‘কারচুপি’র প্রমাণ কর্তৃপক্ষকে খুঁজতে বললেন অংশগ্রহণকারী প্রার্থীরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের কাছে ভোট কারচুপিসহ অন্যান্য অনিয়মের প্রমাণ চেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শনিবার (১৬ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়।
তবে এর প্রতিক্রিয়ায় বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীরা বলছেন নির্বাচন কারচুপির প্রমাণ খুঁজে বের করার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের। এর কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছেন যেহেতু ভোটকেন্দ্রে কোনও এজেন্টের ব্যবস্থা রাখা হয়নি, সেহেতেু শিক্ষকরাই ভোটকেন্দ্রের ভেতরে দায়িত্ব পালন করেছেন। শিক্ষকদের সামনেই অনিয়ম হয়েছে। তাই কারচুপি এবং অনিয়মের প্রমাণ কর্তৃপক্ষকে তদন্ত করে বের করতে হবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্তৃপক্ষের ভাষ্য হলো, ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে যদি ভোটের কোন অনিয়ম, অসততা, কারচুপি, জালিয়াতি প্রভৃতির বস্তুনিষ্ঠ প্রমাণ কারো কাছে থাকে, তাহলে সেসব সুনির্দিষ্টভাবে বিশ্ববিদ্যালয়কে অবহিত করলে যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থী/প্যানেল থেকে প্রাপ্ত অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এ বিষয়ে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের প্যানেল থেকে ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থী লিটন নন্দী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচনে কোথায় কোথায় অনিয়ম হয়েছে, তা তদন্ত করে খুঁজে বের করার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। এটা খুঁজে বের করার দায়িত্ব ছাত্রদের না।’
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কারচুপির অভিযোগ অস্বীকারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা পুরো জাতি দেখেছে। পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়া ছিল প্রশ্নবিদ্ধ এবং ত্রুটিপূর্ণ। নির্বাচনে প্রশাসন কোনও পোলিং এজেন্ট রাখেনি। সবকিছু মিলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে এবং বিশ্ববিদ্যালয় বিতর্কিত হয়েছে। এর দায়ভার সম্পূর্ণ কর্তৃপক্ষের। এ নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্রদের গণতান্ত্রিক অধিকারকে হরণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ মনে করেছিল যে, জাতীয় নির্বাচনের (৩০ ডিসেম্বর) মতো হয়তো ডাকসু নির্বাচন হবে না। কিন্তু জাতীয় নির্রাচন আর ডাকসু নির্বাচনের মধ্যে কোনও পার্থক্য ছিল না।’
স্বতন্ত্রপ্রার্থী এ আর এম আসিফুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ভোটকেন্দ্রে গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ভোট কারচুপি এবং নির্বাচনে অনিয়ম হয়েছে। এর দায়ভার প্রশাসনের। আমরা আগেই বলেছি গণমাধ্যমের ওপর কোনও ধরনের নিয়ম আরোপ না করতে। কিন্তু প্রশাসন আমাদের কথা আমলে নেয়নি। অনিয়মের সুযোগ করে দিতে অস্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ব্যবহার ও রাতেই হলে হলে ব্যালট বাক্স পাঠানো হয়েছে। এছাড়া ভোটকেন্দ্রে কোনও এজেন্ট থাকারও নিয়ম রাখা হয়নি। শিক্ষকরাই দায়িত্ব পালন করেছেন। তাদের সামনেই অনিয়ম হয়েছে, তাই কারচুপি এবং অনিয়মের প্রমাণ কর্তৃপক্ষকে বের করতে হবে।’
ডাকসু নির্বাচনে পর্যবেক্ষণকারী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. ফাহমিদুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের পর্যবেক্ষণে যা এসেছে তা আমরা তাই বলেছি। ভেতরের কারচুপির কোনও প্রমাণ আমাদের কাছে নেই । তবে, বাইরে অনেক শিক্ষার্থীকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং কৃত্রিমভাবে লাইনে বিলম্ব ঘটানো হয়েছে। আর ভোটকেন্দ্রের মধ্যেও দীর্ঘ সময় নিয়ে অন্যদের ভোটগ্রহণ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এছাড়াও অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের কেন্দ্র থেকে চলে যাওয়ার কথাও আমি নিজ কানে শুনেছি। অর্থাৎ একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যা যা করার দরকার ছিল, তা করা হয়নি । এর বাইরে অনেক ধরনের মেকানিজম ছিল। যা ছিল পুরোপরি পূর্ব পরিকল্পিত। আর কুয়েত মৈত্রী হলে যে ঘটনা ঘটেছে তাতো নির্বাচনকে কলঙ্কিত করেছে। যদিও নির্বাচন স্থগিত করে পুনরায় নেওয়া হয়েছে। আর শামসুন্নাহার হলে তো মেয়েরা সারা রাত পাহারা দিয়েছে। এটাতো নির্বাচনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া না।’
এ বিষয়ে কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানকে ফোন দিয়েও কথা বলা সম্ভব হয়নি।


তবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অভিযোগকারীকেই নিজের অভিযোগের বিষয়ে তথ্য প্রমাণ হাজির করতে হবে। কারণ অভিযোগ করা এখন আমাদের সমাজে একটি ব্যধিতে পরিণত হয়েছে।’

/বাংলা ট্রিবিউন!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ