পরিবহন নৈরাজ্যের কবলে অভিভাবকহীন বাঁশখালী

দক্ষিণ চট্টগ্রামের অবহেলিত এক জনপদের নাম বাঁশখালী। হরেকরকম সমস্যায় জর্জরিত এ জনপদের নিত্যকার সমস্যার একটি হচ্ছে পরিবহন সমস্যা। পিএবি (পটিয়া+আনোয়ারা+ বাঁশখালী) নিয়ন্ত্রিত বাস মালিক সমিতির যাচ্ছেতাই সিদ্ধান্তের বলি পুরো দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষ বিশেষ করে বাঁশখালীর মানুষ।
বাঁশখালী রুটে মূলত চার ধরণের বাস সার্ভিস চালু আছে- লোকাল সার্ভিস, স্পেশাল সার্ভিস,সুপার সার্ভিস এবং অস্পৃশ্য সার্ভিস। 

লোকাল সার্ভিসঃ
লোকাল সার্ভিস এর সেবারমান এর নাম দেখেই সহজেই অনুমেয়।যাচ্ছেতাই ভাড়া (ক্ষেত্রবিশেষে দেড়/দ্বিগুণ) চাওয়া,পুরো রাস্তাজুড়ে তাদের কাউন্টার বানানো, গাদাগাদি করে যাত্রী তোলা,যাত্রিদের সাথে চোখরাঙানি আর ঘাড়ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া ইত্যাদি তাদের রুটিনবাঁধা কাজ।যাত্রীরা অবশ্যই লোকাল সার্ভিস হওয়াতে তেমন একটা ভালো সার্ভিস আশা ও করেনা।মোটামুটি নীরব থাকে বললেই চলে। 

স্পেশাল সার্ভিসঃ
ঘন্টা দেড়েক কাউন্টারে অপেক্ষাশেষে টিকেট পাওয়ার পর যাত্রী ভাবে এই বুঝি ঝামেলা শেষ এবং নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌছতে পারবে।কিন্তু পরক্ষণে দেখে তার আশা গুঁড়েবালি। মিনিট বিশেক যেতে না যেতেই স্পেশাল সার্ভিসের মর্যাদা রক্ষা করতে গিয়ে মাত্র ৮/১০ জন যাত্রী বাসের হ্যান্ডেল ধইরা ঝুলানোর ব্যবস্থা করে।যাত্রীদের কেউ একজন প্রতিবাদ করতে গেলে হেল্পার ও ৮/১০ জন যাত্রী ঝুলিয়ে নেওয়ার অলিখিত বিধান আছে মর্মে জানিয়ে প্রতিবাদকারীকে শুধরিয়ে দেন।এ সময় অবশ্যই অন্য সহযাত্রীরা কখনও ভুলে ও উচ্চবাচ্য করবেনা। ওনারা বরং প্রতিবাদকারীর উপর বিরক্ত হবেন। অন্য সহযাত্রীদের নীরবতার সুযোগ নিয়ে হেল্পার ও প্রতিবাদকারীকে তিক্তবাণে জর্জরিত করবে।এতে করে প্রতিবাদকারীর প্রতিবাদী কণ্ঠ আস্তে আস্তে বাকরুদ্ধ কণ্ঠে পরিণত হবে। 

সুপার সার্ভিসঃ
কথিত আছে সান লাইন ও এস আলমের হুমকি মোকাবেলা করতে গিয়ে এই বিশেষ সার্ভিস চালু করা হয়েছে।পরিবহন সেবা ভালো তবে গাড়ির সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।এ সার্ভিস উচ্চমার্গীয় সমাজের চাহিদা লাঘবে কিছুটা হলেও অবদান রেখে চলেছে। 

অস্পৃশ্য সার্ভিসঃ
সানলাইন এবং সম্প্রতি চালু হওয়া এস আলম সার্ভিস মূলত অস্পৃশ্য সার্ভিস। এ বাসগুলো বাঁশখালীর বেহাল সড়কগুলোর উপর দাপিয়ে বেড়াবে কিন্তু বাঁশখালীর কোন যাত্রী ওঠাবেনা।কোন জনপদের মানুষের সাথে এর চেয়ে চরম উপহাস আর কিবা হতে পারে।
বিঃদ্রঃ বাঁশখালীর তথাকথিত মাটি ও মানুষের নেতা কদু,মধু, যদু এ সংকট সমাধানে অজানা কারণে নীরব।প্রশাসন ও মাছের মতো চোখখোলা রেখে ঘুমাচ্ছেন।
কেন জানি মনে হয় বাঁশখালী সত্যিই একটা দূর্ভাগা ও অভিভাবকহীন জনপদের নাম।

লেখকঃ
আনসার উদ্দিন,
সহকারী পরিচালক,
বাংলাদেশ ব্যাংক।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ