দাওয়াতে তাবলিগের চলমান সংকট নিরসনে কতিপয় পরামর্শ

দাওয়াতের মেহনত দুশমনকে দুস্ত বানানোর মেহনত ছিল । কিন্তু কিছু অনিয়মের কারণে আপন লোকও পর হয়ে যাচ্ছে । তাবলীগের সাথীদের মনে রাখা উচিত এই বিপর্যয় আমাদের কারনে । এমতাবস্তায় অনিয়মগুলি চিহ্নিত করে সংশোধন না করা হলে আরো অবনতি হতে থাকবে ।

 বয়ানের অনিয়ম, 
কাজের হাকীকত না বোঝা এবং মানুষের কাছে সঠিক কাজ পেশ করার যতেষ্ট দুর্বলতা । 
শয়তান আমাদেরকে এই কথার সান্তনা দিয়ে রেখেছে যে, আমরা এ কাজ পরিপূর্ণ বুঝে গেছি ওলামায়ে কেরামের পরামর্শের প্রয়োজন হবে না । তা নিছক ভুল ধারণা! 

দাওয়াত নবুওয়াত-ই কাজ। সুতরাং নবভী কাজ ও এলমের ধারক- বাহক ওলামায়ে কেরাম। ওলামায়ে কেরাম বহির্ভূত বিচ্ছিন্ন দল বানিয়ে কোনোভাবেই এই কাজ গতিশীল হবে না, বিপর্যয় ছাড়া। দাওয়াতের মূল হাকিকত, হেকমত, এবং বছিরত সম্পর্কে পূর্ণ অবগত আমারা এখনো হয়নি ।
অনেকে দাওয়াতের ফযিলত বয়ান করতে গিয়ে দ্বীনের অন্য বিষয়কে ছোট নজরে দেখে! এই পদ্ধতি অনেক ক্ষতিকর ও ভয়ানক । তা পরিহার যোগ্য। 
বয়ানের পদ্ধতি তো এমন হওয়া চাই যে, প্রথমে ইলম ও ওলামায়ে কেরামের ইজ্জত-আজমতের এতো বেশি পরিমাণে বয়ান করা, যার ফলে আমাদের দিল ওলামাদের মহাব্বত দ্বারা ভর্তি হয়ে যায় ।
 কারণ ''আওয়াম ওলামা সে জোড়না ইস কাম কি বুনিয়াদি মাকসাদ হে'' , অর্থাৎ সাধারণ মানুষ ওলামাদের সঙ্গে জোড়া এই কাজের মূল উদ্দেশ্য ।
  সাধারন মানুষকে ওলামাদের পরিবেশে নিয়ে আসা এই কাজের মূল লক্ষ্য ।
 আল্লাহর রাস্তায় বের হয়ে ফাজায়েল শুনার দ্বারা ইলমের আগ্রহ সৃষ্টি হবে । ওলামাদের পরিবেশে এসে ইলাম শিখবে এবং তদানুসারে জীবন সাজাবে । অতএব ওলামাদের ভক্তি মোহাব্বত তাদের সঙ্গে সু-ধারণা রাখা অপরিহার্য । এই কাজের মধ্যে উলামাদের সাথে সংশ্রব ও তাদের রাহবারীর বিকল্প নেই । তাবলীগের সাথীগণ ওলামাদের সঙ্গে শ্রদ্ধা ভালবাসা বজায় রেখে তাদের কাছ থেকে জিজ্ঞাসা করে করে জীবন যাপন করলে বোঝা যাবে এই কাজের মূল লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও সাথীদের উন্নতি-অগ্রগতি । অন্যথায় আলেমদের সাথে অভক্তি শত্রুতা, কু-ধারণা , ছিদ্রান্বেষণ, গীবত ও দূরত্ব সৃষ্টি হতেই থাকবে।ফলে দাওয়াতের এই মোবারক কাজ অবনতির দিকে চলে যাবে। 

ভুলে গলে চলবে না!
  শত্রুরা দ্বীনকে খতম করার জন্য যে পাঁয়তারা চালাচ্ছে তার অন্যতম হলো আওয়াম কে ওলামাদের থেকে দূরে সরিয়ে রাখা । তাদের এই হীন স্বার্থ বাস্তবায়ন করতে পারলে ইসলাম ও মুসলমানদেরকে শেষ করার জন্য অন্য কোনো অস্ত্র ব্যবহার করতে হবে না । এর দ্বারা দ্বীন অচিরেই ধ্বংস হয়ে যাবে । ওলামাদের সঙ্গে কু-ধারণা সৃষ্টি হলে তাদের দোষ চর্চা -গীবতের রাস্তা খুলে যাবে, বিদ্বেষ এবং দূরত্ব সৃষ্টি হবে। ফলে মানুষ ওলামাদের থেকে দ্বীন গ্রহণ করবে না এর দ্বারা ইসলাম এবং মুসলমানদের বরবাদি ছাড়া আর কিছুই হবে না ।

অকারণেও যদি আমাদের ওপর ওলামায়ে কেরাম নারাজ হয় তারপরও আমাদের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। 

এক ব্যাক্তি ইমাম আবু হানিফা রহ.কে ধৈর্যের পরীক্ষা করার জন্য বলেছিলো হুজুর! 
আমি আপনার মাকে শাদী করতে চাই 
তিনি বললেন আমার মায়ের কাছ থেকে 
জিজ্ঞাসা করে আসি। 
 এরপর এসে তিনি দেখলেন লোকটি ওই জায়গাতে মৃত অবস্থায় পড়ে আছে! এই হল আলেমের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণের পরিণতি।

কোন ব্যক্তির অনুসরণ অনুকরণ করতে গিয়ে আল্লাহকে নারাজ করা হারাম। 
ব্যক্তিকে অনুসরণ করতে গিয়ে কুরআন-সুন্নাহ ও ওলামা বিদ্বেষী কর্ম কান্ড সংঘটিত- সংঘর্ষ হচ্ছে চলমান ফিতনার চরম শিকড়। 

এ সকল ফিতনামূলক কাজ পরিত্যাগ করে হক্কানী ও জমহুর ওলামাদের সাথে হাতে হাত রেখে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মেহনত করতে হবে । তাদের পরামর্শ অনুযায়ী কাজে জোড়তে হবে ।

 বিশেষ করে আলমী শোরার মাশওয়ারা অনুযায়ী মেহনত চালাতে হবে।   
সুতরাং জমহুর ওলামাদের সিদ্ধান্ত যদি মেনে নিতে না পারলে কস্মিনকালেও চলমান সংকট নিরসনে পথ দেখবে না।
 তাবলীগের প্রধান উদ্দেশ্য ;
আত্মশুদ্ধি, আত্মত্যাগ, পরিশুদ্ধ অন্তর, খোদাভিতি, বিনয়ী এবং নিজেকে মিটিয়ে দিয়ে চলা। 
যদি আত্মোৎসর্গ করতে হয় , প্রথমে নিজেকেই আত্মোৎসর্গ করতে হবে দাওয়াতের ময়দানে । 
 সাধারন থেকে সাধারণ মানুষের সামনে নিজেকে মিটিয়ে দিতে হবে। নিজের দাবী ও প্রবৃত্তিকে প্রধান্য না দিয়ে জমহুর ওলামাদের মত, পথ, সিদ্ধান্তকে মেনে নিয়ে নিজের মতকে উৎসর্গ করে ছোট ও বিনয়ী হয়ে যাওয়ার মধ্যে দিনের মহাবিজয়ী নিহিত রয়েছে। 
অন্যথায় ধ্বংস অনিবার্য।

 দীর্ঘদিন কাজ করতে করতে দিলের মধ্যে আত্মগৌরব -আত্মতুষ্টি আসা স্বাভাবিক বিষয়।
দিলের মরিচা দূর করে অহংকারের পথ পরিত্যাগ করে ওলামাদের সংশ্রবে থাকুন। অহংকার পথ বেছে নিয়ে চির অভিশপ্ত হয়েছে ইবলিস। আদম আ. বিনয়ী প্রকাশ করে চির প্রশংসিত হয়েছেন।

 টঙ্গির ময়দানে পহেলা ডিসেম্বর যে ঘটনা ঘটেছে তা অত্যন্ত নেক্কারজনক- হৃদয়বিদারক। 
এর জন্য আল্লাহর দরবারে মাফ চাওয়া এবং ওলামাদের কাছে ক্ষমা চাওয়া
সংকট নিরসনের অন্যতম উপায় ।  

লেখক:
 মুফতি সাঈদ আলী 
মুহাদ্দিস :আল জামিয়া ইসলামিয়া টেকনাফ। 
ইমাম-খতিব: অলিয়াবাদ(তাবলিগী মারকায) জামে মসজিদ, টেকনাফ, কক্সবাজার।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ