বিএন ডেস্কঃ
গাজীপুর সিটিতে বিএনপি নেতাকর্মীদের পাইকারি হারে গ্রেফতার করা হচ্ছে
বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। সেইসাথে বেগম খালেদা জিয়ার জামিন না দিতেও সরকার
নির্লজ্জ হস্তক্ষেপ করছে বলে দলটির অভিযোগ।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আজ সোমবার সকালে এক
সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ক্ষমতায় থাকা ও
ক্ষমতা থেকে সরে যেতে পছন্দ করে না। এজন্য রাষ্ট্রের সকল সাংবিধানিক
প্রতিষ্ঠানকে দখলে রাখা প্রয়োজন মনে করে। সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে দলীয়
চেতনার লোক নিয়োগ দিয়ে কর্তৃত্ব সম্প্রসারণের কাজটি সম্পন্ন করেছে আওয়ামী
সরকার।
নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন,
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন- ‘সিটি নির্বাচন নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো
ম্যাসেজ নেই’। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই উক্তিটিতে সেই প্রবাদটি মনে
পড়ে- ‘ঠাকুর ঘরে কে রে, আমি কলা খাইনি।’ অথচ গাজীপুর সিটি করপোরেশনের
সর্বত্র সরকারের ম্যাসেজ প্রতিপালিত হচ্ছে অক্ষরে অক্ষরে। প্রতিটি লোকালয়ে
ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরীর কাজ খুব সুচারুভাবেই চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।
পাইকারী হারে গ্রেফতার, বাসায় বাসায় তল্লাশী, বিভিন্ন কেন্দ্রে ধানের শীষের
নির্বাচন পরিচালনা কমিটির নেতৃবৃন্দকে আটক, নতুন করে মিথ্যা মামলায়
হয়রানি, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নিয়ে আসা ডিবি পুলিশের হানাদারি আগ্রাসন,
সরকারি দলের মেয়র, মন্ত্রী ও নেতাদের নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গসহ সর্বোপরি
নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পুলিশের গাড়িতে করে প্রচারাভিযান ইত্যাদি ঘটনায়
সরকারের ম্যাসেজটা কী তা গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ভোটারদের বুঝতে বাকি
নেই।
রিজভী বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম
খালেদা জিয়াকে জামিন না দিতেও সরকার নির্লজ্জ হস্তক্ষেপ করছে। আইনগতভাবে
জামিন পাবার অধিকারী হলেও দেশনেত্রীকে জামিন দেয়া হচ্ছে না। বেগম জিয়ার
বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগই আদালতে প্রমাণিত হয়নি। যে মামলায় নি¤œ আদালত তাকে
সাজা দিয়েছে তা মিথ্যা, বানোয়াট এবং সরকার প্রধানের ইচ্ছা পূরণের রায়। তার
অন্যান্য মামলায় অনেকেই ইতোমধ্যে জামিন পেয়েছেন। আইনগতভাবে বেগম খালেদা
জিয়া জামিন পাবার অধিকারী হলেও তাকে জামিন না দেয়াটা সরকারের চোখ রাঙানির
বহিঃপ্রকাশ। কেনো তিনি জামিন পাচ্ছেন না? দেশের সর্বাধিক জনপ্রিয় নেত্রীকে
এভাবে বন্দী করে শারীরিক ও মানসিকভাবে কষ্ট দেয়া সরকারের জন্য আনন্দের বিষয়
হলেও দেশের জনগণ সর্বোচ্চ আদালতের কাছে সুবিচার প্রত্যাশী। যেসব মামলায়
অন্য মানুষের জন্য বিচারে যে প্রতিকার দেয়া হয়েছে, একই মামলায় দেশনেত্রীর
প্রতি ভিন্ন বিচার, ভিন্ন আচরণ দেশের জনসাধারণকে ব্যথিত করছে। উচ্চ আদালতের
প্রতি মানুষের আস্থা এখনো ক্ষয়প্রাপ্ত হয়নি। মানুষের শেষ আশ্রয়স্থলেও যদি
ফাটল ধরে তাহলে গোটা দেশে নৈরাজ্য নেমে আসবে। সমাজ অরাজকতার অন্ধকারে ঢেকে
যাবে। প্রতিহিংসা একধরনের বন্য বিচার। আদালত যদি সরকারের প্রতিহিংসা
বাস্তবায়নের যন্ত্রে পরিণত হয় তাহলে দেশের জনগণ স্বৈরাচারী সরকারের
ক্রীতদাসে পরিণত হবে।
তিনি বলেন, সরকারের হিংসা ও বিদ্বেষের শিকার দেশনেত্রী বেগম খালেদা
জিয়া। নি¤œ আদালত যদি ন্যায়বিচার করতো তাহলে তাকে সরকারের বিদ্বেষের শিকার
হয়ে কারাগারে বন্দী অবস্থায় নির্মম যন্ত্রণার মধ্যে বসবাস করতে হতো না।
বিনা চিকিৎসায় দেশনেত্রীকে কারাগারে বন্দী জীবন কাটাতে হতো না। সরকারের
নির্দেশেই নি¤œ আদালত বেগম জিয়াকে কষ্ট দিতেই অন্যায়ভাবে সাজা দিয়েছে। যাতে
সরকার দেশনেত্রীর জীবনকে নানাভাবে সংকটাপন্ন করতে সুযোগ পায়। বেগম খালেদা
জিয়া সুস্থ থাকুন সেটা সরকার চায় না বলেই তাদের হাতের মুঠোয় রাখতে নি¤œ
আদালতকে ব্যবহার করেছে। এজন্য কারাগারে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকলেও সরকারের অংশ
কারা কর্তৃপক্ষ দেশনেত্রীর কোনো খবর রাখেনি। তার উন্নত চিকিৎসার জন্য এতবার
বলার পরও তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়নি। জরুরী ভিত্তিতে সিটি
স্ক্যান ও এমআরআই করে চিকিৎসার সুযোগ দেয়া হয়নি। তার অসুস্থতা দিনকে দিন
গুরুতর অবস্থার দিকে যাচ্ছে। আর বেগম খালেদা জিয়ার গুরুতর অসুস্থতা নিয়ে
আওয়ামী নেতারা বিকৃত বিবৃতি দিচ্ছেন এবং অনাবশ্যক কটূকথা বলেই যাচ্ছেন।
আমরা আবারও দ্বিধাহীন কন্ঠে বলতে চাই- দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার
অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি ও সুচিৎিসার ব্যবস্থা করা হোক। অন্যথায় সরকারের
অন্যায়ের কড়ায় গন্ডায় হিসাব জনগণ আদায় করে নিবে।
গাজীপুর সিটি নির্বাচন প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, কয়েক দিন আগে গাজীপুর সিটি
করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছিলেন, গাজীপুরে খুলনার
ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না। তার মানে খুলনায় নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক কারচুপি
ও ভোট সন্ত্রাসের যে অভিযোগ করা হয়েছে তার বক্তব্যে সেটিই প্রমাণিত হলো।
এবং এই ভোট কারচুপি ও অনিয়ম কমিশন ঠেকাতে পারেনি। এদিকে শুধু খুলনামার্কা
নয়, গাজীপুরে ভোট ডাকাতির সর্বোচ্চ রেকর্ড গড়তে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে ইসি
ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
তিনি বলেন, আগামীকাল গাজীপুর সিটি করপোরেশনে যে ভোট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে
সেখানে জনগণ অবাধে পছন্দানুযায়ী প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবে এমন কোনো
পরিবেশ এখনো দৃশ্যমান নয়। জনগণের মধ্যে ভোট নিয়ে উদ্বেগ ও আশঙ্কা আরো
গভীরতর হচ্ছে। গাজীপুরে সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে
পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এখন পর্যন্ত যতটুকু খবর আমাদের নিকট
এসেছে তাতে গাজীপুরে বাছাই করে করে দলবাজ পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেয়া
হয়েছে। তবে আমাদের বিশ^াস সকল বাধা-বিপত্তিকে অতিক্রম করে ভোটাররা ভোট
কেন্দ্রে ভোট দিতে আসবেন। ভোট যদি কিছুটা সুষ্ঠু ও অবাধ হয় তাহলে ধানের
শীষের বিজয় ঠেকাতে পারবে না।
রিজভী বলেন, গত রোববার রাতে গাজীপুরে বিএনপির নির্বাচন পরিচালনার
দায়িত্বে নিয়োজিতসহ ১৩ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা
হলেন- ১১ নং ওয়ার্ডে সাইফুল ইসলাম সবুজ, ৪৭ নং ওয়ার্ডে আমজাদ হোসেন জনি, ৩১
নং ওয়ার্ডে মজিবুর রহমান, ৩২ নং ওয়ার্ডে আনোয়ার হোসেন, ইউসুফ হোসেন, কবির
হোসেন, আব্দুল মান্নান, ২৪ নং ওয়ার্ডে জয়নুদ্দিন মোড়ল, ২৯ নং ওয়ার্ডে
মজিবুর রহমান, ৫২ নং ওয়ার্ডে মো: ইউনুস, লিটন মোল্লা, সেলিম রেজা, হেলেন
প্রমুখ। এছাড়াও গতরাতে শত শত বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বাড়ীতে বাড়িতে
হানা দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গ্রেফতার করা হয়েছে এখন পর্যন্ত দেড় শতাধিক
নেতাকর্মীকে। আমি অবিলম্বে তাদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।
তিনি আরো জানান, বরিশাল উত্তর জেলাধীন আগৈলঝড়া উপজেলার বৈলা ইউনিয়ন
পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী হেমায়েত তালুকদার গতকাল
মনোনয়নপত্র জমা দিতে দেয়া হয় নাই। ফেনীর সোনাগাজী পৌর বিএনপি সভাপতি আবু
মোবারক দুলালকে গতরাতে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ
উপজেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোকাদ্দেম হোসেন সজলকে গতকাল পুলিশ
গ্রেফতার করেছে। বান্দরবান জেলা বিএনপির সভাপতি মিসেস মা ম্যা চিং এবং
সাধারণ সম্পাদক জাবেদ রেজাসহ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ বানোয়াট ও
রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দায়ের করেছে।
রিজভী বলেন, জাতীয়তাবাদী দল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের বংশাল থানাধীন ৩৩ নং
ওয়ার্ডের সভাপতি এরশাদ আলী লাডলা (৩৮) নিজ এলাকায় একজন জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ
হিসেবে অত্যন্ত সুপরিচিত ছিলেন। তাকে গতবছরের ২৮ ডিসেম্বর বিএনপির কর্মসূচি
পালনকালে শান্তিনগর থেকে গ্রেফতার করা হয়। তারপর একের পর এক মিথ্যা মামলা
দিয়ে তাকে রিমান্ডে নিয়ে বর্বর নির্যাতন চালায় পুলিশ। কারাগারে বেশ কয়েকবার
অসুস্থ হলেও কারা কর্র্তৃপক্ষ তাকে কোনো চিকিৎসা না দিয়ে ধীরে ধীরে
মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। কয়েকদিন আগে কারাগারে অজ্ঞান হয়ে পরে যাওয়ার পর
অচেতন অবস্থায় কারা কর্তৃপক্ষ তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনে মেঝেতে
ফেলে রাখে। গত ২১ জুন আদালত থেকে তার জামিনের আদেশ কারাগারে পৌঁছালে তিনি
মুক্ত হন। ততক্ষণে হাসপাতালে তার জীবন প্রদীপ নিবু নিবু। পরবর্তীতে তার
পরিবারের সদস্যরা তাকে বাঁচাতে হাসপাতালে ভর্তি করলেও গত পরশু রাত ১১টায়
তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আমি এ অমানবিক ও নিষ্ঠুর ঘটনার তীব্র নিন্দা
ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং এরশাদ আলী লাডলা’র অকাল মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ
প্রকাশ করছি।
0 মন্তব্যসমূহ