বাঁশখালীতে পিইসি’র ফলাফলে পুনর্নিরীক্ষণ আবেদন, তোলপাড়

বাঁশখালীতে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার (পিইসি) এক মেধাবী ছাত্র এ-প্লাস পাবার পরও ৪ বিষয়ে পুনর্নিরীক্ষণের জন্য অনলাইনে আবেদন করায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। ওই ছাত্রের ইংরেজি খাতা গায়েব হয়ে যাওয়ায় দুই পরীক্ষককে জেলা পুনর্নিরীক্ষণ কমিটিতে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এখনও খাতাটি উদ্ধার করতে পারেনি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা। আবেদনকারী বিষয়টি জানতে পেরে আবার লিখিত অভিযোগ করেছেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর।
সংশ্লিষ্ট উপজেলা শিক্ষা অফিস ও ভুক্তভোগী অভিভাবক সূত্রে জানা গেছে, বাঁশখালী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র মো. সাইয়ান মুনতাসির নিয়াদ ২০১৮ সালের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় (পিইসি) বাংলায় ৯২, ইংরেজিতে ৯৫, গণিতে ৯১, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়ে ৯৫, প্রাথমিক বিজ্ঞানে ৯৫, ধর্ম ও নৈতিকশিক্ষায় ৯০ সহ মোট ৫৫৮ নম্বর পেয়ে এ-প্লাস পায়। এতে তার বাবা মো. শাহজাহান সন’ষ্ট নন। তার দাবি, ছেলে ৬০০ নম্বর না পেলেও ৫৯৫ নম্বর পাবে। তাই তিনি অনলাইনে পুনর্নিরীক্ষণের জন্য আবেদন করেন ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও ধর্ম বিষয়ে। পুনর্নিরীক্ষণ কমিটি খাতা পুনর্নিরীক্ষণ করতে গিয়ে দেখতে পান, ওই ছাত্রের ইংরেজি খাতা গায়েব।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম মোস্তাক আহমেদ এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা পুনর্নিরীক্ষণ কমিটি বরাবরে ইংরেজি খাতার প্রধান পরীক্ষক দক্ষিণ নাপোড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. কচির উদ্দিন ও পরীক্ষক কানুনগোখীল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন পদোন্নতিপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই প্রতিবেদন পেয়ে উক্ত দুই শিক্ষককে জেলা পুনর্নিরীক্ষণ কমিটি তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
এ ব্যাপারে অভিভাবক মো. শাহজাহান বলেন, আমার ছেলেটি একটি কেজি স্কুলের মেধাবী ছাত্র ছিল। গত বছর বাঁশখালী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১১২ রোল নম্বরে তাকে ভর্তি করা হয়। ওই স্কুলের এক শিক্ষক নিজের সন্তানকে ভালো রেজাল্ট করিয়ে দেয়ার জন্য জালিয়াতি করে আমার ছেলের ফলাফল খারাপ করে দেয়। এমনকি খাতাও গায়েব করার চক্রান্ত করেছে। আমি বিষয়টি জেনে পরীক্ষার খাতা নিরীক্ষণের সময় বাঁশখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বেশ কয়েকবার গিয়েছি। ওখানে কোনো শিক্ষা কর্মকর্তা ছিলেন না। কতিপয় শিক্ষক যার যার মত করে খাতা টানাটানি করে খাতা মূল্যায়ন করেছেন। বিষয়টি দেখে আমি শংকায় ভুগি। পরীক্ষার ফলাফলেও দেখা গেছে, খারাপ অবস’া। তাই আমি ৪ বিষয়ে আবেদন করেছি। এরপর শুনছি আমার ছেলের ইংরেজি খাতা গায়েব। এজন্য অনলাইনের পরিবর্তে এবার লিখিত অভিযোগ করেছি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবরে। যাতে আমার ছেলের খাতাগুলো সঠিক মূল্যায়ন হয়। সঠিক মূল্যায়ন না হলে আমি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করব। অন্যথায় সব ছাত্রছাত্রীর খাতা পুনর্মূল্যায়নের জন্য হাইকোর্টে আবেদন করব। আমি চাই, দুর্নীতিবাজ শিক্ষকদের বিচার হোক। অবুঝ শিশুদের নিয়ে কেন এ শিক্ষকরা বাণিজ্য করবে ?
প্রধান পরীক্ষক মো. কচির উদ্দিন বলেন, ‘আমি খাতা নিরীক্ষণের পর উপজেলা শিক্ষা অফিসে মার্কশিটসহ জমা দিয়েছি। বিষয়টি এমন কেন হল জানি না।’ পরীক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমি জেলা কমিটিতে যা বলার লিখিত জানিয়েছি। খাতার ব্যাপারে আমি কিছু জানি না।’
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘ওই ছাত্রের ইংরেজি খাতাটি বহু খুঁজেছি, পাচ্ছি না। আবারও খোঁজা হবে। জেলা পুনর্নিরীক্ষণ কমিটিতে গিয়ে সশরীরে জবাব দিয়েছি।’
খাতাটি না পেলে কি করবেন ? জবাবে বলেন, ‘আইনগত ব্যবস’া নেয়া হবে। তবে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে কারো চাপ নেই।’
এ ব্যাপারে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নাসরিন সুলতানার মোবাইল ও টিএন্ডটি নাম্বারে বেশ কয়েকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে সহকারী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ঋষিকেশ শীল বলেন, ‘খাতা পুনর্নিরীক্ষণের জন্য ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি আছে। তারা বিষয়টি দেখছেন।’
/সুপ্রভাত!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ