স্বাধীনতার ৫২ বছর পরও বাঁশখালীতে নেই বাস টার্মিনাল, যানজটে দুর্ভোগ

 


মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিন: ৩৯২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বৃহৎ উপজেলা বাঁশখালী। প্রায় ৭ লাখ মানুষ এই উপজেলায় বসবাস করেন। এখানকার মানুষের বহু বছরের দাবি, একটি বাস টার্মিনাল। স্বাধীনতার ৫২ বছর পেরিয়ে গেলেও বাঁশখালীতে যাত্রীবাহী বাস, ট্রাক, অটোরিকশা, পণ্যবাহী যানবাহন ইত্যাদির জন্য নেই কোনো সুনির্দিষ্ট স্টেশন বা টার্মিনাল। ফলে বাড়ছে যানজট, দুর্ঘটনাসহ জনদুর্ভোগ।

জানা যায়, পিএবি সড়ক হিসেবে পরিচিত বাঁশখালীর প্রধান সড়কটি অর্থনৈতিকভাবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এই সড়কটি চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের বিকল্প সড়ক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। জনসাধারণ ও ব্যবসায়ীদের উপচেপড়া ভিড় থাকে সড়কটির পাশের বাজারগুলোতে।

বাঁশখালী উপজেলার পার্শ্ববর্তী উপজেলা হচ্ছে কক্সবাজার জেলার পেকুয়া, চকরিয়া ও মহেশখালী এবং কুতুবদিয়া উপজেলা। ব্যবসা, চাকরি, চিকিৎসাসহ বিভিন্ন কারণে প্রতিদিনই বাঁশখালীর ওপর দিয়ে পার্শ্ববর্তী উপজেলার হাজার হাজার মানুষ দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করছেন। বাঁশখালী প্রধান সড়ক হয়ে চলাচল করে এস. আলম, সানলাইন পরিবহন, বাঁশখালী সুপার সার্ভিস, বাঁশখালী স্পেশাল সার্ভিসসহ বিভিন্ন পরিবহন সংস্থার যানবাহন।

কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র, মহেশখালী এলএনজি টার্মিনাল ও পেকুয়ায় নির্মিত বানৌজা শেখ হাসিনা নৌ-ঘাঁটির কাজে নিয়োজিত গাড়ি বাঁশখালী প্রধান সড়ক হয়ে চলাচল করে। এছাড়া বাঁশখালীর গণ্ডামারায় নির্মিত এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টের মালামাল পরিবহনের গাড়িও বাঁশখালী প্রধান সড়ক দিয়ে চলাচল করে। ফলে এই ব্যস্ততম সড়কে গাড়ির চাপ বেশি।

এমন অবস্থায় বাঁশখালীতে প্রয়োজন নির্দিষ্ট বাস টার্মিনাল। কিন্তু বাস টার্মিনাল না থাকায় বর্তমানে পিএবি সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে সকাল ৭-৮ টা থেকে সন্ধ্যা ৭-৮ টা পর্যন্ত দীর্ঘ ১২ ঘন্টা কম বেশি যানজট লেগেই থাকে। তৎমধ্যে আনোয়ারার তৈলারদ্বীপ সরকারহাট, বাঁশখালীর চাঁনপুর–চৌমুহনী, গুনাগরী–চৌমুহনী, বাণীগ্রাম, রামদাসহাট, বৈলছড়ি খান বাহাদুর বাজার, জলদী মিয়ার বাজার, শীলকূপ টাইম বাজার, চাম্বল বাজারের যানজট অসহনীয় হয়ে পড়ে প্রায় সময়। দারোগা বাজার ফায়ার সার্ভিসের সামনে যত্রতত্র বাস পার্কিং করে রাখতেও দেখা যায়। এতে যানজট লেগেই থাকছে।

বাঁশখালী সুপার সার্ভিসের বাসচালক হারুনুর রশীদ বলেন, ‘চট্টগ্রাম শহরের বাস টার্মিনাল থেকে গাড়ি চালিয়ে বাঁশখালীতে আসার পর গাড়ি পার্কিং করার জন্য জায়গা পাই না। তাই রাস্তার মাঝেই গাড়ি পার্কিং করতে হয়, এতে যাত্রীসহ আমাদের অনেক সমস্যা হয়। এমনকি রাস্তার পাশে সরকারি জায়গা অবৈধভাবে দখল করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ব্যবসা করছে। ফলে রাস্তার পাশেও গাড়ি পার্কিং করতে বাধা পেতে হচ্ছে। নির্দিষ্ট টার্মিনাল হয়ে গেলে এ সমস্যার একটা স্থায়ী সমাধান হবে।’

স্কুল শিক্ষক নুরুল আলম বলেন, ‘বাঁশখালীতে পণ্যবাহী যানবাহনগুলোর পণ্য লোড-আনলোড করার জন্য নির্ধারিত স্থান নেই। নির্দিষ্ট কোনো টার্মিনাল না থাকার কারণে পণ্যবাহী যানবাহনগুলোও বাধ্য হয়েই সড়কের ওপর পণ্য ওঠানামা করছে।’

কলামিস্ট ও গবেষক আহমদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘বাঁশখালী আনোয়ারা হয়ে ৩০ থেকে ৪০ কি.মি দূরত্ব কম বিধায় এখানে সরু রাস্তার উপর যাত্রীবাহী বাসগুলো চাপ সৃষ্টি করে যাতায়াত করছে। আগে ছিল কোস্টার আকৃতির ২৫ থেকে ৩০ জনের ছোট বাস। এখন চলছে বড় বড় বাস। বাঁশখালী আনোয়ারায় এত সরু রাস্তা দিয়ে বড় বড় অসংখ্য বাস যাতায়াত করে। এসব দেখভাল করার জন্য সড়ক বিভাগ বা হাইওয়ে পুলিশের কোনো উদ্যোগ দেখি না। বাঁশখালী ও পেকুয়ার ৮ থেকে ১০ লাখ মানুষ যানজটের কারণে যাতায়াতে কষ্ট পাচ্ছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘যানজট মুক্ত রাখার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে সক্রিয় করার ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দিকনির্দেশনা আছে বলে মনে হয় না। বাঁশখালী ও পেকুয়া উপজেলার মানুষ ভয়াবহ যানজটের কাছে অসহায়। ৮ থেকে ১০ স্থানে যানজট লেগেই থাকে। একেক যানজট ১০ থেকে ১৫ মিনিট, কোনো কোনো সময় এক ঘণ্টা পর্যন্ত লেগে যায়।’

বাঁশখালী বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘টার্মিনাল নির্মাণ আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি। বাঁশখালীতে একটি বাস টার্মিনাল হলে উপজেলাটির উন্নয়ন হবে। বাজারের যানজট হ্রাস পাবে। দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। সরকারও রাজস্ব পাবে।’

এ প্রসঙ্গে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (চট্টগ্রাম দক্ষিণ) সুমন সিংহ একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘বাস টার্মিনাল নির্মাণ করা সড়ক ও জনপথ বিভাগের কাজ নয়। স্থানীয় উপজেলা পরিষদ বাস টার্মিনাল নির্মাণ করলে সড়কে যানজট কমে আসবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনের সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘বাঁশখালী পৌরসভা এলাকায় একটি বাস টার্মিনাল করার চিন্তাভাবনা আছে। আমি এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। আশা করি অচিরেই বাঁশখালীতে একটি বাস টার্মিনাল নির্মাণ হবে।’

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ