তারুণ্যের অহংকার তারেক রহমানের নিকট খোলা চিঠি

নিজস্ব সংবাদদাতা 
ছাত্রদলের পথের কাটা বিয়ে অতঃপর...
বিএনপির চেয়ারপার্সন, অাপোসহীন দেশনেত্রী অামাদের মা বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘ প্রায় ১. ৫ টি বছর কারাগারে, দল একটি কঠিন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে, ঠিক এই সময়ে খুব অালোচিত হচ্ছে, ছাত্রদল করতে হলে অবশ্যই অবিবাহিত হতে হবে ছাত্রত্ব থাক বা না থাক এবং এসএসসি সাল হতে হবে ২০০০ বা এর পরে, যা অনেকের নিকটই প্রশংসনীয় হচ্ছে। অাবার অামার মত যারা ছাত্রদল করার নিয়ত করে অনেকবছর বিয়ে না করেও সাম্প্রতিক সময়ে পরিবার ও পারিপার্শ্বিক হিসাবনিকাশে  বাধ্য হয়ে বা অনেকেই অনেক বছর অাগেই বিয়ে করেছে কিন্তু ছাত্রদলের একটা পদবীর বা স্বীকৃতির জন্য যারা জীবন, যৌবন, অর্থকড়ি, মামলা হামলার সম্মুখিন হয়েছে তাদের নিকট এই নীতিগুলো মানতে বা শুনতে বিষফোঁড়ার মত মনে হচ্ছে।
 তবে অামি বা অামরা যারা বিবাহিত অবশ্যই পুরোদমে ব্যাপারটিকে সমর্থন করতাম যদি এই নীতিটা ছাত্রদলের গঠনতন্ত্রে অন্তত ৩-৫ বছর অাগে থেকে যুক্ত করা হতো,  অগ্রীম বলে দেয়া হতো বর্তমান চলমান কমিটি ভেঙ্গে নতুন কমিটি করার সময়, একটা কমিটির অন্তত কমপক্ষে মেয়াদ ৩বছরের বেশী হয়, অর্থ্যাৎ গত কমিটি করার সময়ই যদি বলে দেয়া হত অাগামী কমিটিতে বিবাহিতারা স্থান পাবে না।যেভাবে করে অাজ থেকে ৩-৪ বছর অাগে থেকেই অালোচিত হচ্ছিলো এবারের কমিটিতে বয়সসীমা হবে ২০০০সাল বা তারপরে যারা এসএসসি পাশ করেছে তাদের দিয়ে।

একটা প্রশ্ন থেকেই যায়, যেখানে সরকারী দলে সকল সুযোগ সুবিধা বা গঠনতন্ত্রে উল্লেখ থাকার পরেও গত কয়েকদিন অাগের পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের কমিটিতে ৫৬ জনেরও বেশী বিবাহিত এবং শতাধিক অছাত্র, যদিও পরিপূর্ণ তদন্ত হলে এর সংখ্যা অারো অনেক বাড়বে, তাহলে বিরোধীদলে থেকেও এত কঠিন দুঃসময়ে এই শর্ত কেন? ( কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগও একই অভিযোগে অভিযুক্ত)। এখন কিছু প্রশ্ন রাখি, ২০০০সালে একটা ছেলে যদি এসএসসি পাশ করে তাহলে বর্তমানে তার বয়স হওয়া উচিত ৩৩-৩৬ বছর, ৩৩-৩৬ বছর বয়সেও কি একটা ছেলে বিবাহ না করে থাকতে পারে ( কিছু ব্যক্তিক্রম হতেই পারে, তা উদাহরণ হিসেবে দেখাবেন না)?, যদিও ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয়ভাবে ২১বছর বয়স হলেই যেকোন প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে বিয়ে করার অধিকার পায়, তাহলে অনেক ছেলে যারা ২১ বছর বয়স বা তার কয়েক বছরের মধ্যে বিয়ে করেছে, যারা হয়তো এখনো কলেজে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত ছাত্র হিসেবে পড়াশুনা ও ছাত্ররাজনীতি করার পূর্ণ সুযোগ অাছে বা করে কিন্তু শুধু বিবাহিত এই বৈষম্যমূলক নীতির কারণে ছাত্রদলের রাজনীতি করতে পারবে না, যা অবশ্যই ধর্মীয় বিধি নিষেধর সাথেও পূর্ণ সাংর্ঘষিক।তাহলে কি ছাত্রদল করতে হলে অাপনি ধর্মীয় বিধি নিষেধ কেও তোয়াক্কা না করে মোটামুটি ৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত অবিবাহিত থাকবেন!
অনেকে হয়তো যুক্তি দেখাবেন, কেন ছাত্রদল না করলে কি বিএনপির অন্য অঙ্গ সংগঠনে যুক্ত হওয়া যায় না?  তাদের নিকট অামার প্রশ্ন যে ছেলেটা ২১-২৭ বছর( নিয়মিত ছাত্র)  অবস্থায় পারিবারিক বাধ্যবাধকতায়  ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিয়ে করলো সে ছেলেটা কি কলেজে পড়া অবস্থায় যুবদল, শ্রমিকদল, স্বেচ্ছাসেবক দল করবে!  তাকে কি অাসলে অন্যঅঙ্গ সংগঠন গুলোতে পদে মূল্যায়ন করা হবে?
অার যে ছেলেটার বয়স ৩৩-৩৫ বছর, কিন্তু যেকোন কারণে হোক এখনো বিয়ে করেনি, শুধুমাত্র এই শর্ত বলবৎ থাকার বা মানার কারণে সেই ছেলেটা ছাত্রদল করতে পারবে তা কতটা যুক্তিযুক্ত হতে পারে ২৪ বছরের বিবাহিত নিয়মিত ছাত্র রাজনীতি করা ছেলেটাকে বঞ্চিত করার পিছনে! এছাড়াও এটা হয়তো নিশ্চিত করে বলা যায়, অনেক ছাত্রদল পদপ্রত্যাশী নেতাই হয়তো গোপনে বিয়ে করেছে বা বৌ বাচ্চা নিয়ে সংসারও করতেছে কারণ এসএসসি ২০০০ সাল এটি হয়তো সাটিফিকেট দেখে নিশ্চিত হওয়া যাবে কিন্তু কেউ যদি গোপনে বিয়ে করে গোপন রেখে সুখে শান্তিতে ঘর সংসার করে তা কিভাবে বের করবেন!
অার ছাত্রদলের পদ পাওয়ার পরে ঐ ছাত্রনেতা হয়তো তার প্রথম কাজই হবে বিয়ে করা বা অায়োজন করে বৌ তুলে অানা বা ফেইসবুকে বৌয়ের সাথে ছবি অাপলোড করা, তাই নয় কি?কারণ ৩৫বছর বয়সী একজন অবিবাহিত ছাত্রনেতা যদি ছাত্রদলের সভাপতি হয় তাহলে কমিটির মেয়াদ যদি গড়ে ৪বছরও হয়,কমিটি ভাঙ্গার সময় ঐ ছাত্রনেতার বয়স হবে প্রায় ৪০ বছর বয়স, তখন বিয়ে করা , তা বাংলাদেশের পেক্ষাপটে কতটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে?  অার শরীর ও মন বলতেও কিছু অাছে নাকি!
অার ছাত্রদল করার জন্য জানা প্রয়োজন ঐ ছাত্রনেতা দলের জন্য কতটা ডেডিকেটেড, শিক্ষাগত যোগ্যতা, কতটা ত্যাগ স্বীকার করেছে বা করতে প্রস্তুত, তার সাংগঠনিক দক্ষতা, কর্মী তৈরী করার ক্ষমতা ইত্যাদি বিষয়গুলো বিবেচ্য হওয়া উচিত, তা না করে কিসের ভিত্তিতে, কাদের ইঙ্গিতে ও হয়তো সিন্ডিকেটের ইশারায় সাংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদে প্রশ্নের উত্তরে ( হয়তো একক সিদ্ধান্তে) হঠাৎ করে বিবাহকে ইস্যু করে দলের কঠিন দুঃসময়ে বিবাহিত ও অবিবাহিতদের মুখোমুখি করে হঠকারী সিদ্ধান্তের ঘৃণ্য প্রচেষ্টা , যখন ছাত্রদলে ছাত্রদের অন্তভুক্তি একদমই নগণ্য। অামি চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের ইউনিটের এক নগণ্য কর্মী ও মহানগরের পদ প্রত্যাশী। মহানগরের রাজনীতির সাথে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত গুরুত্বপূর্ণ  পদ প্রত্যাশীদের মধ্যে কয়জনই বা অবিবাহিত প্রশ্নটা কিন্তু থেকেই যায়!  হয়তো পদ পাওয়ার পরে অনেকের বিবাহের তথ্য উদঘাটিত হবে তখন কি তাদেরকে অাবার পদ থেকে অব্যাহতি দিবেন!অাপনারা কাদের কে দিয়ে কমিটি করতে চাচ্ছেন ৩০-৩৫ বছরের অবিবাহিতদের দিয়ে! কয়জন পাবেন, বিবাহিত ইস্যু ধোয়া তুলে ত্যাগী, সাংগঠনিক, কর্মীবান্ধব ও কর্মট অনেককেই বাদ দিয়ে পারবেন কি এই কঠিন সময় পার করতে, অাশা করি ভেবে দেখবেন। অার বছরকে বছর ধরে ছাত্রদলের জন্য করা অামাদের ত্যাগ শ্রম সময় অর্থব্যয় ও কর্মী তৈরীর মূল্যায়ন কি?বছরকে বছর ধরে কমিটি না করার দরুণ,  কাজ করার পরেও মূল্যায়ন না পাওয়ায়, অামাদের অন্তরের অভিশাপ বা চোখের জল কি অাপনাদের কাজকে বাধাগ্রস্ত করবে না! অামার বা অামাদের অনেকের হাতে তৈরী করা শত শত ছাত্রদল কর্মী কি তাদের সিনিয়র নেতা বা অভিভাবকের অবমূল্যায়নে হত্যোদম হবে না, প্রশ্ন রাখলাম সবার বিবেকের কাছে!








ঢাকায় পুলিশের ক্রসফায়ারে নিহত ছাত্রদল নেতা জনি ভাই এছাড়াও চট্টগ্রামের নুরল অালম নুরু ভাইসহ অসংখ্য ছাত্রনেতা উনারা বিবাহিত থাকা অবস্থায় দলের জন্য উনাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। কথা দিলাম,অনেক অনেক অবিবাহিত ছাত্রদলের নেতাদের চেয়ে অামরা বিবাহিতরা অনেক বেশী দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিবো , ইনশাআল্লাহ। কারণ অামরা পরিবারের প্রতি দায়িত্ব নিয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি।

অাশা করি, তারুণ্যের অহংকার, অাগামীর রাষ্ট্রনায়ক, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ছাত্রদলের একক অভিভাবক জনাব তারেক রহমান ভাই অাপনার নিকট লেখাটি পৌছাবে এবং অাপনি লেখাটি পড়ে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে অনুধাবন করে, অনাকাংখিত ভাবে সামনে চলে অাসা সমস্যার অাশু সমাধানকল্পে দায়িত্বশীল কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশ প্রদান করবেন, বিবাহিত ও অবিবাহিত ইস্যুটিকে সামনে না এনে, ছাত্রদলের জন্য পরিশ্রমী,  যোগ্য, ত্যাগী, মামলা হামলায় নির্যাতিত, সাংগঠনিক দক্ষতা সম্পন্ন এবং শিক্ষাগত যোগ্যতাকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিবাহিত হোক বা অবিবাহিত হোক, যোগ্য ছাত্রনেতাদের সমন্বয়ে ছাত্রদলকে ঢেলে সাজাবেন। অার অামার রাজনৈতিক অভিভাবক, চট্টলার ছাত্রসমাজের নয়নমনি ও অাদর্শ, নগর বিএনপির সংগ্রামী সভাপতি জননেতা ডাঃ শাহাদাত হোসেন ভাইকে অামি কাছ থেকে ব্যাপারটি অবহিত করেছি এবং অাশা করছি অাপনার সাথে শ্রীঘই এই ব্যাপারে বিস্তারিত যোগাযোগ করে অাপনাকে অারো পরিপূর্ণ ধারণা দিবেন।তবে কথা দিলাম দলের বৃহত্তর স্বার্থে যেকোন কঠিন যৌক্তিক সিদ্ধান্ত মেনে নিবো, প্রয়োজনে প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ, অাপোসহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও দলের প্রয়োজনে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে সদা প্রস্তুত থাকবো।

সর্বপরি, দয়া করে লেখাটিকে কেউ ব্যক্তিগতভাবে নিবেন না এবং বিবাহিত ও অবিবাহিত ইস্যুটিকে কোন ভাবেই মুখোমুখি করবেন না। কারণ অামরা সবাই শহীদ জিয়ার অাদর্শের সৈনিক এবং গনতন্ত্র পুনরুদ্ধার সংগ্রামে রাজপথের যোদ্ধা। অাল্লাহ অামাদের সবার সহায় হোক এবং দেশবাসীকে সকল ধরণের বিপর্যয় থেকে রক্ষা করুক।

লেখক
এন মোহাম্মদ রিমন
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল,
চট্টগ্রাম মহানগর

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ