বেড়িবাঁধের কাজ অসম্পূর্ণ ছনুয়ায় ঠিকাদারকে পাউবো’র নোটিশ

বি,এন ডেস্কঃ
বাঁশখালী উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাস থেকে মানুষের জীবন রক্ষার্থে ২৫১ কোটি ২৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৩৪টি প্রকল্পের বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ হবে আগামী অর্থ বছরের জুন মাসে। ইতিমধ্যে ২১০ কোটি টাকা ঠিকাদারকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। কাজের ধীরগতিতে ছনুয়া এলাকায় বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ অসম্পূর্ণ থাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স মশিউর রহমান কে কারণ দর্শানোর জন্য নোটিশ প্রদান করেছে। সরকারিভাবে ২০১৫ সালের মে মাস থেকে বেড়িবাঁধের নির্মাণ কাজ শুরু করে ২০১৮ সালের জুন মাস পর্যন্ত এই কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠিকাদারদের কাজ শেষ করতে আবারো বছর সময় বেঁধে দিয়েছেন। তবুও কিছু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাজের ধীরগতি থাকায় এলাকায় জোয়ারের পানি প্রবেশের আশংকা রয়েছে। এদিকে ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাসের কবল থেকে মানুষকে বাঁচানোর জন্য উপজেলা প্রশাসন থেকে সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রস্তুতি নিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম এমপি গতকাল ২৪ এপ্রিল বাঁশখালী প্রশাসনিক কর্মকর্তা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় যোগদান ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি মহড়া পরিদর্শন করেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাঁশখালী উপকূলীয় ৬টি ইউনিয়নে ১৯৯১ সালে ঘূর্ণিঝড় পরবর্তীতে ২০১৫১৬ সালে রোয়ানু মোরার আঘাতে বেড়িবাঁধের ব্যাপক ক্ষতি হয়। মানুষের জীবন রক্ষার জন্য সরকারিভাবে বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য ২৫১ কোটি ২৯ লক্ষ ৮৬ হাজার টাকা ব্যয়ে এই বাঁধের ঢাল সংরক্ষণ পুনরাকৃতিকরণ .৯০০ কিলোমিটার, নদী তীর সংরক্ষণ কাজ .৮৪৮ কিলোমিটার, বাঁধ পুনরাকৃতিকরণ .০০০ কিলোমিটার কাজ করা হবে। ৬টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ৩৪টি প্যাকেজে বাঁশখালীর উপকূলীয় বেড়িবাঁধের কাজ পায়। তার মধ্যে সর্বোচ্চ কাজ পায় হাছান এন্ড ব্রাদার্স ২০ প্যাকেজ, মেসার্স আরাধনা এন্টারপ্রাইজ ২টি, মোস্তফা এন্ড সন্স ২টি, নিয়াজ ট্রেডার্স ২টি, আলম এন্ড ব্রাদার্স ১টি প্যাকেজের কাজ পায়। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানদেরকে ২০১৫ সালের মে মাসে কাজ শুরু করার জন্য নির্দেশনা দিলেও তারা কাজ শুরু করে ২০১৬ সালের শেষ দিকে। বাঁশখালীর সাধনপুর ইউনিয়নের ২১৭৯ মিটার নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ পায় হাছান এন্ড ব্রাদার্স।
এদিকে পুকুরিয়া ইউনিয়নের ১২৬৯ মিটার নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধের ৮শ মিটার কাজ পায় হাসান ব্রাদার্স, ৪৬৯ মিটার নিয়াজ ট্রেডার্স। খানখানাবাদ এলাকায় ৪শ মিটার তীর সংরক্ষণ বাঁধের কাজ পায় হাসান ট্রেডার্স এবং হাজার ৫শ মিটার বাঁধের কাজ পায় হাছান ব্রাদার্স। গন্ডামারায় ১৪শ মিটারের মধ্যে ৯শ মিটার কাজ পায় আরাধনা এন্টারপ্রাইজ এবং ৫শ মিটার পায় মশিউর রহমান চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ। অপরদিকে ছনুয়া ৩২০০ মিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজের মধ্যে ২৩শ মিটার মশিউর রহমান এন্টারপ্রাইজ এবং ৯শ মিটার পায় মোস্তফা এন্ড সন্স।
জানা যায়, বাঁশখালী উপকূলীয় বেড়িবাঁধে ১৭ লক্ষ হাজার ৪৭১টি ব্লক বসানো হবে। জিও ব্যাগ তৈরি করা হবে লক্ষ ৭৮ হাজার ১৫৭টি। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বেড়িবাঁধ তৈরিতে কাজের মধ্যে বাঁধের তলদেশে দৈর্ঘ্য ১৫০ ফুট, প্রস্থ ১৪ ফুট, উচ্চতা ১৮ ফুট করে কাজ করার কথা রয়েছে। তবে কাজের মান নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে।
বাঁশখালী উপকূলীয় ছনুয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা আবুল হাছান, মো. হারুন, আবু তাহের জানান, ছোট ছনুয়া, ছনুয়ার টেক খদুকখালী লঞ্চঘাট এলাকায় . মিটার উচ্চতায় বেড়িবাঁধ তৈরির কথা থাকলেও বেড়িবাঁধ সংলগ্ন স্থান থেকে স্কেভেটার দিয়ে মাটি তুলে ধানি জমির আইলের মত বেড়িবাঁধ তৈরি করা হচ্ছে। যা জলোচ্ছ্বাসের উত্তাল ঢেউ আসার সাথে সাথে বাঁধ ভেঙ্গে হাজারো মানুষের মৃত্যুর আশংকা রয়েছে। ছনুয়া এলাকায় ১৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৬০ হাজার মানুষের বসবাস।
ইউপি সদস্য মাহবুব আলম বলেন, সাগরের কিনারে বসবাসকারী হাজার হাজার মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। রোয়ানু মোরার আঘাতে এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়। অরক্ষিত বেড়িবাঁধে ছনুয়ার মানুষ আতংকের মধ্যে বসবাস করছে। ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাস হলে জোয়ারের পানি হু হু করে লোকালয়ে ঢুকে পড়বে।
ছনুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ বলেন, ছনুয়া এলাকায় ১১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। ছনুয়ার টেক, ছোট ছনুয়া, চেমট খালী, হাবাখালী, উত্তর ছনুয়া, খুদুকখালী এলাকার লোকজন বেড়িবাঁধের কাজ শেষ না হওয়ায় আতংকের মধ্যে বসবাস করছে। বেড়িবাঁধ সংলগ্ন বসতবাড়ির লোকজন সবচেয়ে বেশি আতংকিত। বড় ধরণের জলোচ্ছ্বাস উঠে শত শত পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মাণাধীন বেড়িবাঁধের কাজগুলো ধীর গতিতে চলছে। খানখানাবাদ ইউনিয়নে গত বছর ব্লক বসানো কি.মি. স্থানের বিভিন্ন অংশে ধ্বসে পড়েছে। কদমরসুল এলাকায় বাঁধের উপর ব্লক বসানো জন্য নি¤œমানের ইটের খোয়া ভাঙ্গা হচ্ছে। ছনুয়া লঞ্চ ঘাট এলাকায় পুরাতন ভাঙ্গা বেড়িবাঁধের উপর মাটি ফেলে জোয়ারের পানি ঠেকানোর জন্য মাটি ফেলে ধানি জমির আইলের মত বাঁধ তৈরি করা হয়েছে। এদিকে সাধনপুরে শঙ্খ ভাঙ্গন থেকে রক্ষা করার জন্য বালি ভর্তি জিও ব্যাগ পানিতে ফেলা হচ্ছে। ছনুয়া কুতুবদিয়া ঘাটের দক্ষিণ অংশে ঠিকাদারী কাজ করছেন মোস্তফা এন্ড ব্রাদার্স। উত্তর অংশে মেসার্স মশিউর রহমান। কাজগুলো ধীর গতিতে চলছে।
ছনুয়া অংশে দায়িত্বে থাকা উপসহকারী প্রকৌশলী মঞ্জুরুল আলম বলেন, ছনুয়া এলাকায় ব্লক নির্মাণের কাজ শেষ। বাঁধের উপর মাটি ফেলার কাজ চলছে। দেরীতে কাজ শুরু হওয়ায় কিছুটা সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এজন্য ঠিকাদারকে জরুরি ভিত্তিতে কাজ সম্পন্ন করার জন্য বলা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী . . জুলফিকার তারেক বলেন, বাঁশখালী উপকূলীয় ছনুয়া এলাকার ৪টি প্যাকেজের কাজের জন্য ঠিকাদারকে নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। তাদেরকে কাজের মান বজায় রাখার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। বর্তমানে যে সমস্ত এলাকায় বেড়িবাঁধের কাজ চলছে তদারকিতে টাস্কফোর্স দলের প্রতিবেদনের উপর ঠিকাদারকে অর্থ ছাড় দেয়া হচ্ছে। বাঁধের নির্মাণ কাজের মধ্যে অনিয়মগুলো তদারকি চলছে। সাধনপুর এলাকায় তীর সংরক্ষণের জন্য জিও ব্যাগভর্তি বালি ফেলা হচ্ছে
সুত্রঃ দৈনিক পূর্বকোণ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ