বাঁশখালীর ৩ জন ছাড়া জামিন পেলেন ১৩ শিক্ষকের ১০ জন

নিউজ ডেস্কঃ
প্রশ্নপত্রে বঙ্গবন্ধুকে অবমাননার অভিযোগে চট্টগ্রামের বাঁশখালী থানায় করা রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় গ্রেপ্তার ১৩ শিক্ষকের মধ্যে ১০ জনকে জামিনে মুক্তি দিয়েছেন আদালত। আজ মঙ্গলবার চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ মো. হেলাল চৌধুরী শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।

জামিন মঞ্জুর হওয়া ১০ শিক্ষক হলেন মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি বোয়ালখালী উপজেলার সভাপতি মো. আলী, সাধারণ সম্পাদক আমীর হোসেন, আনোয়ারার সভাপতি আবুল কালাম, সাধারণ সম্পাদক বাদল দাশ, পটিয়ার সভাপতি মো. ইউসুফ, সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দে, সাতকানিয়ার সভাপতি অজিত কারণ, সাধারণ সম্পাদক ওয়াইজ উদ্দিন এবং চন্দনাইশ উপজেলার সভাপতি বিজন ভট্টাচার্য ও সাধারণ সম্পাদক এ এইচ এম সৈয়দ হোসেন। ১৩ শিক্ষকের মধ্যে নয়জন প্রধান শিক্ষক, চারজন সহকারী শিক্ষক।
আর যে তিনজনের জামিন মঞ্জুর হয়নি. তাঁরা হলেন বাঁশখালীর বঙ্গবন্ধু উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক দুকুল বড়ুয়া, মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি বাঁশখালীর সভাপতি তাহেরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মিয়া। গত ২৩ আগস্ট থেকে তাঁরা কারাগারে রয়েছেন।
গত বছরের জুলাই মাসে বাঁশখালীসহ চট্টগ্রামের ছয়টি উপজেলায় নবম শ্রেণির অর্ধবার্ষিক পরীক্ষায় ‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়’ বিষয়ের সৃজনশীল অংশের একটি প্রশ্নে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সহসভাপতি লিয়াকত আলীর কার্যক্রমকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তুলনা করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। গত বছরের এপ্রিল মাসে বাঁশখালীর গণ্ডামারা ইউনিয়নে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র–বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন লিয়াকত। ওই আন্দোলনে চারজন নিহত হন।
নবম শ্রেণির ওই পরীক্ষার এক দিন পর গত বছরের ১৯ জুলাই প্রথমে পুলিশের পক্ষ থেকে থানায় জিডি করা হয়। ওই দিনই দুজন শিক্ষক দুকুল বড়ুয়া ও তাহেরুল ইসলামকে বাঁশখালী থানার পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
আদালত সূত্র জানায়, শিক্ষক দুকুল বড়ুয়া ৪৯ দিন এবং তাহেরুল ১৫ দিন পর জামিনে মুক্তি পান। পরে মামলার আসামি শিক্ষকেরা উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেন। সেদিনই তৎকালীন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের নির্দেশে বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা করার অভিযোগে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটির সুপারিশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে ২২ নভেম্বর জিডিটি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হিসেবে গ্রহণ করে পুলিশ। মামলায় ১৩ শিক্ষককে আসামি করা হয়। তখনই তাঁরা উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেন। চলতি বছরের ১৪ জুন ১৩ শিক্ষককে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় গত ২৩ আগস্ট বাঁশখালীর বিচারিক হাকিম আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন তাঁরা। আদালত তাঁদের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান।
আসামিদের আইনজীবী শামসুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রশ্নপত্রের কোথাও বঙ্গবন্ধু এবং জাতির জনকের নাম ছিল না। এ ছাড়া বিএনপি নেতা লিয়াকতের নামও বলা হয়নি। গ্রেপ্তার ১৩ শিক্ষক মুক্তিযুদ্ধ সপক্ষের লোক। তারা কারও প্ররোচনায় কিংবা ইচ্ছেকৃতভাবে এই কাজ করেননি। শিক্ষকদের বিরুদ্ধে সাময়িক বরখাস্তসহ কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করা হয়েছে। এটি রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে পড়ে না। ১৩ শিক্ষক জামিনে গেলে পলাতক হবেন না। এ ছাড়া তাঁরা কারাগারে থাকায় পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।
আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জামিন শুনানিকালে আদালতকে বিষয়গুলো তুলে ধরে জামিনের আবেদন করা হয় বলে জানান শামসুল ইসলাম।

পরে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে জামিনের বিরোধিতা করে চট্টগ্রাম জেলা সরকারি কৌঁসুলি এ কে এম সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা করতে শিক্ষকেরা ইচ্ছাকৃতভাবে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে বিএনপির এক নেতার সঙ্গে তুলনা করেছেন।

উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত বিষয়টি বিকেলে আদেশের জন্য রাখেন। সরকারি কৌঁসুলি এ কে এম সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ১৩ জনের মধ্যে বাঁশখালীর তিনজন ছাড়া বাকি ১০ জনের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। তিনজনের জামিন কী কারণে মঞ্জুর হয়নি প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আদালতের লিখিত আদেশ পাওয়ার পর তা জানা যাবে।
জামিন মঞ্জুর না হওয়া শিক্ষক দুকুল বড়ুয়ার স্ত্রী লাভলী বড়ুয়া আজ বলেন, স্বামী কারাগারে। বেতনও বন্ধ। সন্তানদের নিয়ে কষ্টে দিন কাটছে। জামিন পেলে কোথাও পালাতেন না তাঁর স্বামী।
সূত্রঃ প্রথম আলো

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ