বাঁশখালী পৌরসভায় চলছে দুটি পুকুরভরাট কার্যক্রম

বাংলাদশে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে পুকুর ও জলাধার ভরাট নিষেধ থাকলেও বাঁশখালী পৌরসভার উত্তর জলদী এলাকায় শতবর্ষী পুরনো কাজী পুকুর এবং ডাক্তার খানার পুকুরটি পাহাড়ি ও ধানি জমির মাটি দিয়ে ভরাট কার্যক্রম শুরু করেছে পুকুরের মালিক পক্ষ। বাঁশখালী পৌর এলাকায় পুকুর ভরাট নিষেধ থাকলেও পরিবেশ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে গত এক সপ্তাহ ধরে রাতের অন্ধকারে ভরাট কার্যক্রম চলছে। কাজী পুকুর ভরাট কার্যক্রমের সংবাদ পেয়ে বাঁশখালী পৌরসভা অফিস থেকে পুকুরটিতে মাটি ফেলা কার্যক্রম বন্ধ করতে বলা হয়েছে।
জানা যায়, বাঁশখালী পৌরসভা এলাকায় পানির তীব্র সংকট থাকার পরও কতিপয় ব্যক্তি পুকুরের অংশ ক্রয় করে পাহাড়ি ও ধানি জমির উপরের অংশের মাটি দিয়ে পুকুর ভরাট কার্যক্রম চলাচ্ছে। পৌরসভা এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ স্থানে গত ৫ বছরে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়াই বেশ কয়েকটি ভরাট কাজ সম্পন্ন হয়েছে। জলদী মিয়ার বাজার মুন্সী পুকুরটি মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। পার্শ্ববর্তী মাস্টার বাড়ির পুকুরটিরও অর্ধেক অংশ ভরাট করে ফেলা হয়েছে। চলতি সপ্তাহে ডাম ট্রাক দিয়ে মাটি ব্যবসায়ীরা চুক্তির ভিত্তিতে ভরাটের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ভূমিদস্যুরা শত বছরের পুরাতন উত্তর জলদী কাজী পুকুর ও মিয়ার বাজার সংলগ্ন ডাক্তার খানার পুকুরটিরও অর্ধেক অংশ ভরাট করে ফেলেছে। পৌরসভার পক্ষ থেকে কাজী পুকুরটি ভরাট কার্যক্রমে বাঁধা দেয়া হয়েছে।
পরিবেশ আইন সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০)-এর ৬ (ঙ) অনুযায়ী, জাতীয় অপরিহার্য স্বার্থ ছাড়া কোন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, সরকারি বা আধা সরকারি এমনকি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বা ব্যক্তিমালিকানাধীন পুকুর ভরাট না করার বিধান রয়েছে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (২০১০ সালে সংশোধিত) অনুযায়ী, যে কোন ধরনের জলাধার বা পুকুর ভরাট সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং ভরাটকারীর বিরুদ্ধে আইনের ৭ ধারায় প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ও জীব বৈচিত্র নষ্ট করে পরিবেশগত ক্ষতি ও বিধ্বংসী কর্মকা-ের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান রয়েছে। এছাড়াও জলাধার সংরক্ষণ আইন ২০১০ অনুযায়ী কোন পুকুর, জলাশয়, নদী, খাল ইত্যাদি ভরাট করা বেআইনি। ওই আইনের ৫ ধারামতে জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না। অপর একটি সূত্রে জানা যায়, সংশোধনী ২০১০ এর ৬ (খ) ধারা অনুযায়ী জলাধার হিসাবে চিহ্নিত জায়গা ভরাট বা অন্য কোনভাবে পরিবর্তন করা যাবে না। পুকুর বা জলাধার ভরাটের প্রমাণ পাওয়া গেলে প্রথমবারে জন্য ২ বছর কারাদ- ও ২ লাখ টাকা জরিমানা। পরবর্তীতে অপরাধের ক্ষেত্রে ১০ বছরের কারাদ- ও ২ থেকে ১০ লক্ষ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। আইন অনুযায়ী জলাধার ভরাটের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অধিদপ্তরের অনুমতি নেয়া হয় না।
বাঁশখালী উপজেলা ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি থাকলেও পানি না থাকলে দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয়। পৌরসভা এলাকায় হাতে গোনা কয়েকটি পুকুর রয়েছে। এ সমস্ত পুকুর ভরাট হয়ে গেলে পাকা দালান বা মার্কেটে আগুনে কোন দুর্ঘটনা ঘটলে কোন অবস্থাতে দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে না।
পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগের সহকারী মো. তাহের জানান, খতিয়ানভুক্ত কোন পুকুর ভরাট করা যাবে না।
পৌরসভার কাউন্সিলর নুরুল কবির সিকদার বলেন, কাজী পুকুরটি এক সময় জমিদার পরিবারের ছিল। বর্তমানে বিভিন্ন ব্যক্তি ক্রয় করে মালিক হয়েছেন। পুকুরটি ভরাট কাজে বাঁধা প্রদান করা হয়েছে।
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার বলেন, পৌর এলাকায় পুকুর ভরাট কোন অবস্থাতেই করতে দেয়া হবে না। পুকুরের পানি আগুন নিয়ন্ত্রণে খুব বেশি প্রয়োজন।
/পূর্বকোণ!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ