দক্ষিণজেলা ছাত্রলীগের সাত উজ্জল নক্ষত্র, বাঁশখালীর সাত কৃতি সন্তানদের গণ-সংবর্ধনা

গাজী গোফরানঃ
প্রধান অতিথির বক্তব্যে দক্ষিণজেলা আওয়ামীলীগ নেতা আলহাজ্ব আব্দুল্লাহ কবির লিটন বলেন, সাদামাটা জীবনযাপন, হৃদয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ’- এই হোক ছাত্রলীগের জীবনাদর্শ। 

বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বাঁশখালী শাখা আয়োজিত ছাত্র সংবর্ধনা সভায় ছাত্রলীগের কর্মীদের উদ্দেশ্যে আলহাজ্ব আব্দুল্লাহ কবির লিটনের এই উপদেশ সকল ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ নির্দেশক। যা এক ছাত্রলীগ নেতা বা কর্মীকে এক জন প্রকৃত ও যোগ্য মানুষে পরিণত করবে। যেমনটা করেছিল আমাদের পূর্বসুরীদের । ছাত্রলীগ তাদের পরিণত করে ছিল সোনার ছেলেতে, আর সেই মহান সোনার ছেলেরা আমাদেরকে দিয়েছেন বাংলা ভাষা, দিয়েছেন বাংলাদেশ নামে একটি দেশ।

বাংলাদেশ আর ছাত্রলীগের ইতিহাস একটি আরেকটির সাথে গভীরভাবে মিশে আছে। বাংলাদেশের যতগুলো মহান অর্জন আছে তার পেছনে রয়েছে ছাত্রলীগের অবদান। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর প্রান্তে বাংলার স্বাধীনতা ডুবে গিয়েছিল দুই বছরের জন্য, আমরা হয়ে গিয়েছিলাম ব্রিটিশদের অধীনে। মহাত্মা গান্ধির নেতৃত্বে ব্রিটিশদের আমরা বিতাড়িত করতে পারলেও বিভক্ত হয়ে যায় ভারতীয় উপমহাদেশ। পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্বপাকিস্তান নামে একটি অদ্ভুত রাষ্ট্রের জন্ম হয়। কেননা, এই দুই অঞ্চলের মধ্যে ব্যবধান ছিল দেড় হাজার কিলোমিটার। দুই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে রয়েছে ভাষা, সংস্কৃতি মূল্যবোধের তারতম্য। রাষ্ট্র সৃষ্টির পর পরই আমাদের উপর নেমে আসে পশ্চিম পাকিস্তানের বর্বর অত্যাচার। 

পাকিস্তান সৃষ্টির পর পর পাকিস্তানিরা যখন আমাদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ শুরু করে, তখনই বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছেন যে, আমরা পরাধীন। তাই তিনি বলেছেন, ‘‘ ইহা স্বাধীনতা নয়, এক শকুনের হাত থেকে আরেক শকুনের হাতে পড়া।’’ আর এই শকুনদের হাত থেকে রক্ষা পেতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্রদের সংগঠিত করার উদ্যোগে নেন। এই উদ্যোগের সম্মিলিত আজকের ছাত্রলীগ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি পাকিস্তান ছাত্রলীগ প্রতিষ্টা করেন। 

ছাত্রলীগই প্রথম বাংলাভাষার জন্য ১০ দফা দাবি নামা পেশ করে। মাতৃভাষা বাংলাকে উর্দুর পাশাপাশি পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা করার সংগ্রামে যুক্ত হয়ে ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্র“য়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাস্তায় নেমে আসে। সেই দিন শহীদ ও নিখোঁজ হয় ছাত্রলীগের অনেক বেশী কর্মী। অত্যাচার নির্যাতনের স্বীকার হয় শত শত ছাত্রলীগ নেতাকর্মী। ১৯৫৪ যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন জয়লাভ এবং ১৯৬২ সালে শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ছাত্রলীগের অবদান ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু বাঙ্গালী জাতির মুক্তির সনদ ঐতিহাসিক ছয় দফা- দাবি পেশ করলে ছাত্রলীগ ও ছাত্র সমাজের ১১ দফা এই আন্দোলনের গতি বৃদ্ধি করে। ১৯৬৯ সালের গন- অভুথান সংগঠিত করার পেছনে মুখ্য ভূমিকা পালন করে ছাত্রলীগ। ১৯৭০ সালের নির্বাচন ছাত্রলীগের প্রত্যেক নেতাকর্মী জাতির জনকের নির্দেশে বাংলার গ্রামগঞ্জে গিয়ে আওয়ামী লীগকে ভোট দিতে উদ্বুদ্ধ করে। যার ফলে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয়লাভ করতে সক্ষম হয়। 

১৯৭১ সালে অত্যাচারী, ঘৃণ্য পাকিস্তানিরা অপারেশন সার্চ লাইট নাম দিয়ে এই দেশের ঘুমন্ত মানুষের উপর হায়েনার ন্যায় ঝাপিয়ে পরে, হত্যা করে হাজার হাজার নিরীহ ও নিরপরাধ মানুষ। সেই সময়ের ছাত্রলীগ কর্মীরা বসে থাকেনি। যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। গেরিলা যুদ্ধ দিয়ে ধরাশায়ী করে ছিল রক্ত পিপাসু ও নারী নির্যাতনকারী পাকিস্তানীদের হায়েনাদের । আমাদেরকে বাংলাদেশ নামক স্বাধীনরাষ্ট্র উপহার দিতে ১৭ হাজার ছাত্রলীগ নেতাকর্মী আত্মত্যাগ করেছিলেন। 

আজকে সুশীল নামধারীরা ছাত্রলীগকে সহ্য করতে পারেন না, সামান্য খুঁত পেলে তাকে অসামান্য করে তোলেন। মিডিয়া ছাত্রলীগের ভালো কিছু প্রচার করেনা। ছাত্রলীগের অবদান আমাদের মিডিয়া ভুলতে বসেছে। এর জন্য দায়ী ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশকারীরা। ছাত্রলীগের মধ্যে এখন এমন কিছু হাইব্রিড ও অন্য দল থেকে আগতরা অবস্থান করছে, যারা সুযোগ পেল্ইে অপকর্ম করছে আর কলঙ্কিত করছে আমাদের প্রাণের প্রিয় এই সংগঠনকে । ছাত্রলীগের আদর্শ বলতে কার আদর্শকে বুঝব? ছাত্রলীগের আদর্শ বলতেই আমরা অবশ্যই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে বুঝব।
তবে জানতে হবে জাতির জনকের আদর্শ কি? ছাত্র অক্ষস্থায় বঙ্গবন্ধু মুসলিম সেবা সমিতির সদস্য ছিলেন। এই সময় তিনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে মুষ্টির চাল তুলে আনতেন। এই চাল বিক্রি করে গরীব ছেলেদের বই পরীক্ষার খরচসহ অন্যান্য খরচ বহন করা হত। হামিদ মাস্টার মারা যাবার পর তিনি এই সেবা সংঘের সম্পাদক হয়েছিলেন। মুষ্টির চাল তুলে গরিব ছেলেদের পড়াশুনা ব্যবস্থা করার যে নজির বঙ্গবন্ধু সৃষ্টি করেছেন তা আজকের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের জন্য এক উজ্জল দৃষ্টান্ত। উন্নত বিশ্বের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় স্টুডেন্ট কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট আরেকটা এই নিয়মে টাকা পয়সা তুলে উন্নয়নশীল দেশের ছাত্রদের কে স্কলারশীপ প্রদান করে। আমাদের এই অঞ্চলে ১৯৪৩ সালে দুর্ভিক্ষ হয়, যা বাংলায় পঞ্চাশের মনন্তর নামে পরিচিত । এই সময় বঙ্গবন্ধু দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের পাশে ছিলেন। তিনি বলেন, হোস্টেলে যা বাঁচে দুপুরে ও রাতে বুভুক্ষদের বসিয়ে ভাগ করে দেই । শহীদ সাহেব লঙ্গরখানা খোলার হুকুম দিলেন, আমি লেখাপড়া ছেড়ে দুর্ভিক্ষপীড়িতদের সেবায় যাপিয়ে পড়লাম (অসমাপ্ত আত্মজীবনী, ড- ১৮) এই হলেন বঙ্গবন্ধু, এই হল তাহার আদর্শ। যিনি মানুষের সেবা করতে নিজের উজ্জল ভবিষ্যতের কথা না ভেবে, মানুষের পাশে গিয়ে তাদের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছেন, যা আজকের সময়ে খুব বিরল।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই দেশের গরীব ও মেহনতী মানুষের জন্য লড়াই করেছেন। ১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা তাদের ন্যায্য দাবি-দাওয়া আদায়ের উদ্দেশ্যে ধর্মঘট ঘোষণা করলে বঙ্গবন্ধু ধর্মঘটের প্রতি সমর্থন জানান। কর্মচারীদের এ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগে ২৯ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অযৌক্তিকভাবে তাকে জরিমানা করে। তিনি এ অন্যায় নিদের্শ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন। যার ফলে, তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কৃৃত হন এবং ১৯ এপ্রিল উপাচার্যের বাসভবনেন সামনে অবস্থান ধর্মঘট করার কারণে গ্রেপ্তার হন। এই হল বঙ্গবন্ধুর আদর্শ। ছাত্র অবস্থায় বঙ্গবন্ধু সব সময় মানুষের জন্য কাজ করেছেন, মানুষের পাশে দাড়িয়েছেন এবং মানুষের অধিকার আদায়ে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন। 

কিন্তু বর্তমান ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মীরা সাধারণ মানুষ থেকে অনেক দূরে সঙ্গে গিয়েছেন। তারা আমাদের প্রিয় সংগঠনকে এখন নিজেদের পদ আর অর্থ উর্পাজনের হাতিয়ারে পরিণত করছে। যারা সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি আর লুটপাটের জন্য ছাত্রলীগে ঢুকে পড়েছে, যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী নয় তারা ছাত্রলীগের মতো ঐতিহ্যবাহী সংগঠনের কর্মী হতে পারে না । ছাত্রলীগের অতীত ইতিহাস অনেক গর্বের ও অহংকারের । সেই গৌরব উজ্জল ইতিহাসকে অব্যাহত রাখতে হলে আমাদেরকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ অনুসরণ করতে হবে, মনে রাখতে হবে জননেত্রী শেখ হাসিনা উপদেশ যা হল, উচ্চ আদর্শ এবং সাদামাটা জীবন যাপন এই হোক তোমাদের জীবনাদর্শ। আমরা বঙ্গবন্ধুর মত সাদামাটা জীবন যাপন করব আর হৃদয়ে ধারণ পারলেই এবং চাকচিক্যময় জীবন পরিহার করতে পালেই আমরা বঙ্গবন্ধুর সোনাবাংলা এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে পারব। 

উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্তিত চিলেন দক্ষিণজেলা যুবলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসাইন, নব্বই দশকের সাবেক ছাত্রনেতা, দক্ষিণজেলা আওয়ামী যুবলীগের প্রভাবশালী নেতা সু-বক্তা গাজী জাহেদ আকবর জেবু, বাঃছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আরিফুজ্জামান আরিফ, সংবর্ধিত অতিথি দক্ষিণজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আনিসুল হক চৌধুরী, হোসাইন মোহাম্মদ, 
হামিদ হোসাইন, মাঈনুল মান্না, সাহাব উদ্দীন, মোঃ ফাহিম, রিপন তালুকদার সহ আওয়ামীলীগ যুবলীগ ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় বাঁশখালী উপজেলা পরিষদ মাঠ প্রাঙ্গণে। সভাপতিত্ব করেন বাঁশখালী উপজেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আনছারুল হক চৌধুরীর আদিব এবং সঞ্চালনা করেন দক্ষিণজেলা ছাত্রলীগ নেতা মোঃ ইকবাল হোসাইন চৌধুরী।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ