আত্মসমর্পণের শর্ত ভঙ্গ করে ফের অপরাধে বাঁশখালীর জলদস্যূ ইউনুস



নিজস্ব প্রতিবেদক:

আত্মসমর্পণের শর্ত ভঙ্গ করে ফের অপরাধ কর্মকান্ড জড়িয়ে পড়েছেন বাঁশখালী উপকূলের দুর্ধর্ষ জলদস্যূ ইউনুস। চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি লবণ ও পলিথিন লুটের ঘটনায় মামলা দায়েরের পর এবার তার বিরুদ্ধে উঠেছে এক ব্যক্তিকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ। গত ১৩ জুন ইউনুসসহ ১১জনকে আসামি করে বাঁশখালী থানায় মামলা করেছেন ভুক্তভোগী ছনুয়া ইউনিয়নের সুলতান সিকদার পাড়ার মতিউর রহমানের ছেলে আবুল হাশেম। সর্বশেষ, গত ২২ জুন মো. ফোরকান নামের এক নৌবাহিনীর সদস্য জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে বাঁশখালী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন ইউনুসের বিরুদ্ধে। ফোরকান একই এলাকার নবী হোসেনের ছেলে।

মামলার এজাহারে ইউনুস এবং তার ১১ সহযোগীর বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা, মারধর ও লুটপাটের অভিযোগ আনা হয়েছে। এর আগে ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর বাঁশখালী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের উপস্থিতিতে র‌্যাবের হাতে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছিলেন ইউনুসসহ ৩৪ জলদস্যূ। ইউনুস ছনুয়া ইউনিয়নের সুলতান সিকদারপাড়ার মৃত মোজাফফর আহমদের ছেলে। একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সাংবাদিক আকরাম হোসাইনের মধ্যস্থতায় র‌্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন দুর্ধর্ষ এই জলদস্যূ।

র‌্যাব জানায়, আত্মসমর্পণের পরে ইউনুসসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে বাঁশখালী থানায় মামলা দায়ের করে র‌্যাব-৭। ওই মামলায় একবছর কারাভোগের পর জামিনে মুক্তি পেয়ে কিছুদিন নীরব থাকলেও ফের চাঁদাবাজি, লুটপাটসহ নানান অপরাধে জড়িয়ে পড়েন ইউনুস।

ইউনুস সম্পর্কে র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্ণেল মাহবুব আলম বলেন, ‘আত্মসমর্পণের শর্ত ভঙ্গ করে জলদস্যূ ইউনুস ফের অপরাধ কর্মকান্ডে জড়ানোর তথ্য পেয়েছি। এখন তার বিরুদ্ধে যা যা আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার তাই নেওয়া হবে।’

একই প্রসঙ্গে বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘গত ২৪ জুন মহেশখালী, চকরিয়া, পেকুয়া ও কুতুবদিয়ার আত্নসমর্পণ করা ৭৭ জন জলদস্যূকে ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ করে র‌্যাব-৭। এই উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দুর্ধর্ষ জলদস্যূ ইউনুসের ফের অপরাধ কর্মকান্ডে জড়ানোর বিষয়ে উপস্থিত র‌্যাব-৭
কর্মকর্তাদের অবহিত করেছি। র‌্যাবের কর্মকর্তারা বলেছেন, ইউনুসের বিরুদ্ধে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা
গ্রহণ করলে তাদের (র‌্যাব) করার কিছু থাকবে না। তার বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে গত ১৩ জুন দায়ের হওয়া মামলার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি গোলাম রহমান নামে এক ভুক্তভোগী লবণ ও পলিথিন লুটের অভিযোগে বাঁশখালী
থানায় মামলা করেন ইউনুসের বিরুদ্ধে। ওই মামলায় ইউনুসের ৮ সহযোগীকে আসামি করা হয়।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ১৮ জানুয়ারি দুপুরে মধুখালী এলাকায় অবস্থিত তার লবণ মাঠে দলবল নিয়ে হামলা চালায় ইউনুস। এ সময় গোলাম রহমানের চার লাখ টাকার লবণ ও পলিথিন লুটের পাশাপাশি দুই লাখ টাকার মালামালের ক্ষতিসাধন করে তারা।

পুলিশ ও র‌্যাব সুত্র জানায়, জলদস্যূ ইউনুসের বিরুদ্ধে বাঁশখালী ও চকরিয়া থানায় হত্যা, ডাকাতি, অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একাধিক মামলা রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী গোলাম রহমান বলেন, ‘আমার করা মামলায় জামিন পাওয়ার পর থেকে জলদস্যূ ইউনুস আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন। আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মো. ইউনুস বলেন, ‘ আত্নসমর্পণের পর আমি ভালো হয়ে গিয়েছি। এলাকার মানুষ ষড়যন্ত্র করে আমাকে এসব মামলায় জড়াচ্ছে। এসব আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।’

র‌্যাব সুত্র জানায়, আত্নসমর্পণের পর র‌্যাবের পক্ষ থেকে ইউনুসকে বিভিন্ন সময় অনুদান দেওয়া হয়। এমনকি বছরের দুই ঈদে উপহারও পান তিনি। কিন্তু ইউনুসের বিষয়ে রিপোর্ট সন্তোষজনক না হওয়ায় ক্ষুব্ধ র‌্যাবও। গত ২৪ জুন মহেশখালী, চকরিয়া, পেকুয়া ও কুতুবদিয়ার আত্নসমর্পণ করা ৭৭ জন জলদস্যুকে ঈদ উপহার প্রদান করে র‌্যাব-৭। বাঁশখালী উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মাহবুব আলমের উপস্থিতিতে এসব উপহার বিতরণ করা হয়। আত্নসমর্পণের পরেও গোয়েন্দা রিপোর্ট সন্তোষজনক না হওয়ায় ঈদ উপহার বিতরণ অনুষ্ঠানে দাওয়াত পাননি ইউনুসসহ ৫ জলদস্যূ।

ইউনুসের আত্নসমর্পণে মধ্যস্থতাকারী সাংবাদিক আকরাম হোসাইন বলেন, ‘ইউনুস আমার মধ্যস্থতায়
আত্মসমর্পণ করে। সে ভালো কাজে আসার কথা দিয়ে কথা রাখেনি। তাই ২৪ জুন উপহার বিতরণ অনুষ্ঠানে
র‌্যাবের পক্ষ থেকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি তাকে। এরপরেও সে অনুষ্ঠানে চলে আসে। পরে অনুষ্ঠান থেকে তাকে বের করে দেওয়া হয়।’

এদিকে আজ বিকালে অভিযোগের বিষয়ে ইউনুসের বক্তব্য জানতে চেয়ে ফোন করেন দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার বাঁশখালী প্রতিনিধি আবু বক্কর বাবুল। পরে দুটি নাম্বার থেকে ফোন করে বাবুলকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন অজ্ঞাত দুই ব্যক্তি।

এ বিষয়ে আবু বক্কর বাবুল বলেন, আমি ফোন করার কিছুক্ষণ পর  (০১৮৬০৬৭৮৪০২, ০১৮১৬১৭০৯৯৩) নাম্বার থেকে অজ্ঞাত দুই ব্যক্তি আমাকে ফোন করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। আমি এ বিষয়ে আইনের আশ্রয় নেব।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ