শেখ হাসিনাকে ক্ষমা করে দিয়েছি : খালেদা

বিএন ডেস্কঃ
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনে চতুর্থ দিনের বক্তব্য দিতে গিয়ে আদালতকে খালেদা জিয়া বলেছেন, শেখ হাসিনার প্রতি প্রতিহিংসামূলক আচরণ করবেন না তিনি। প্রতিহিংসার রাজনীতিও করবেন না। শেখ হাসিনাকে তিনি ক্ষমা করে দিয়েছেন। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ের কথা স্মরণ করে বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) আদালতে বিএনপি নেত্রী বলেন, ফখরুদ্দিন–মইনুদ্দিনের সঙ্গে কোনও সমঝোতা করিনি। তারা আমার সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করেছিল। নানা রকম প্রস্তাব আমার কাছে এসেছিল। আমি তাতে রাজি হইনি। জানিয়েছিল জরুরি অবস্থা তুলে দিয়ে তারা নির্বাচনে যেতে চায়। আওয়ামী লীগ তাদের সঙ্গে সমঝোতা করে গোপন আঁতাত করে ক্ষমতায় গিয়েছিল। সংবিধান ও গণতন্ত্রের স্বার্থে ফলাফল মেনে নিয়েছিলাম। সরকারকে সহযোগিতার কথা বলেছিলাম। কিন্তু আমাদের সহযোগিতার আচরণের বিনিময়ে তারা কী আচরণ করেছে তা সবারই জানা।–ফোকাস বাংলা
খালেদা বলেন, প্রতিহিংসার বিপরীতে সংযম ও সহিষ্ণুতার পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা আমরা বারবার করে এসেছি। কিছুদিন আগেও আমি সংবাদ সম্মেলনে অতীতের তিক্ততার কথা তুলে ধরেছি। আমার ও শহীদ জিয়ার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার ক্রমাগত অশোভন উক্তি, প্রতিহিংসামূলক বৈরী আচরণ সত্ত্বেও আমি ক্ষমা করে দিয়েছি। আমি তার প্রতি কোনও প্রতিহিংসামূলক আচরণ করবো না। আওয়ামী লীগের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আসুন, রাজনীতিতে সহিষ্ণু, সুন্দর সংস্কৃতি গড়ে তুলি। যা গণতন্ত্রের জন্য খুবই প্রয়োজন। যাতে আমাদের কাছ থেকে ভবিষ্যত প্রজন্ম ভালো কিছু শিখতে পারে।
বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) বেলা ১১ টা ৩৯ মিনিটে বেগম খালেদা জিয়া পুরান ঢাকার বকশীবাজারে আলিয়া মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালতে আসেন। ১১টা ৫৮ থেকে ১টা ৩২ পর্যন্ত বক্তব্য দেন। মাঝখানে আজানের জন্য কিছু সময়ের বিরতি ছিল। খালেদা জিয়া আদালতে বলেন, ‘বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা করে সমাধানের পথ খোঁজার চেষ্টা করেছি। সমঝোতার মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনা ও জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়াসহ ভালো প্রশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য ভিশন টোয়েন্টি–টোয়েন্টি ঘোষণা করেছি। এসব উদারতার জবাব আমাদের কোন ভাষায় দেওয়া হচ্ছে তা সবাই জানে, আপনিও (আদালত) জানেন। এদেশে গণতন্ত্র নেই, কার্যকর সংসদ নেই, প্রহসনের প্রশাসন চলছে। গুম, খুন, অপহরণ, নির্যাতন ও বিচারহীনতার রাজত্ব চলছে। ক্ষমতার অপব্যবহার চলছে। আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য শেষ না হওয়ায় আগামী ১৬ নভেম্বরও তিনি আদালতে আসবেন। এর আগে গত ১৯ অক্টোবর, ২৬ অক্টোবর ও ২ নভেম্বর খালেদা জিয়া আদালতে বক্তব্য দিয়েছেন। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় চতুর্থ দিনের মতো আত্মপক্ষ সমর্থন করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। অসমাপ্ত থাকায় আগামী ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত আত্মপক্ষ সমর্থন মুলতবি করেছেন আদালত। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের বাকি সাক্ষীদের আসামিপক্ষের পুনঃজেরার দিনও ধার্য করেছেন একইদিন।

বেলা সোয়া ১২টা থেকে ১ ঘণ্টা ২৩ মিনিট বক্তব্য উপস্থাপনের পর মুলতবি চান তিনি। এর আগে বেলা ১১টা ৩৮ মিনিটে আদালতে এসে চ্যারিটেবল মামলায়ও হাজিরা দেন খালেদা জিয়া। এরপর স্থায়ী জামিনের আবেদন জানান তিনি। বেলা ১২টা থেকে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন তার আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। এ আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন আদালত।

বেলা পৌনে এগারটায় তার গুলশানের বাসা থেকে আদালতের উদ্দেশ্যে রওনা হন মামলা দু’টির প্রধান আসামি খালেদা জিয়া। শুনানির শুরুতেই চ্যারিটেবলে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা মকবুল আহমেদ ও মনিরুল ইসলামকে আসামি মনিরুল ইসলাম খানের পক্ষে পুনঃজেরা শেষ করেন এডভোকেট আমিনুল ইসলাম।

অরফানেজ মামলায় খালেদা জিয়াসহ আসামি মোট ছয়জন। অন্য পাঁচজন হলেন– বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদার বড় ছেলে তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী এবং প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ