নিউজিল্যান্ডে হামলাকারীর পরিচয়

নিউজিল্যান্ডের দুই মসজিদে ভয়াবহ হামলাকারীদের একজন অস্ট্রেলিয়ান বংশোদ্ভূত। তার নাম ব্রেন্টন ট্যারেন্ট। ২৮ বছর বয়সী এই হামলাকারী শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদের মৌলবাদী ও জঙ্গি মানসিকতার লোক ছিল।
অস্ট্রেলিয়ান প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনই বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, ওই ব্যক্তিকে অস্ট্রেলিয়ায় হাজতবাস করতে হয়েছিল। সে মৌলবাদী, ডানপন্থি ও সহিংস সন্ত্রাসী ছিল।
অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস অঙ্গরাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অপরাধ সংক্রান্ত পুরনো রেকর্ড আছে গ্রাফটন শহরের এই লোকের।
শুক্রবার (১৫ মার্চ) জুমার নামাজের সময় মসজিদ দু’টিতে হামলার আগে ট্যারেন্ট তার টুইটার অ্যাকাউন্টে ৭৩ পৃষ্ঠার কথিত মেনিফেস্টো (ঘটনার কারণ) প্রকাশ করে। এতে সে নিজেকে একজন ‘সাধারণ শ্বেতাঙ্গ লোক’ বলে উল্লেখ করে। ওই হামলাকারী আরও উল্লেখ করে, সে একটি ‘শ্রমিক শ্রেণীর স্বল্প-আয়ের পরিবারে জন্ম নিলেও… জনগণের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল’। ট্যারেন্টের অস্ত্র-সরঞ্জামে ছিল মুসলিম-বিদ্বেষী নানা শব্দ-বাক্য সে তার হামলার কারণ হিসেবে মেনিফেস্টোতে উল্লেখ করে, ‘ইউরোপের ভূমিতে অভিবাসীর সংখ্যা একেবারে কমিয়ে ফেলতে সে এই হামলাটি চালিয়েছে।’
ট্যারেন্টের ব্যক্তিগত টুইটার অ্যাকাউন্টের হেডার ফটো হিসেবে যে ছবি রয়েছে, সেখানে ২০১৬ সালে ফ্রান্সের নিসে শহরে বাস্তিল ডে উদযাপন অনুষ্ঠানে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত একজনের ছবি দেখা যায়। সেদিন জনতার ওপর ট্রাক চালিয়ে দেওয়ার ঘটনায় ৮৪ জনের প্রাণহানি হয়।
এই ভয়াবহ হামলা চালানোর জন্য দুই বছর ধরে পরিকল্পনা করছিল জানিয়ে ট্যারেন্ট তার মেনিফেস্টোতে বলে, তিন মাস আগেই সে ক্রাইস্টচার্চে হামলার সিদ্ধান্ত নেয়।
হামলাকারী তার মেনিফেস্টোতে অভিবাসীদের দিকে ইঙ্গিত করে উল্লেখ করে, ‘ঐতিহাসিকভাবে ইউরোপের ভূমিতে বিদেশি ‘দখলদার’দের কারণে শত শত মানুষের মৃত্যুর পাল্টা প্রতিশোধ হিসেবে ‘দখলদার’দের ওপর এই হামলা চালানো হচ্ছে।’
সে তার মেনিফেস্টোতে আরও বলে, ‘২০১৭ সালে সুইডেনের স্টকহোমে সন্ত্রাসী হামলায় ১১ বছর বয়সী শিশু এব্বা অকারলান্ডের নিহত হওয়ার ঘটনার শোধ নিতে এই হামলাটি চালানো হয়েছে। স্টকহোমের ওই ঘটনাটিই আমাকে প্রথম এ ধরনের হামলার অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে, বিশেষ করে ওই ১১ বছর বয়সী মেয়েটির মৃত্যু। এব্বার মৃত্যু হয়েছে ‘দখলদার’দের হাতে…আমি এ ধরনের হামলা এড়িয়ে যেতে পারি না।’
ফ্রান্সের নিসে শহরের ঘটনাটিও তাকে হামলায় প্রেরণা যুগিয়েছে বলে মেনিফেস্টোতে উল্লেখ করে ট্যারেন্ট।
যে অস্ত্র-সরঞ্জাম নিয়ে ট্যারেন্ট ও তার সহযোগীরা হামলা চালিয়েছে সেখানে মুসলিমদের ওপর বিগত সাম্প্রদায়িক হামলার তথ্য তুলে ধরে এ ধরনের হামলা চালিয়ে যাওয়ার উৎসাহমূলক বিভিন্ন শব্দ-বাক্য দেখা যায়।
বর্বরোচিত এই হামলায় ৪৯ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে দুই বাংলাদেশিও রয়েছেন। নৃশংস হামলাটির নিন্দা জানিয়েছে স্তম্ভিত বিশ্ববাসী।
/ভোরের কাগজ! 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ