বাঁশখালীর উপকূলে লবণ উৎপাদনের ধুম

মুহাম্মদ মিজান বিন তাহেরঃ
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার উপকূলীয় অঞ্চলের অধিকাংশ লোকের জীবন ও জীবিকা নির্বাহ লবণ চাষের উপর র্নিভরশীল। শীতের মৌসুমে বাঁশখালীর উপকূলে চলছে লবণ উৎপাদনের ধুম। ভোরে সূর্য উঠার সাথে সাথে লবণচাষীরা মাঠ প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় দিচ্ছে। সকাল থেকেই সন্ধ্যাবধি বিরতীনভাবে মাঠে কাজ করে চাষীরা। 
গত অর্থ বছরে লবণের ব্যাপক হারে দাম পাওয়ায় চাষীরা এবারও লবণ উৎপাদনে উৎসাহ বেড়ে গেছে। ফলে চাষীরা ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে লবণমাঠ তৈরির দিকে ঝুঁকে পড়েছে। মজুদকৃত লবণ বিক্রির পাশাপাশি লবণমাঠ তৈরিরও ধুম পড়েছে।
বিগত দিনের লবণগুলো মজুদদাররা ৫-৬ টাকা কেজির লবণ এখন খুচরা বাজারে ১৫-২০ টাকার উপরে। পাইকারি বাজারও বেশ চড়া। হঠাৎ এই দাম বাড়ার ঘটনায় চাষীদের মুখে দেখা দিয়েছে হাসি। ভালো দাম পাওয়ায় লবণ চাষীরা এখন খুবই আনন্দিত। চাষীদের মজুদকৃত লবণ বিক্রির ধুম পড়েছে সর্বত্র।
বর্তমানে লবণ চাষীরা প্রতিমণ লবণ ৪শ থেকে ৫শ টাকায় বিক্রি করছে। দেশের কক্সবাজার এবং খুলনার পর চট্টগ্রামের একমাত্র বাঁশখালীতেই লবণ উৎপাদন হয়ে থাকে। বাঁশখালীতে ছনুয়া, গন্ডামারা, সরল, পশ্চিম মনকিচর, কাথরিয়া, খানখানাবাদ (আংশিক) এলাকার লবণ উৎপাদন হয়। চাষীরা মোটামুটি লবণের দাম পেলেও চাহিদা কম থাকায় বেশ কিছু লবণ ব্যবসায়ী লবণ মজুদ করে রাখে।
সম্প্রতি সময়ে এই লবণের দাম হঠাৎ করে বৃদ্ধি পাওয়ায় চাষীরা মজুদকৃত লবণ বিক্রির ধুম পড়ে গেছে তাদের মাঝে। গন্ডামারা ইউনয়িনরে র্পূব বড়ঘোনা ৮ নং ওর্য়াডরে লবন চাষী বদউিল আলম বলেন, আমি প্রতি বছররে মত এবারও ৩ কানি জমিতে লবন চাষ করেছি, প্রতি মন ৩০০ টাকা ধরে পাইকারি বিক্রি করি। আমাদের এখানে বিভিন্ন বড় বড় মিল কলকারখানার মালিক এসে পাইকারী দামে লবন ক্রয় করে সাগর পথে নিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে লবণ ব্যবসায়ী আনছুর আলী জানান, র্পূবের চেয়ে হঠাৎ করে লবণের দাম ৪শ থেকে ৫শ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পাওয়ায় চাষীরা তাদের মজুদকৃত লবণ চড়া দামে বিক্রি করছে। সামনে এই দাম স্থায়ী নাও পেতে পারে এই আশংকায় চাষীরা তাদের মজুদকৃত লবণ তড়িঘড়ি করে বিক্রি করে দিচ্ছে।
ছনুয়া এলাকার লবণ চাষী ইয়াছিন, মোজাফ্ফর, আরিফ, নুরু জানান, লবণের চাষ এবারো প্রতিবছরের ন্যায় খুব ভাল হয়েছে। সরকার যদি বাঁশখালীর উপকূলীয় এলাকায় উৎপাদিত এসব লবণ দেশের সর্বত্র রপ্তানিতে সহযোগিতা করেন তাহলে এখানকার লবণ চাষীরা আরো বেশি উপকৃত হবে। তারা এই লবণশিল্প রক্ষা এবং মানসম্মত লবণ উৎপাদনে সরকারকে আরো বেশি মনযোগী হওয়ার আহ্বান জানান।
এদিকে, অধিকাংশ লবণ চাষীরা জানান, সরকার যদি বাঁশখালী উপকূলীয় অঞ্চলের বৃহত্তম জনগোষ্ঠির জীবিকার একমাত্র মাধ্যম লবণ শিল্পকে দেশের সর্বত্র রপ্তানিতে সহযোগিতা করেন তাহলে এখানকার লবণ চাষীরা আরো বেশি উপকৃত হবে এবং ন্যায্য মূল্য পাবে। তারা এই লবণ শিল্প রক্ষা এবং মানসম্মত লবণ উৎপাদনে সরকারকে আরো বেশি মনযোগী হওয়ার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) বাঁশখালী উপজেলা কেন্দ্র প্রধান কে এম হাসিব আহসান বলেন, উন্নত পদ্ধতিতে সাদা দানাদার ও পরিপক্ব লবণ উৎপাদনে লবণ চাষীদেরকে উদ্যােক্তা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ আমরা দিয়েছি। সরকার চলতি মৌসুমে দেশে লবণ উৎপাদনে স্বয়ং সম্পুর্ণতা অর্জন করে বিদেশ হতে যাতে লবণ আমদানি করতে না হয় সে লক্ষ্যে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ৬০ হাজার একর জমিতে ১৮ লক্ষ মেট্রিক টন পরিশোধিত লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
'গত বছর আমাদের চাহিদা ১৬.৫০ লক্ষ মেক্টিকটন,উৎপাদন হচ্ছে ১২.১৩ লক্ষ মেক্টিকটন। এই বৎসর ২০১৯ -২০ অর্থ বছরে সাড়ে ১৮ লক্ষ মেট্রিকটন উৎপাদনের লক্ষ মাত্রা রয়েছে। গত বছর বাঁশখালীতে উৎপাদন হয়েছিল ২ লক্ষ ৩০ হাজার মেট্রিকটন, এই বছরে জমির অবস্থা ও তেমন ভাল না। এখন চাষীরা ভাল করে মাটে নামেননি বলে ও তিনি জানান।'
তিনি আরো বলেন, কালো লবণ উৎপাদনে লবণ মাঠ ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং লবণের সাথে মিশ্রিত কাদাদ্বারা মিল এলাকার নদনদী ক্রমান্নয়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। যা পরিবেশের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। কাজেই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে পলিথিন পদ্ধতিতে সাদা দানাদার ও পরিপক্ক লবণ উৎপাদনের মাধ্যমে দেশের লবণের চাহিদা পুরণ করার জন্য উদ্যোক্তা ও চাষীদের কে আমরা প্রশিক্ষন দেয়েছিলাম।
এ ব্যাপারে ছনুয়া ইউপির চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ বলেন, ছনুয়া এলাকার অধিকাংশ মানুষ লবন চাষ করে থাকে। যুগ যুগ ধরে আমার এই ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় এই লবণ চাষ করে থাকেন। এই ইউনিয়নটি লবণ শিল্প বল্লেও চলে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার যোগাযোগ ব্যবস্থা মোটামুটি স্বাভাবিক হওয়ায় লবণ চাষীদের লবণ বিক্রি করতে আর হিমসিম খাবে না।
/সিভয়েস/এসসি

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ