বাঁশখালীতে বেড়িবাঁধের নির্মান কাজে মাটি দিয়ে তৈরী হচ্ছে ব্লক!


বিএন ডেস্কঃ বাঁশখালী উপকূলীয় এলাকাবাসীর জীবনমরণ নির্ভর করে যে বাঁধের ওপর, ২৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে সেই বেড়িবাঁধের নির্মাণকাজ শেষের পথে রয়েছে। তবে দেখা যাচ্ছে, ব্লকের ভেতরে মাটিভর্তি করে ব্লক নির্মাণ করা হয়েছে। বাঁধের বিভিন্ন অংশে ব্লক ধসে পড়ছে। সি.সি ব্লকের বিভিন্ন অংশ ভেঙে পড়ায় কাজের মান নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে স্থানীয়দের মনে। বেড়িবাঁধ নির্মাণকাজে নয় ছয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে তাই আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন এলাকার ভুক্তভোগী মানুষ। কাজের মান যাচাইয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি করে স্থানীয় সচেতন মহল প্রধানমন্ত্রী ও দুর্নীতি দমন কমিশনের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, বাঁশখালী উপকূলীয় এলাকায় পোল্ডার নং-৬৪/এ, ৬৪/১বি এবং ৬৪/১সি বেড়িবাঁধের কাজের জন্য ২০১৫ সালের ১ মে থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় নির্ধারণ করা হয়। ২০১৫ সালে ২৫১ কোটি ২৯ লক্ষ ৮৬ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়ে ৩৪টি প্যাকেজের মাধ্যমে টেন্ডার আহ্বান করা হয়। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান হাসান এন্ড ব্রাদ্রার্স ২০টি প্যাকেজ, মেসার্স মশিউর রহমান ৮টি প্যাকেজ, মেসার্স আরাধনা ২টি প্যাকেজ, মোস্তাফা এন্ড সন্স ২টি প্যাকেজ, নিয়াজ ট্রেডার্স ১টি প্যাকেজ, আলম এন্ড ব্রাদ্রার্স ১টি প্যাকেজে কাজের কার্যাদেশ পায়। ৬টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ছনুয়ায় ৩২০০ মিটার, গ-ামারায় ৯০০ মিটার, খানাখানাবাদে ৪৫০০, সাধনপুরে ২০৭৯ মিটার, পুকুরিয়ার বৈলগাঁওয়ে ১২৬৯ ও বাহারছড়ায় ৫০০ মিটার বাঁধ সংরক্ষণে জিওব্যাগ ডাম্পিংয়ের কাজ এবং সি.সি ব্লক তৈরির কাজ শুরু করেন। চলতি বর্ষা মৌসুমের পূর্বে জুন মাসের ভেতর বাঁধের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে বৃষ্টিতে বেড়িবাঁধের ধস ও ঠিকাদারী কাজের ধীরগতির কারণে নির্মাণ কাজ পিছিয়ে পড়ে।

সূত্রে জানা যায়, বেড়িবাঁধের উন্নয়ন প্রকল্পে ঢাল সংরক্ষণসহ বেড়িবাঁধের এ প্রকল্পে বাঁধ নির্মাণের কথা ৯.৯০০ কিলোমিটার। শঙ্খ নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ ৩.৮৪৮ কিলোমিটার। বেড়িবাঁধের তলদেশের দৈর্ঘ্য ১৫০ ফুট, প্রস্থ ১৪ ফুট, উচ্চতা ১৮ ফুট হিসাবে বেড়িবাঁধটি নির্মাণকাজ সম্পাদানের কথা রয়েছে।
খানাখানাবাদ ইউনিয়নের প্রেমাশিয়ার বাসিন্দা আব্দুল হক, নুরুল আলম, জাফর আহমদ, নুরুল কাদের বলেন প্রেমাশিয়া ও খানাখানাবাদ বেড়িবাঁধ অংশে নতুন বাঁধ তৈরি করে ভারী রোলার দিয়ে মাটিচাপা না দেয়ার কারণে বাঁধটিতে ব্লক বসানোর পর ধসে পড়েছে। সেই ব্লক পুনরায় স্থাপনের জন্য নির্দেশনা থাকলেও ঠিকাদারের লোকজন ধসে পড়ার স্থানে সি.সি ব্লক ফেলে মূল নকশা আড়াল করে কাজ সম্পূর্ণ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অধিকাংশ ব্লকের চর্তুদিকের অংশ ভেঙে পড়ায় ভেতরে মাটিভর্তি করার বিষয়টি অনেকের নজরে পড়েছে। ব্লকের মান নিয়ে অভিযোগের প্রশ্ন উঠলে চাঁদাবাজির মামলার আসামি করার হুমকি দেয়ায় কেউ প্রতিবাদ করেনি।
ছনুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ বলেন, বেড়িবাঁধের নির্মাণকাজের মান নিয়ে অনেক আগে থেকেই অভিযোগ ছিল। কোন অভিযোগ তদারকি করে চূড়ান্ত কিছু হয় নাই। শুনেছিলাম ব্লকের মান খারাপ হওয়ায় কিছু ব্লক বাতিলও করা হয়েছিল। তদন্ত করলে অনেক কিছু বেরিয়ে আসবে।
স্থানীয়রা জানান, ছনুয়া, গ-ামারায় সিলেট বিভাগের বিছানাকান্দির হলুদ পাথর ও কালো পাথর এবং নি¤œমানের বালির ব্যবহার হয়েছে। জিওব্যাগের সাথে ইটের কংকরগুলো ৬ ইঞ্চি ব্যবহার করার নিয়ম থাকলেও তা হয়নি।
গ-ামারার আনোয়ার ইসলাম বলেন, বেড়িবাঁধের কাজের মান নিয়ে কিছু বলার নেই। যে সমস্ত সি.সি ব্লক বসানো হয়েছে ব্লকগুলোর উপরের অংশ দেখলে মনে হবে ৫ বছর পূর্বের কাজ।
লবণাক্ত পানিতে বাধের ওপর বসানো ব্লকের অংশ খশে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবু তাহের বলেন, খানখানাবাদের বেড়িবাঁধের যে সমস্ত স্থানে সি.সি ব্লক বসানো হয়েছে, ধসে পড়া অংশগুলোর পুনরায় কাজ চলছে। ধসে পড়া অংশে অতিরিক্ত ব্লক বসানো যাবে না। ড্রেসিং করার পর পুনরায় ব্লকগুলো সমান আকারে বসানোর কথা রয়েছে। কাজের অনিয়ম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কাজের মান কই ভালো তো’ ?
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খ.ম জুলফিকার তারেক বলেন, বাঁশখালী উপকূলীয় বেড়িবাঁধের কাজের মান তদারকি করছেন প্রকৌশলীরা। অনিয়ম হলে ঠিকাদার বিল পাবে না। বাঁধ নির্মাণ কাজে স্থানীয়দের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঠিকাদারের কারণে অনেক কিছু ঘটে যায়। কাজের মান আদায়ের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। 
সূত্র: দৈনিক পূর্বকোণ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ