নায়িকা শিমলাকে বিয়ে করেছিলেন বিমান ‘ছিনতাই চেষ্টাকারী’

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে অস্ত্র নিয়ে ওঠা যাত্রী পলাশ আহমেদ ওরফে মাহাদি চিত্রনায়িকা শিমলাকে বিয়ে করেছিলেন বলে নিশ্চিত করেছেন পলাশের বাবা পিয়ার জাহান।
গণমাধ্যমকে পিয়ার জাহান বলেন, ‘শিমলা নামের একটি মেয়েকে পলাশ আমাদের বাড়িতে নিয়ে এসেছিল। তার প্রেমিকা হিসেবে আমাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। মেয়েটি চিত্রনায়িকা হিসেবে জানায় পলাশ। ঠিক তার দুই মাস পরে আবারও আসে। তখন জানায়, তারা বিয়ে করেছে। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে আবার মেয়েটিকে নিয়ে এসেছিল পলাশ।’
বিষয়টি সম্পর্কে নায়িকা শিমলার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁর মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, তিন মাস আগে শিমলা দেশের বাইরে গিয়েছিলেন। এরপর আর সমিতির সঙ্গে শিমলার যোগাযোগ হয়নি।
নায়িকাকে বিয়ে করা পলাশ চলচ্চিত্রে কাজ করতে চেয়েছিলেন বলে জানান তাঁর বাবা পিয়ার জাহান। তিনি বলেন, ‘একটা সময় আমরা শুনেছি, পলাশ নাকি চলচ্চিত্রে কাজ করার চেষ্টা করছে। বাড়ির সঙ্গে তার যোগাযোগটা কম ছিল। মাঝেমধ্যে একা বাড়িতে আসত। তবে কারো সঙ্গে তেমন কথা বলত না।’
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ছেলের বউ শিমলার কথা হয়েছে বলেও জানান পিয়ার জাহান। বলেন, ‘বিয়ে করে আমাদের বাড়িতে আনার পর শিমলা নামের মেয়েটির সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। আমরা তাকে বলেছিলাম আমার ছেলেকে বোঝাতে, কারণ ছোটবেলা থেকেই আমার ছেলেটা অবাধ্য ছিল।’
পলাশ শেষ কবে বাড়িতে এসেছিলেন—জানতে চাইলে পিয়ার বলেন, ‘গত মাসে পলাশ বাড়িতে এসেছিল। তখন আচরণ একেবারেই অন্যরকম মনে হয়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, মসজিদে গিয়ে নিজে আজান দেয়। বিষয়গুলো আমাদের কাছে কেমন যেন মনে হচ্ছিল।’
এদিকে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গতকাল রোববার বিকেলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে দুবাইগামী বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বিজি-১৪৭ একজন যাত্রী কর্তৃক ছিনতাইয়ের অপচেষ্টা করা হলে বিমানটি চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করে। বিমানের ক্রুরা কৌশলে ১৪২ যাত্রীকে বিমান থেকে নিরাপদে বের করে দেন। তবে ছিনতাইকারী বিমানের একজন ক্রুকে জিম্মি করতে সক্ষম হয়।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাছে সহায়তা চাওয়া হলে সেনাবাহিনীর কমান্ডো দল ও ২৪ পদাতিক ডিভিশনের কুইক রিঅ্যাকশন ফোর্স (কিউআরএফ) প্লাটুন অতিদ্রুত চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে পৌঁছায়। উল্লেখ্য, সেনাবাহিনীর একটি কমান্ডো দল কুতুবদিয়ায় চলমান যৌথ অনুশীলনের জন্য চট্টগ্রামের নৌবাহিনী ঘাঁটি ইশা খায় ওই সময় অবস্থান করছিল। এমতাবস্থায় সেনাপ্রধানের নির্দেশক্রমে ও জিওসি ২৪ পদাতিক ডিভিশনের তত্ত্বাবধানে এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইমরুল, অধিনায়ক-১ প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়নের নেতৃত্বে ছিনতাইকারীকে আটক করার জন্য আনুমানিক ৭টা ২০ মিনিটে অভিযান পরিচালনা করা হয়।
প্রাথমিক অবস্থায় ছিনতাইকারীকে আত্মসমর্পণের জন্য আহ্বান করা হলেও ছিনতাইকারী আত্মসমর্পণ না করে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। এমতাবস্থায় ছিনতাইকারীকে নিবৃত্ত করার লক্ষ্যে তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ছিনতাইকারীকে বিমানের বাইরে নিয়ে আসা হলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে।
সেনা কমান্ডোদের ত্বরিত এবং সফল অভিযানের কারণে এই উদ্ভূত পরিস্থিতি মাত্র আট মিনিটেই নিয়ন্ত্রণে আনা এবং ছিনতাই নাটকের অবসান ঘটানো সম্ভব হয়।’
এদিকে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান ছিনতাই-চেষ্টার ঘটনায় কমান্ডো অভিযানে নিহত যুবকের নাম পলাশ আহমেদ ওরফে মাহাদি বলে জানিয়েছে র‍্যাব। তিনি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার দুধঘাটা এলাকার বাসিন্দা পিয়ার জাহান সরদারের ছেলে।
র‍্যাব জানায়, তাদের তথ্যভাণ্ডারে রক্ষিত তথ্যানুযায়ী পলাশ আহমেদের গ্রামের বাড়ি নারায়গঞ্জের সোনারগাঁয়। তিনি ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ র‍্যাব-১১-এর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। পরে তাঁর আঙুলের ছাপ পরীক্ষা করে তাঁকে শনাক্ত করা হয়।
এর আগে আজ সোমবার ভোরে পলাশের লাশ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে সেনা কমান্ডোরা। পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এদিকে বিমান ছিনতাই-চেষ্টার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। ছিনতাই-চেষ্টার কবলে পড়া বিমানের ময়ূরপঙ্খী উড়োজাহাজের দুবাইগামী যাত্রীদের আজ নির্ধারিত গন্তব্যে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে বিমান কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ নিয়ে কথা বলেন বিমানমন্ত্রী।
/চাটগাঁর সংবাদ! 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ