নীলফামারী শিশু একাডেমি অনিয়মের আখড়া

মোঃ সাদিকউর রহমান শাহ্ (স্কলার ): চরম অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে নীলফামারী শিশু একাডেমির কার্যক্রম। বছরের ৯মাস অতিবাহিত হতে চললেও হতদরিদ্র শিশুদের আজও পোষাক দেয়া হয়নি। দেয়া হয়নি জুতা। বছরের পর বছর ধরে দেয়া হয়না শিশুদের টিফিন। উপরন্ত শিশুদের কাছ থেকে জামানত হিসেবে এক হাজার টাকা গ্রহণ করা হলেও গত ৪-৫ বছর ধরে সে টাকার কোন হোদিস নেই। অভিযোগ উঠেছে, ভর্তির ক্ষেত্রে হত-দরিদ্র শিশুদের অগ্রাধিকার দেয়ার নিয়ম থাকলেও নানা নিয়মের বেড়া জালে ফেলে উচ্চবৃত্তদের সন্তানদের অবৈধ পন্থায় প্রাক-প্রাথমিক ও শিশু বিকাশ বিভাগে ভর্তির সুযোগ দেয়ার। অনেক অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, ভর্তি ফরম প্রদানের সময় ও নানা রকম টালবাহানা করে চাহিদার অতিরিক্ত ফরম বিক্রি করা হয় এখানে। এছাড়া শিশুদের ভর্তির সময় এক হাজার টাকা আদায় করা হলেও সরকার প্রদত্ত সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কোমলমতি শিশুরা। অভিভাবকরা অভিযোগ করে বলেন, গত ৬-৭ বছর থেকে শিশুদের কোন টিফিন ও পোষাক দেয়া হচ্ছে না। চলতি বছরের ৯মাস অতিবাহিত হতে চললেও পোষাক সহ জুতা প্রদান করা হয়নি এখনও। ৩০ জন করে দুই বিভাগে মোট ৬০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির নিয়ম থাকলে ও ৪০-৫০জন করে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করা হয়েছে টাকার বিনিময়ে। বেশ কয়েক জন অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, দায়িত্বরত জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা মোস্তাক আহমেদের আচরন মোটেও ভাল নয়। তিনি অফিসের চেয়ারে বসেই সিগারেট মুখে অভিভাবকদের সাথে কথা বলেন। স্থানীয় অনেকের ও একই অভিযোগ। দীর্ঘদিন ধরে একই জায়গায় কর্মরত মোস্তাক আহমেদ অফিসের বাড়ান্দায় দাড়িয়ে অনেকটা নায়কোচিত ভঙ্গিতে ধুমপান করেন। অভিযোগ উঠেছে কাগজে কলমে কিংবা নামকাওয়াস্তে অনেক প্রোগ্রাম দেখিয়ে টাকা আত্সাতের। বিভিন্ন দিবসে কোমলমতি শিশুদের বাড়ান্দার ওপর ছেড়াফাটা ব্যানার ও কাপড় বসে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হচ্ছে। প্রতিযোগিতা ও বিচারকদের ভূমিকা নিয়েও রয়েছে অভিভাবকদের নানা অভিযোগ। ওদিকে গত ১৮ই জুলাই ১৮ বিভিন্ন তথ্য চেয়ে জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা বরবারে আবেদন করা হলেও অদ্যাবদি তা পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ শিশু একাডেমির প্রোগ্রাম অফিসার নাজমূল হকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, দুই বিভাগে মোট ৬০জন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির নিয়ম রয়েছে। ভর্তির ক্ষেত্রে হতদরিদ্র শিশুরা অগ্রাধিকার পাবে। শিশু একাডেমিতে টাকা জামানত নিয়ে ভর্তির কোন সুযোগ নেই। শিশুরা নিয়মিত টিফিন ও ড্রেস পাবে। অথচ বছরের পর বছর সব নিয়ম ভঙ্গ করে মোটা অংকের টাকা তছরুপের ঘটনা ঘটেছে নীলফামারী শিশু একাডেমিতে। এ ব্যাপারে নীলফামারী শিশু একাডেমি পরিচালনা কমিটির সদস্য ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহ্বায়ক আহসান রহীম মঞ্জিল এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, শিশুদের সুযোগ সুবিধার বিষয়টি শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা কোন সভাতেই উত্থাপিত না করায়, বিষয়টি ওনার জানানেই। শিশুদের টিফিন ও পোশাক না দেওয়ার বিষয়ে শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা মোস্তাক আহমেদ এর সাথে কথা হলে তিনি বিষয়টি সুকৌশলে এড়িয়ে যান। অফিস সুত্রে জানা গেছে তিনি দিনাজপুর শহরে বাসা নির্মাণ কাজে ব্যস্ত থাকায় সপ্তাহে ২-৩ দিন অফিসে আসেন। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক বেগম নাজিয়া শিরিন এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, শিশুরা পোশাক ও টিফিন যেন নিয়মিত পায় সে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করার আশ্বাস দেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ