মল-মূত্র সঙ্গে নিয়ে দেশে ফিরলেন কিম

বিএন ডেস্কঃ
নিরাপত্তা বড় বালাই। কারণ তিনি এবং তার পদ দু’টোই ভীষণ দামি। তিনি মানে কিম জং উন এবং তার পদ অর্থাৎ কমিউনিস্ট উত্তর কোরিয়ার সর্বাধিনায়ক। এমনিতেই কাউকে বিশ্বাস করেন না তিনি। সর্বদা আশঙ্কা, তাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে এবং খুন করতে চক্রান্ত চলছে।
সন্দেহ, আমেরিকা, ইউরোপ, জাপান ও নিজের অধীনস্থ সেনাবাহিনীর একদল উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেনারেল তার বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের চক্রান্ত করছে। তাই নিজের চলাফেরা, খাওয়া-দাওয়া, গতিবিধি, রুচি-পছন্দ নিয়ে সবসময় রহস্যের ঘেরাটোপে থাকতে পছন্দ করেন তিনি। এহেন ব্যক্তি নিজের বাসভবনের বাইরে কোথাও পানি পর্যন্ত স্পর্শ করেন না। এমনকী নিরাপত্তার কারণে মল-মূত্র, থুতু ফেললেও তা নির্দিষ্ট টয়লেট বক্সে সংরক্ষিত করা হয়। তারপর তা নির্দিষ্ট জৈব-রাসায়ানিক প্রক্রিয়ায় নষ্ট করা হয় তার সুরক্ষিত প্রাসাদের অন্দরমহলেই।
উদ্দেশ্য, সর্বাধিনায়ক কিমের বর্জ্য পদার্থের নমুনা যেন কোনোভাবেই শত্রুদের হাতে না পড়ে। সিঙ্গাপুরের মহাবৈঠকে এসেও এই নিয়মের ব্যতিক্রম হয়নি। কিমের সঙ্গে থাকা মেডিক্যাল টিম সিঙ্গাপুরে কিমের যাবতীয় বর্জ্য পদার্থ নির্দিষ্ট বক্সে সংরক্ষণ করেছে। সবটাই এয়ার চায়নার বিশেষ কার্গো বিমানে কিমের সঙ্গে ফেরত যাবে উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ে। সেখানে তা জৈব-রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় নষ্ট করা হবে। উত্তর কোরিয়া চায় না কিমের মল-মূত্র, থুতু বা ঘামের কোনো নমুনা মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ-র হাতে যাক। আমেরিকা ছাড়া বিভিন্ন দেশের সিক্রেট এজেন্টরা এখন থিকথিক করছে সিঙ্গাপুরে।
কিমের বর্জ্য পদার্থের স্যাম্পেল শত্রুর হাতে যাওয়া মানে কিমের ‘ডিএনএ’ এবং তার শরীরে যাবতীয় খোঁজখবর শত্রুরা জেনে যাবেন। ফলে সিঙ্গাপুরে ট্রাম্পের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজে কিমের ব্যবহার করা চামচ, প্লেট, গ্লাস, টিস্যু পেপার যেখানে তার আঙুলের ছাপ বা মুখের লালার চিহ্ন রয়েছে সেগুলোও দেশে ফিরিয়ে যাবেন উত্তর কোরিয়ার সেনা গোয়েন্দারা।
কারণ, কিমের ডিএনএ-র নমুনা থেকে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে আরেকজন নকল কিম বা কিমের ‘ক্লোন’ তৈরি করা শত্রুদের কাছে পানিভাত। আমেরিকা, রাশিয়া বা ইউরোপের কোনো দেশ সেরকম কিছু যে করছে না, তাই’ই বা কে বলতে পারে? সেরকম কিছু হলে কিম ও উত্তর কোরিয়ার নিরাপত্তার পক্ষে অতি বিপজ্জনক হবে। তাই এসব নিয়ে কোনো ঝুঁকি নিতেই চায় না কিমের প্রশাসন।
কমিউনিস্ট একনায়ক কিম এ ব্যাপারে রোমানিয়ার নিকোলাই চাওসেস্কুর পথই অনুসরণ করেছেন। রোমানিয়ার কমিউনিস্ট একনায়ক চেসেস্কু একসময় এরকমই কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে থাকতেন। কিন্তু গণঅভ্যুত্থান ও সেনার গুলিতে নিজের অকাল মৃত্যু তিনি ঠেকাতে পারেননি।
কিম জং উন পৌঁছনোর আগেই পিয়ং ইয়ং থেকে পণ্যবাহী আইএল-৭৬ বিমান সিঙ্গাপুর পৌঁছে যায়। এই বিমানে অন্য জিনিসের মধ্যে কিমের ব্যক্তিগত টয়লেট বক্সও ছিল। এই টয়লেটে উত্তর কোরিয়ার সর্বাধিনায়কের বর্জ্য পদার্থ সংরক্ষণ করে তা দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিশেষ বন্দোবস্ত আছে বলে কোরিয়ার একটি নিউজ ওয়েবসাইটের দাবি।
এই পদ্ধতি অবশ্য পুরনো। ২০০৬ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লুউ বুশের অস্ট্রিয়া সফরের সময় মার্কিন সিক্রেট সার্ভিসের কর্মকর্তারা তার জন্য একটি টয়লেট বক্স সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন।
অনেকের মতে, অতীতে সিআইএ-সহ বিভিন্ন গুপ্তচর সংস্থা নানা দেশের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মল বা বর্জ্য থেকেও তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চালিয়েছে। যে কারণে ১৯৮৭ সালে ওয়াশিংটন সফরে গিয়ে মার্কিন সরকারের অতিথিশালার বদলে সোভিয়েত দূতাবাসে উঠেছিলেন মিখাইল গোরবাচেভ। ব্রিটিশ গুপ্তচর সংস্থা এমআই সিক্সও সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট গোরবাচেভের মল সংগ্রহের চেষ্টা করেছিল। এভাবেই গোপনীয় তথ্যাদি জানতে ইন্দিরা গান্ধীকেও টার্গেট করেছিল সিআইএ। ওই ভুল করতে চান না কিম।
আরো পড়ুন :
ট্রাম্প-কিম বৈঠকের সফলতায় চীনের সন্তোষ
রয়টার্স ও এএফপি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের মধ্যে সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত বৈঠককে ঐতিহাসিক আখ্যা দিয়ে এ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে চীন। কোরীয় উপদ্বীপে উত্তেজনা নিরসনে ‘পূর্ণাঙ্গভাবে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের’ আহ্বান জানিয়েছে দেশটি। পাশাপাশি উত্তর কোরিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা শিথিলেরও আহ্বান জানানো হয়েছে বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে।
মঙ্গলবারের এই বৈঠককে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিয়ে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই সাংবাদিকদের বলেন, সত্যিকার অর্থেই দুই নেতা একসাথে বসতে পেরেছেন, গুরুত্বপূর্ণ ও ইতিবাচক আলোচনা করেছেন এবং তারা নতুন এক ইতিহাস গড়েছেন।’
উত্তর কোরিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সমর্থক চীন। তবে সামরিক শক্তি প্রদর্শন নিয়ে পিয়ংইয়ংয়ের ওপর দেশটির ক্ষোভ রয়েছে। উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা অব্যাহত থাকার পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির বিরুদ্ধে জাতিসঙ্ঘের নিষেধাজ্ঞা জোরালো করার প্রস্তাবে অনুমোদন দেয় চীন। তবে বেইজিং বরাবরই বলে আসছে, নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি একটি রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করার জন্য আলোচনাও অব্যাহত রাখতে হবে। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, কোরিয়া উপদ্বীপের পারমাণবিক ইস্যুটির মূল বিষয় হলো নিরাপত্তা। এ নিরাপত্তা ইস্যুর সবচেয়ে জরুরি ও কঠিন অংশটি ছিল সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজতে যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়াকে মুখোমুখি আলোচনায় বসানো। ওয়াং ই বলেন, ‘এক দিক থেকে পারমাণবিক ইস্যুর সমাধান মানেই হলো পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ, পূর্ণাঙ্গ পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ। একই সময়ে উত্তর কোরিয়ার নিরাপত্তাজনিত যৌক্তিক উদ্বেগ নিরসনে কোরীয় উপদ্বীপের জন্য একটি শান্তিপ্রক্রিয়াও প্রয়োজন।’ এ দিকে বেইজিংয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উত্তর কোরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা শিথিলের ব্যাপারে জোর দেন চীনা পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র জেং শুয়াং।
তিনি বলেন, উত্তর কোরিয়াকে নিয়ে জাতিসঙ্ঘের দেয়া সব প্রস্তাবই কঠোরভাবে মেনেছে চীন। তিনি বলেন, ‘জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাস হওয়া প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, যদি উত্তর কোরিয়া জাতিসঙ্ঘ প্রস্তাবের সাথে সম্মতি রেখে কর্মকাণ্ড চালায়, তবে তার সাথে তাল মিলিয়ে নিষেধাজ্ঞামূলক পদক্ষেপও পরিবর্তন করা যেতে পারে। হতে পারে, নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করা কিংবা প্রত্যাহার করা। নিষেধাজ্ঞা আরোপকে লক্ষ্য বলে মনে করে না চীন। কোরীয় উপদ্বীপে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ নিশ্চিত করা এবং কোরীয় উপদ্বীপের জন্য রাজনৈতিক সমাধান বের করার প্রচেষ্টাকে নিরাপত্তা পরিষদের সমর্থন দেয়া প্রয়োজন।’

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ