বিএন ডেস্কঃ নগরীর সানশাইন গ্রামার স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী তাসফিয়াকে
পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন তার বাবা মোহাম্মদ আমিন।
তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই।’ তাসফিয়ার মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড হিসেবে
অভিহিত করে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন তিনি।
![](https://i.imgur.com/jISlqNe.jpg)
এ ব্যাপারে তাসফিয়ার বাবা মোহাম্মদ আমিন বলেন, ‘ওইদিন আদনান ফোন করে
আমার মেয়েকে বাসা থেকে বের করেছে। তারা এক সঙ্গে রেস্টুরেন্টেও গিয়েছিল।
আদনানই তার সহযোগীদের সহায়তায় এ ঘটনা ঘটিয়েছে।’ আদনানের সহযোগীদের গ্রেফতার
করে জিজ্ঞাসাবাদ করার দাবি জানান তিনি। আদনানকে এ ঘটনার জন্য দায়ী করে
তিনি আরও বলেন, ‘আমার সঙ্গে কারো শত্রুতা নেই। কারো সঙ্গে আমার কখনও দুই
কথা হয়নি। আমার মেয়ের মৃত্যুর পেছনে আর কোনও কারণ থাকতে পারে না।’
![](https://i.imgur.com/jISlqNe.jpg)
![](https://i.imgur.com/jISlqNe.jpg)
এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামি ফিরোজ ও আসিফ মিজানের সঙ্গে কোনও
দ্বন্দ্ব ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি তাদের চিনতাম না। ঘটনার পর
আদনানকে ডেকে আনলে তারা তাকে ছাড়ানোর জন্য আসে। ওই দিন প্রথমে মিজান, পরে
ফিরোজ আদনানকে ছাড়ানোর জন্য আসে। তখন তাদের সঙ্গে কথা হয়। এর আগে আমি কখনও
তাদের দেখিও নাই।’
আদনানকে সন্দেহ করার কারণ হিসেবে তাসফিয়ার বাবা মোহাম্মদ আমিন বলেন,
‘মঙ্গলবার সন্ধ্যায় যখন তাসফিয়াকে আমরা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। তখন তার এক
বন্ধুর মাধ্যমে জানতে পারি- সে আদনানের সঙ্গে রেস্টুরেন্টে গিয়েছে। পরে
আমরা কৌশলে আদনানকে ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে তাসফিয়াকে নিয়ে বের হওয়ার
বিষয়টি স্বীকার করে। আমরা তার মোবাইলে মেসেজ আদান প্রদানের বিষয়গুলো
দেখি।’
![](https://i.imgur.com/jISlqNe.jpg)
মোহাম্মদ আমিন আরও বলেন, ‘সম্ভাব্য সকল আত্মীয়-স্বজনের বাসায় খোঁজ খবর
নিয়ে তাসফিয়াকে না পেয়ে আমরা আদনানকে ডেকে এনে বসিয়ে রাখি। তাকে তার
অভিভাবকদের ফোন করে ডাকতে বলি। কিন্তু সে কোনভাবেই তার অভিভাবকদের আনতে
রাজি হননি। সে ফোন করে ফিরোজ ও মিজানকে নিয়ে আসে। তারা আমার মেয়েকে এনে
দেবে বলে আদনানকে ছাড়িয়ে নেয়।’
![](https://i.imgur.com/jISlqNe.jpg)
তাসফিয়ার মোবাইল ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তাসফিয়ার কাছে
একটা মোবাইল ছিল। গেমস খেলার জন্যই মূলত তাকে মোবাইলটা দেওয়া হয়। আমরা
তাকে কোনও সিম কার্ড কিনে দিইনি। কিন্তু ঘটনার দিন আমরা জানতে পারি, আদনান
তাকে একটা এয়ারটেল সিম কিনে দিয়েছে। ওই সিম কার্ডের মাধ্যমে তারা দু’জন একে
অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ করতো।’
![](https://i.imgur.com/jISlqNe.jpg)
তাসফিয়ার বাবার অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে আদনানের চাচা সোহেল
মির্জা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের ছেলেকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হচ্ছে।
ওই দিন রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে সন্ধ্যা ৭টার দিকে আদনান পশ্চিম খুলশিতে
তার ফুফুর বাসায় যায়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তাসফিয়ার বাবা ফোন করলে
তাসফিয়াদের বাসায় যায়। রাত ১১টা পর্যন্ত তাসফিয়ার বাবার সঙ্গে থাকার পর
সাড়ে ১১টার দিকে সে বাসায় ফিরে আসে। যেখানে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত আদনান তো
ব্যস্তই ছিল। তাহলে সে এ ঘটনার সঙ্গে কীভাবে জড়িত থাকে?’
তিনি আরও বলেন, ‘তাসফিয়ার বাবা টেকনাফ থেকে মালামাল এনে ব্যবসা করেন। তার
বিরুদ্ধে অবৈধ ব্যবসার অভিযোগও আছে। তার বিরুদ্ধে থানায় মাদক পাচারের মামলা
আছে। ব্যবসায়িক কোনও ঝামেলা নিয়ে তৃতীয় কোনও পক্ষ তাসফিয়াকে হত্যা করে
থাকতে পারে।’ আদনানকে নির্দোষ দাবি করেছেন তার চাচা সোহেল। ঘটনার সুষ্ঠু
তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
![](https://i.imgur.com/jISlqNe.jpg)
এদিকে তাসফিয়ার মরদেহ উদ্ধারের পর বৃহস্পতিবার (৩ মে) দুপুরে আদনানকে
প্রধান আসামি করে ছয়জনের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন তাসফিয়ার
বাবা মোহাম্মদ আমিন। মামলার অপর আসামিরা হলেন- সোহায়েল, শওকত মিরাজ, আসিফ
মিজান, ইমতিয়াজ সুলতান ইকরাম ও ফিরোজ।
আসামিদের মধ্যে ফিরোজ নগরীর মুরাদপুর এলাকায় থাকেন। পুলিশ জানিয়েছে,
নিজেকে যুবলীগ নেতা দাবি করা ফিরোজ এক সময় ‘ভারতে বন্দি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত
শিবির ক্যাডার’ সাজ্জাদের সহযোগী ছিলেন। তার নামে নগরীর পাঁচলাইশ থানায়
অস্ত্র মামলা রয়েছে। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি এবং ২০১৩ সালের জুলাই মাসে
অস্ত্রসহ দু’বার পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। ২০১৫ সালে জেল থেকে বের হয়ে
যুবলীগের কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হয় ফিরোজ।
![](https://i.imgur.com/jISlqNe.jpg)
ফিরোজের সঙ্গে আদনানের পরিচয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে আদনানের চাচা সোহেল
মির্জা বলেন, ‘আদনান তার বন্ধু সোহায়েলের মাধ্যমে তার সঙ্গে পরিচিত হয়। এর
চেয়ে বেশি কিছু তার বিষয়ে আমরা জানি না।’
অন্যদের মধ্যে শওকত মিরাজ ও আসিফ মিজান সানশাইন গ্রামার স্কুলের নবম
শ্রেণিতে পড়ে। ইমতিয়াজ সুলতান ইকরাম আশেকানে আউলিয়া ডিগ্রি কলেজের এইচএসসির
ছাত্র এবং সোহায়েল ওরফে সোহেল পরিচিত ফিরোজের সহযোগী হিসেবে।
![](https://i.imgur.com/jISlqNe.jpg)
উল্লেখ্য, বুধবার (২ মে) সকালে নগরীর পতেঙ্গার ১৮ নম্বর ব্রিজঘাটে
কর্ণফুলী নদীর তীরে লাশ দেখে পুলিশকে খবর দেয় স্থানীয়রা। পুলিশ ঘটনাস্থলে
গিয়ে অজ্ঞাত পরিচয়ে মরদেহটি উদ্ধার করে। পরে লাশের ছবি সামাজিক যোগাযোগ
মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে পরিবারের লোকজন থানায় গিয়ে জানায়- মরদেহটি তাসফিয়া
আমিনের।
তাসফিয়া নগরীর সানশাইন গ্রামার স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী। তাদের
গ্রামের বাড়ি টেকনাফের ডেইলপাড়া এলাকায়। সে পরিবারের সঙ্গে নগরীর ওআর নিজাম
আবাসিক এলাকার তিন নম্বর সড়কের কেআরএস ভবনে থাকত। এক মাস আগে ফেসবুকের
মাধ্যমে তার সঙ্গে আদনানের পরিচয় হয়। বিস্তারিত আসছে…
/বাংলা২৪ঘন্টা
0 মন্তব্যসমূহ