বাঁশখালী রোডে উন্নত বাস সার্ভিস ও যাত্রী সেবার মানোন্নয়নে সকলে সোচ্চার হোন



চট্টগ্রাম পটিয়া-আনোয়ারা-বাঁশখা­লী (পিএবি) সড়ক গুলোতে চলাচলকারী বাস ও সিএনজি অটোরিক্সার অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ, সরকার নির্ধারিত নিয়ম অনুসারে ভাড়া আদায়, উন্নতমানের বাস সার্ভিস চালু করা, পরিবহন ব্যবস্হার নৈরাজ্য ও বাস স্টাফদের অভদ্র ব্যবহারে সাধারন যাত্রীদের পরিত্রাণ করার দাবিতে বাঁশখালী সকল মিডিয়াকর্মীদের তত্ত্বাবধানে উপজলের সর্বস্হরের সাধারন জনগনের উদ্যোগে আগামী (৩১ মে) বৃহস্পতিবার বিকাল ৩ টায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মহোদয়ের মাধ্যমে যোগাযোগ ও সেতুর মন্ত্রীর বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করা হবে।
সড়কটি এখন অনেক উন্নত একটি আঞ্চলিক মহাসড়ক। এই সড়কের প্রায় সকল সেতু নুতন করে তৈরি করা হয়েছে। পুরো রাস্তা বিটুমিনের কার্পেটিং করা। কিন্তু রাস্তার এই সুবিধা যাত্রীরা ভোগ করতে পারছেন না মান্ধাতার আমলের লক্কর-ঝক্কর বাস সার্ভিসের কারণে।
এই রাস্তায় মুড়ির টিন মার্কা বাসগুলো সরকারের নির্ধারিত হারের চাইতে বেশিই ভাড়া নিয়ে থাকে। কিন্তু নিজেদের সার্ভিস ক্রমাগত নি¤œমুখী করতেই তাদের যত তৎপরতা।
এখানে বিরতিহীনের নামে রাস্তায় রাস্তায় যাত্রী উঠানো-নামানো নিত্যকার দৃশ্য। বাসগুলোর বসার সিট একেবারেই অপ্রশস্ত, অধিকাংশ বাসের জানালার গ্লাস ভাঙা, বাসে জোর-জবরদস্তি করে ২৪ সিটের জায়গায় ৩৬-৪২ সিট বানানো হয়েছে।
বাসের কনডাকটর ও চালকের ব্যবহারও প্রায়সই ভদ্রতার মাত্রা ছাড়ায়। এতসব বিড়ম্বনা নিয়েও যাত্রীরা এই বাসসার্ভিসের মাধ্যমেই সিলেট যেতে বাধ্য হচ্ছেন বিকল্প কোন পরিবহন সুবিধা না থাকার কারণে। দেশের অন্য সড়কগুলোতে যাত্রী সেবা নিয়ে প্রতিযোগিতা আছে। ওই সড়কগুলোতে যাত্রী সেবার মানোন্নয়নে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন সুবিধা সংযোজন করা হয়। কিন্তু চট্টগ্রাম পিএবি সড়কে বাস মালিকদের মর্জি অনুযায়ী চলতে হয় যাত্রী সাধারণের।
এই অবস্থার আশু পরিবর্তন কাম্য। আগে যখন সাতকানিয়া হয়ে শহরে ও রাস্তার অবস্থা খারাপ ছিল, সেতুগুলো ছিল অপ্রশস্ত ও ঝূঁকিপূর্ণ, তখন বাস মালিকরা ভাল বাস না নামানোর পিছনে রাস্তার এই বেহাল দশাকে সামনে নিয়ে আসতেন।
এখন যখন রাস্তা আধুনিক হলো তখন তারা মুখে কুলুপ এঁটে বসে রয়েছেন। ফলে যাত্রীদের রাস্তায় নামতে হচ্ছে।
আমরা জানি না সচেতন বাঁশবাসীবাসী যাত্রী সেবার মানোন্নয়নে যে দাবি জানিয়েছেন এ সড়কের বাস মালিকরা তা কতোটা আমলে নিবেন।
আমাদের মনে হয় তারা এই দাবি দাওয়ার বিষয়টি আপাতত কানে ঢুকাবেন না। কারণ যতদিন পরিত্যক্ত ও অকেঁজো পরিবহন দিয়ে ব্যবসায় পরিচালনা করা যায় ততদিনই তাদের লাভের অংক ভাল থাকবে।
এই সুবিধা তারা সহজে ছাড়তে চাইবেন না। এখানে তাই মধ্যস্ততা করার মতো একটি পক্ষকে সামনে আসতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারই সবচাইতে ভাল ভূমিকা রাখতে পারেন। নতুবা বাস সার্ভিসকে প্রতিযোগিতার মধ্যে ছেড়ে দিতে হবে। যদি নতুন মালিক নতুন বাস নামানোর সুযোগ পান এবং এক্ষেত্রে বর্তমান মালিক সংগঠন কোন ব্ধাা আরোপ করতে না পারেন, তাহলে আমাদের বিশ্বাস অচিরেই এই রাস্তায় মানসম্মত বাস আসবে।
আমরা অর্থনীতির দর্শন হিসাবে মুক্তবাজার অর্থনীতিকে গ্রহণ করেছি। কিন্তু বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর ব্যত্যয় চোখে পড়ার মতো নিয়ন্ত্রিত ও দখলদারিত্বের আকার ধারণ করে। সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের পরিবহন খাতটি এর অন্যতম উদাহরণ।

বাঁশখালীর কিছু সচেতন মানুষ যাত্রী সেবার মানোন্নয়নের যে আকাক্সক্ষা ব্যক্ত করেছেন সেটিকে সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে।
মানুষের সাধারণ চাহিদা যখন এক জায়গায় বিশালতা ধারণ করবে তখন সমাধানের পথ উদ্ভাবনে বাধ্য হবেন সংশ্লিষ্টরা।
সংগঠিত পরিবহন ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের সাথে অসংগঠিত ও বিচ্ছিন্ন যাত্রীদের এই দ্বৈরথ কঠিন জানি, কিন্তু এর বাইরে আর কোন পথ খোলা নেই।
তাই সকলের প্রতি আমাদের আহ্বান, বাঁশখালী সড়কে ভাল বাস সার্ভিস চালু করা ও যাত্রী সেবার মান উন্নত করতে সকলে যার যার সাধ্য মতো আওয়াজ তুলুন।
তাতে টনক নড়বে সরকারের, টনক নড়বে বাস মালিকদের। জনসাধারণকে ভাল সড়কের সুবিধা ভোগ করতে এইটুকু ব্যবস্থা করা উচিত সরকার ও পরিবহন ব্যবসায়ীদের।

লেখক: সাংবাদিক মোহাম্মদ ছৈয়দুল আলম
সদস্য সচিব: বাঁশখালী যাত্রী কল্যাণ ফোরাম।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ