এসব কথিত সোর্স।

বাঁশখালী থানাধীন রামদাস মুন্সি হাট পুলিশ ফাঁড়ি (তদন্তকেন্দ্র) এর এসআই মোঃ শহীদের ব্যক্তিগত কথিত সোর্স রহিমের ৩৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও রেকর্ড আমাদের হাতে আসে। এই রহিম উপজেলার কালীপুর ইউনিয়নের রেজাউল করিম প্রকাশ লেদুর ছেলে। ভিডিওতে দেখা যায়, বিক্রির উদ্দেশ্যে অবস্থান করাকালে সোর্স রহিমকে ইয়াবা ট্যাবলেট সহ জনগণ হাতেনাতে আটক করেন। আর এসব কথা সে অপকটে স্বীকার করে ভিডিওতে। শুধু তাই নয়, পুলিশের এই কথিত সোর্স রহিমের বিরুদ্ধে রয়েছে নিরীহ লোকজনকে ফাঁসিয়ে অর্থ আদায় সহ চাঁদাবাজি, ইভটিজিং, ভিকটিমকে হয়রানি ও ধর্ষণসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ। 


এই সোর্স রহিমের এসব অপকর্মের নেপথ্যে ফাঁড়ির এস আই মো. শহীদ। আর সাক্ষী গোপালের ভূমিকায় থাকেন ঐ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক সোলেইমান। সম্প্রতি সোর্স রহিমের বিরুদ্ধে এসআই শহীদের আশ্রয় প্রশ্রয়ে সদর আমিন হাট এলাকায় এক বিধবাকে মদ পাওয়া গেছে বলে জোরপূর্বক মিথ্যা বক্তব্যের ভিডিও ধারণ, মারধর ও ধর্ষণ সহ মুক্তিপন আদায়ের অভিযোগও উঠে। সোর্স রহিমের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের ঘটনায় ভুক্তভোগী কেউ থানায় গেলে, উল্টো বিপাকে পড়েন বলেও প্রচার রয়েছে এলাকায়।

এপ্রসঙ্গে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) সুদীপ্ত সরকার পিপিএম বলেন, পুলিশ প্রশাসন বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ ও অপরাধীদের সনাক্তের জন্য সোর্স মেন্টেইন করে। তবে কোন অপরাধী সোর্সকে সাথে নিয়ে প্রকাশ্যে অভিযানে যাওয়াটা গ্রহণযোগ্য নয়। সোর্স রহিমের বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান তিনি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ