বাঁশখালীর ৫ জয়িতার গল্প

বি, এন ডেস্কঃ
‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’ কার্যক্রমে বাঁশখালীর মনোনয়নপ্রাপ্ত ৫ জন জয়িতা হলেন মালেকা বেগম, ডা. সুপর্ণা দে, মিনু আক্তার, রেজিয়া বেগম ও স্বরস্বতী দেবী।
বাঁশখালী মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার অধীনে কমিটির যাচাই-বাছাইয়ের পর সফল হিসাবে তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। ব্যক্তি জীবনে তারা পিছিয়ে পড়ে পুনরায় ঘুরে দাঁড়িয়ে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। জীবনে হার না মেনে জয় যারা ছিনিয়ে আনেন তারাইতো জয়িতা।
মালেকা বেগম: বাঁশখালী উপজেলার কালীপুর পূর্ব কোকদ-ী গ্রামের স্বামী মৃত মো. শাহজাহানের স্ত্রী মালেকা বেগম। স্বামীর মৃত্যুর পর অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়েও সাফল্য অর্জনকারী নারী মালেকা বেগম দরিদ্র পরিবারের সন্তান। ১৯৯৫ সালে তার বিয়ে হয়। তিন সন্তানের জন্ম নেয়ার পর বিধবা হন। স্বামীর মৃত্যুর পরেও থেমে যায়নি তার জীবনসংগ্রাম। সংসারের হাল ধরতে ও ছেলেদের মানুষ করতে সমিতি থেকে ক্ষুদ্র ঋণ নিতে হয় তাকে। পাশাপাশি ঘরে জাল বুনে, পাটি বানিয়ে যা আয় হয় তার থেকে ৩ সন্তানকে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ করে দেন। একেবারে জিরো থেকে ওঠে আসা মালেকা বেগম বর্তমানে দারিদ্র্যতাকে জয় করে এখন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী।
ডা. সুপর্না দে সিম্পু: বাঁশখালী পৌরসভার দক্ষিণ জলদী গ্রামের স্বপনেন্দু দের কন্যা ডা. সুপর্না দে সিম্পু নি¤œ মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম। পিতা শিক্ষকতা পেশায় ছিলেন। ডা. সুপর্না দে সিম্পু প্রাথমিক পর্যায় থেকে কলেজ পর্যন্ত বাঁশখালী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বৃত্তি, জুনিয়র বৃত্তি, এসএসসিতে সর্ব্বোচ্চ জিপিএ নিয়ে পাশ করে চট্টগ্রাম কলেজ ভর্তি হন। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া চলাকালীন সময়ে ২০০৭ সালে তার বিয়ে হয়। অনেক বাধা অতিক্রম করে দু’সন্তান নিয়ে ভেটেরিনারী ও এনিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রী নিয়েছেন। ১১তম বি.সিএস পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে পাশ করে বর্তমানে খাগড়াছড়ি জেলার লক্ষ্মীছড়ি উপজেলায় ভেটেরিনারি সার্জন হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
রিজিয়া বেগম: কালীপুর ইউনিয়নের পালেগ্রামের মরহুম নুরুল আমিনের স্ত্রী রিজিয়া বেগম। অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যায়। লেখাপড়া ও তেমন হয়ে উঠেনি। মধ্যবিত্ত পরিবারের ঘরের বড় বউ হয়ে সংসারের মধ্যে ৬ ছেলে ও ৩ মেয়েকে মানুষ করতে হয়েছে। নয় ছেলে মেয়েই উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে স্ব স্ব পেশায় প্রতিষ্ঠিত। ছেলেদের মধ্যে কেউ অধ্যক্ষ, ব্যাংকার, আইনজীবী, আবার কেউ ব্যবসায়ী হিসাবে সকলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। সরকারি চাকরিজীবী স্বামীর অনুপ্রেরণায় বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যেও ধৈর্য্য ধারণ করে রিজিয়া বেগম ছেলে মেয়েদের মানুষ করে সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
মিনু আক্তার: পৌরসভার দক্ষিণ জলদী গ্রামের মৃত শাহ্ আলমের স্ত্রী মিনু আক্তার তেমন লেখাপড়া করার সুযোগ হয়নি। এই অভাবের সংসারে ১৭ বছর বয়সেই বেকার এক যুবক রিকশাচালকের সাথে বিয়ে হয়। গর্ভের সন্তান রেখেই স্বামী আবার অন্যত্র বিয়ে করে বসে। স্বামীর নির্যাতন সইতে না পেরে বাপের বাড়ি গিয়ে আশ্রয় নেন। বাপের বাড়িতেই জন্ম নেয় ফুটফুটে এক সন্তান। শুরু হয় জীবনযুদ্ধ। বাপের বাড়িতে ৫ ভাই-বোনের দায়িত্ব পড়ে কাঁধে। ছেলেকে মানুষ করতে গিয়ে মানুষের বাসা বাড়িতে রান্নাবান্না/ঝিয়ের কাজ করতে হয়েছে। কোলেপিঠে ছেলেকে মানুষ করতে গিয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে সে রাজমিস্ত্রী হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে। সন্তানের আয় দিয়ে এক খ- জমি ক্রয় করে বসতবাড়ি তৈরি করে সচ্ছলতা ফিরে পেয়েছে। জীবনকে আরো উপভোগ করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি।
স্বরস্বতী দেবী: চাম্বল ইউনিয়নের পূর্ব চাম্বল নাথ পাড়ার সুনীল নাথের স্ত্রী স্বরস্বতী দেবী। সংসার জীবনে বেসরকারি সাহায্য সংস্থার সাথে জড়িত হয়ে সমাজ উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। যৌতুক প্রথা ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধে ভূমিকা রাখায় পরিচিত মুখ তিনি। গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে সচেতন করা, পুষ্টি শিক্ষা, সামাজিক ও পারিবারিক বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। এলাকায় স্বরস্বতী দেবীকে সচেতন মহল আদর্শ মহিলা হিসাবে মূল্যায়ন করে থাকেন।
বাঁশখালী উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা সাকেরা শরিফ বলেন, জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ কার্যক্রমে ৫ ক্যাটাগরিতে কমিটির মাধ্যমে এলাকাভিত্তিক তথ্য সংগ্রহ করে ৫ জন মহিলাকে যাচাই-বাছাই করে তাদের নিজ সফলতার জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়েছে
/দৈনিক পূর্বকোণ/

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ