বাঁশখালী হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ আছে লোক নাই

বাঁশখালী হাসপাতালে মঞ্জুরিকৃত চিকিৎসকের পদের সংখ্যা ৪০। এরমধ্যে শূন্যপদ ২২টি। বাকি ১৮ জনের মধ্যে একজন প্রেষণে। দায়িত্বে থাকা ১৭ জন চিকিৎসকও হাসপাতালে নিয়মিত নন। বিশেষজ্ঞ পদের অধিকাংশই শূন্য। ১৪টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক আছেন চারজন। তাঁরাও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিবর্তে উপজেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দেন। বাঁশখালীর প্রায় ছয় লক্ষ জনসংখ্যার বিপরীতে মাত্র ১৭ জন চিকিৎসক রয়েছেন। যে কারণে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন উপকূলীয় এ জনপদের বাসিন্দারা।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন মো. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী পূর্বদেশকে বলেন, ‘চিকিৎসক সংকট আছে। সহসাই এ সংকট কেটে যাবে। এরপরেও যারা দায়িত্বে আছেন তাদেরকে নিয়মিত সেবা প্রদানে আমরা চাপ সৃষ্টি করছি। উপজেলাগুলোতে কোনোমতেই যাতে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখছি।’
সিভিল সার্জন অফিসে পাঠানো জানুয়ারি মাসের তালিকায় উল্লেখ আছে, বাঁশখালীতে ৪০টি মঞ্জুরিকৃত পদের বিপরীতে চিকিৎসক আছেন ১৮ জন। এরমধ্যে একজন চিকিৎসককে প্রেষণে অন্যত্র পাঠানো হয়েছে। বাকি ১৭ জনের মধ্যে চারজন ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দায়িত্বে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসদের মধ্যে জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (এনেস্থেশিয়া), জুনিয়র কনসালটেন্ট (অর্থোসার্জারি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (কার্ডিওলোজি), মেডিকেল অফিসারের মধ্যে এনেস্থেশিয়া, এ.এমসি, সহকারী ডেন্টার সার্জনের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদও শূন্য আছে।
হাসপাতালে বর্তমানে কর্মরত আছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কমরুল আযাদ, জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন) ডা. মাহমুদ হাসান আরিফ, জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি) ডা. রোজিনা আহমেদ, জুনিয়র কনসালটেন্ট (শিশু পদের বিপরীতে) ডা. জাফরিন জাহেদ জিতি, ইনএনটি পদের বিপরীতে ডা. আয়েশা মুনমুন, চক্ষু চিকিৎসা পদের বিপরীতে ডা. জুবুরিয়া শারমিন চৌধুরী, জুনিয়র কনসালটেন্ট (চর্ম ও যৌন) সবুজ বরণ ধর, আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. তৌহিদুল আনোয়ার, মেডিকেল অফিসার ডা. হীরক কুমার পাল, ডা. মো. আরিফুল হক, মেডিকেল অফিসার (এমও) ডা. শুভ দাশ, আইএমও ডা. রেশমী বিশ^াস, ইএমও ডা. মো. আমিনুল ইসলাম, প্যাথলজিস্ট ডা. তুষিত কুমার বড়–য়া (বর্তমানে প্রেষণে), খানখানাবাদ ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডা. মনিরা ইয়াসমিন, শীলকূপ ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডা. সোনিয়া চৌধুরী, চাম্বল ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডা. মো. হোসনে সাদাত পাটোয়ারী ও পুঁইছড়ি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডা. শারমিন আক্তার দায়িত্ব পালন করছেন। এরমধ্যে গাইনি কনসালটেন্ট রোজিনা আহমেদ ও সবুজ বরণ ধর নিয়মিত হাসপাতালে উপস্থিত থাকেন না। ১৪টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের ১০টি পদেও চিকিৎসক শূন্যতা বিরাজ করছে।
বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কমরুল আযাদ পূর্বদেশকে বলেন, ৩৯তম বিসিএসে দশ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ করার কথা আছে। এ নিয়োগ শেষ হলে চিকিৎসক সংকট কেটে যাবে।
এদিকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকা এবং যারা আছেন তাঁরাও ঠিক সময়ে কর্মস্থলে উপস্থিত না হওয়ার কারণে সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবা পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে। অনেকেই অর্থসংকটের কারণে শহরে গিয়ে চিকিৎসা নিতে পারেন না। উপজেলা সদরের শুভাশীষ দাশ নামে এক রোগী বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনায় হাত ভেঙে গেলে হাসপাতালে গিয়ে শুনি অর্থোপেডিক্সের কোনো ডাক্তার নেই। যে কারণে শহরে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে।’
গন্ডামারার রোগী ছেনোয়ারা বেগম বলেন, ‘গাইনির একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছেন শুনেছি, কোনোদিন পাইনি। আমি অসুস্থ হওয়ার পর থেকে ডা. মনিরা ইয়াসমিনকে দেখাচ্ছি।’
/পূর্বদেশ!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ