‘আসন হারানো যাবে না, এই মনোবৃত্তি নিয়ে কাজ করতে হবে’

বিএন ডেস্কঃ
আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যাঁকে নৌকা দেওয়া হবে, তাঁর পক্ষে কাজ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, নৌকা যেন না হারে। একটি সিটে না জিতলে কী হবে—এমন মনোবৃত্তি যেন কারও মধ্যে না থাকে। একটি আসনও হারানো যাবে না, সবাইকে এই মনোবৃত্তি নিয়ে কাজ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আজ শনিবার আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ মন্তব্য করেন। আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের তৃতীয় ও শেষ বর্ধিত সভা আজ অনুষ্ঠিত হলো। এই সভার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ তৃণমূলে দলীয় কোন্দল ও বিভেদ দূর করে আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনে নিজেদের সংগঠিত করার পরিকল্পনা করছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ করা মানে শুধু নিজের উন্নয়ন করা নয়, দেশ ও দশের জন্য কাজ করাই এই দলের মূল উদ্দেশ্য। বঙ্গবন্ধু দলের জন্য সময় দিতে মন্ত্রিত্ব ছেড়েছিলেন। এই দলের জন্য কাজ করতে হলে মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, সামনে নির্বাচন। এই নির্বাচন কঠিন হবে। নির্বাচনে জয়ী না হলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার থেমে যাবে। দারিদ্র্যের হার বেড়ে যাবে। সামাজিক নিরাপত্তার জন্য যেসব কর্মসূচি চলছে, তা বন্ধ হয়ে যাবে। উন্নয়নকাজ বন্ধ হয়ে যাবে। এর আগেও এ রকম হয়েছিল। তাই সব দ্বন্দ্ব নিরসন করে স্থানীয়ভাবে দলের জন্য কাজ করতে হবে।
তৃণমূল নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সব দ্বন্দ্ব নিরসন করে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে তৃণমূলের মতামত নেওয়া হবে। তারপরও যাঁকে নৌকা প্রতীক দেওয়া হবে, তাঁর পক্ষেই সবাইকে কাজ করতে হবে। প্রতিটা আসন গুরুত্বপূর্ণ। একটিতে না জিতলে কী হয়, তা করলে হবে না। অনেক দিন ক্ষমতায় থাকলে এমন মনে হতে পারে, কিন্তু এটা করা যাবে না। সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের একটি মানুষও অশিক্ষিত থাকবে না। না খেয়ে থাকবে না। মানুষ নৌকায় ভোট দিয়েছে, সুফল পেয়েছে। ভবিষ্যতেও নৌকায় ভোট পেতে জনগণের দোরগোড়ায় যেতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, সংগঠনকে সুসংগঠিত করা হলো তৃণমূল নেতা-কর্মীদের প্রথম কাজ। কারণ আওয়ামী লীগই একমাত্র দল, যারা মানুষের কথা ভাবে, চিন্তা করে ও কাজ করে। এ কথাগুলো গ্রামে গ্রামে গিয়ে তুলে ধরতে হবে। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের সহযোগী সব সংগঠন যেন সুসংগঠিত হয়ে নিয়ম মেনে চলে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
ভোটারদের কাছে ভোট চাওয়ার বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, গ্রামের মানুষের কাছে ভোট চাইতে হবে। তাদের কল্যাণে ও উন্নয়নে কাজ করার কথা বলতে হবে। তৃণমূল নেতাদের কাজ হলো আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করা। আওয়ামী লীগ যে জনগণের দল, এটা জনগণের মধ্যে তুলে ধরতে হবে। ক্ষমতায় থেকে যেসব কাজ আওয়ামী লীগ করেছে, তা জনগণের কাছে তুলে ধরতে হবে। তিনি আরও বলেন, মানুষকে বারবার না বললে মানুষ তা মনে রাখে না। তাই উন্নয়নের তথ্যগুলো জনগণের কাছে বারবার তুলে ধরতে হবে। বিএনপি-জামায়াত স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, তাই মুক্তিযুদ্ধে পক্ষের শক্তিকে ক্ষমতায় রাখতে হলে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে হবে।
বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিল, তারা কখনোই এ দেশের উন্নয়ন চায়নি। জিয়াউর রহমান এ দেশে সাতই মার্চের ভাষণ বাজাতে দেননি। কিন্তু এই ভাষণ বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পেয়েছে। বিশ্বের কোনো নেতার ভাষণ এতবার বাজানো হয়নি।
কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এতিমখানার জন্য টাকা এনে সেই টাকা কীভাবে লুটপাট করা হলো, আপনারা তা জানেন। বিএনপির এত জাঁদরেল আইনজীবী তাঁরা কী করলেন, তাঁরা তো প্রমাণ করতে পারলেন না যে খালেদা জিয়া দুর্নীতি করেনি। এই মামলা ১০ বছর ধরে চলেছে। এখানে আমার কী করার আছে? মামলায় দোষী প্রমাণিত হওয়ায় খালেদা জিয়ার জেল হয়েছে। এর আগেও তিনি ঠিকমতো কোর্টে হাজিরা দেননি। তাঁর দুই সন্তানও দুর্নীতি মামলার আসামি। ২০১৪ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তারা সাড়ে তিন হাজারের মতো মানুষকে আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে। গাড়ি পুড়িয়েছে। দুর্নীতি–লুটপাট করেছে।’

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ