মোঃ মনছুর আলম (এম আলম): চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার বাহারছড়ায় কোরবানের পর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঈদ পূনর্মিলনী ও প্রীতি সমাবেশের ব্যানারে প্রকাশ্যে দলীয় সভা করেছে। শনিবার (১ জুলাই) বাহারছড়ায় আল রশিদ কমিউনিটি সেন্টার হলে এবং বাঁশখালী পৌরসভা এলাকায় খোলা আকাশের নিচে পৃথক ২টি সমাবেশ করেন জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ সহ জামাত-শিবিরের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। নির্বাচন কমিশনে দলটির নিবন্ধন বাতিল এবং উচ্চ আদালতে মামলা বিচারাধীন থাকা সত্ত্বেও জামায়াতে ইসলামীর ব্যানারে পরপর ২টি পৃথক সমাবেশের বিষয়ে বাঁশখালী থানা প্রশাসনের কর্তা হিসাবে ওসি মোঃ কামাল উদ্দিনের ভূমিকা এখানে নিষ্ক্রিয়।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুজ্জামান বলেন, "এমন সমাবেশের ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। ওসি সাহেবকে তদন্ত করার জন্য বলব।" পরে বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ কামাল উদ্দিনের মুঠোফোনে সংযোগ না পাওয়ায় থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সুধাংশু শেখর হালদার এর মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি বলেন, কোরবান ঈদের পর বাঁশখালীতে এধরণের কোন সমাবেশই হয়নি।
এই ব্যাপারে চটগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরে আলম মিনা জানান, তিনি নতুন যোগদান করেছেন তাই এই বিষয়ে অবগত নন বলে পুলিশ সুপারের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। পরে পুলিশ সুপারের মুঠোফোনে সংযোগ না পাওয়ায় আনোয়ারা-চন্দনাইশ-বাঁশখালী সার্কেলের এএসপি কামরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এমন সমাবেশের বিষয়ে তিনি অবগত নন এবং কোন অনুমতিও কেউ চায়নি।
এখানে দীর্ঘদিন পর এমন সভা করতে পেরে স্বস্তিতে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। আর এই সভা কিছুটা হলেও অস্বস্তি ও বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে খোদ আওয়ামী লীগের তৃনমূলের নেতাকর্মীদের। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি ও বাঁশখালী উপজেলা যুবলীগ নেতা আনিসুল হক চৌধুরী বলেন, প্রশাসন এসব ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করলে আমাদেরকে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। এছড়াও প্রশাসনের গোয়েন্দা রিপোর্ট নিয়েও প্রশ্ন তোলেন একাদিক আওয়ামী নেতাকর্মী।
এই ব্যাপারে জানতে বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী এমপিকে মুঠোফোনে প্রশ্ন করাকালীন সময়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। অপরদিকে সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুল গফুরের মুঠোফোনে একাধিক ফোন করা হলেও রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া যায়নি। এদিকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল্লাহ কবির লিটন জানান, প্রশাসনের সহযোগিতায় বাঁশখালী উপজেলায় গুনাগরি ও পুকুরিয়ায় জামায়াত ইসলামের ২টি সমাবেশ করতে দেননি। তবে বাহারছড়ায় অনুষ্ঠিত হওয়া সমাবেশের কথা ঐদিন রাতে জানতে পারলেও পৌরসভা এলাকায় অনুষ্ঠিত সমাবেশের বিষয়ে তিনি অবগত নন। এ বিষয়ে জানার জন্য বাঁশখালী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাজুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিক কল করা হলেও তিনি রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এই সমাবেশ ২টির বিষয়ে নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জামায়াতে ইসলামীর এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ও বাঁশখালীর সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক জহিরুল ইসলাম বলেন, তাদেরকে যেখানে যেখানে নিষেধ করা হয়েছে সেখানে সমাবেশ করেননি। আর পৌরসভা ও বাহরছড়ায় ঘরোয়াভাবে ২টি সমাবেশ সম্পন্ন করেন।
ইতিপূর্বে ঢাকায় অনুষ্ঠিত জামায়তের সমাবেশকে কেন্দ্র করে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে, নিবন্ধনহীন জামায়াত কীভাবে সমাবেশের অনুমতি পেল, তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ই বলতে পারবে; আইনমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, জামায়াত নিবন্ধিত কোনো রাজনৈতিক দল নয়। অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দল তাদের সভা-সমাবেশ ইনডোরে (ঘরোয়াভাবে) করতেই পারে। তবে বাঁশখালীতে জামায়াতের প্রকাশ্যে সমাবেশের পেছনে প্রশাসনের এমন উদাসীনতা রহস্যজনক বলে মন্তব্য করছেন আওয়ামী সমর্থকরা।
0 মন্তব্যসমূহ