বাঁশখালীতে ইপসার দূর্যোগ পরবর্তী সুরক্ষা বিষয়ক পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত

মোহাম্মদ এরশাদঃ
জলবায়ুগত পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগে স্থানচ্যুত মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। ক্রমবর্ধমান প্রয়োজনীয়তা সত্ত্বেও স্থানচ্যুত মানুষের জন্য সাহায্য ও সুরক্ষার পরিমান দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। জলবায়ু স্থানচ্যুত মানুষদের পর্যাপ্ত বাসস্থান ও আশ্রয়স্থল পাবার অধিকার, মানবিক সহায়তা প্রাপ্তির অধিকার, ভূমির অধিকার, খাদ্য, পানি ও পয়:নিষ্কাশনের অধিকার, শিক্ষার অধিকার, স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসা সেবার অধিকার, স্বাধীনভাবে চলাচলের অধিকার এবং নিজের আবাসস্থল নির্ধারণের অধিকার থাকলেও বঞ্চনার শিকার হতে হয় অসহায় জলবায়ু স্থানচ্যুত মানুষেদের। এর ফলে তারা দারিদ্র্রের দুষ্টচক্রে স্থায়ী ভাবে বাঁধা পড়ছে। এই ধরণের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জন্য সামগ্রিকভাবে স্বেচ্ছার এবং পরিকল্পিত পুনর্বাসন এর বিকল্প নেই যাতে করে তারা ঝুঁকিপ্রবণ এলাকা থেকে দূরে কোন বসবাসযোগ্য স্থানে বাস করতে পারেন এবং সবরকমের মৌলিক চাহিদা পেতে পারেন।  এর জন্যে তাদের জীবিকা, সম্পত্তি, ভূমি এবং মানবিক অধিকার সমূহের নিশ্চিতকরনও জরুরি।

স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের জন্য ইপসার উদ্যোগে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় উপকূলীয় এলাকার জলবায়ু পরিবর্তন জনিত প্রাকৃতিক দুযোর্গে স্থানচ্যুত জনগোষ্ঠী: প্রয়োজন অধিকার ভিত্তিক সম্মিলিত উদ্যোগ বিষয়ক কর্মশালা আজ ১৫ জুলাই বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের  কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।

সাংবাদিক কল্যাণ বড়ুয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত কর্মশালায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা  মোমেনা বেগম প্রধান অতিথি হিসেবে তার বক্তব্য প্রদান করেন এবং স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন  ইপসার কর্মসূচি সমন্বয়ক প্রবাল বড়ুয়া এবং ধারনা পত্র উপস্থাপন করেন ইপসার রিসার্চ এন্ড মনিটরিং কর্মকর্তা মোরশেদ হোসেন মোল্লা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. আব্দুল মোমিন এবং উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী ইন্জিনিয়ার মনিরুজ্জামান দেওয়ানজী। 

প্রবন্ধ উপস্থাপনে বলা হয় বাঁশখালী উপজেলা বন্যা, সাইক্লোন ও নদীভাঙ্গনের মত আকস্মিক দুর্যোগ এবং  উপকূলতটের ক্ষয়, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাবৃদ্ধি, লবণাক্ত জলের প্রবেশ এবং বৃষ্টিপাতের ধরণ পরিবর্তনের মত ধীরগতির দুর্যোগের শিকার হচ্ছে। প্রায় ৮০০০ মানুষ জলবায়ুগত পরিবর্তনজনিত স্থানচ্যুতির ফলে এখনো বাঁশখালীর দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় অস্থায়ীভাবে বেড়িবাঁধের আশেপাশে বাস করছে যার ফলে তাদের বারবার আবাসস্থলের জায়গা পরিবর্তন করতে হচ্ছে।  বেড়িবাঁধের সাথে সংযুক্ত জায়গায় বসবাস করছে ৫৪ শতাংশ মানুষ আর ৪০ শতাংশ মানুষের অবস্থান নিকটস্থ বিলের পাশে । নতুন স্থানে ১-৫ বছর ধরে বাস করছে ৫০ শতাংশ মানুষ আর ৬০ শতাংশ মানুষ জীবনে ৩-৫ বার  স্থানচ্যুতির শিকার হয়েছেন। স্থানচ্যুতির ফলে পেশা পরিবর্তন  করতে বাধ্য হয়েছেন ২০ শতাংশ মানুষ। প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষের প্রধান পেশা দিনমজুরি আর ২২ শতাংশ মানুষ মৎসজীবি। যদিও স্থানচ্যুত মানষেরা সকলে খাবার পানি টিউবওয়েল থেকে সংগ্রহ করছে ‍কিন্তু আয়রন ও লবনাক্ততার প্রভাবে নিরাপদ সুপেয় পানির সমস্যা উপকূলীয় এলাকায় প্রকট। প্রায় ৯০% শতাংশ মানুষ অস্বাস্থ্যকর স্যানিটেশনে অভ্যস্ত যার ফলে বিভিন্ন পানিবাহিত রোগসহ নানা সংক্রামক রোগে আক্লান্ত হচ্ছে। নিরাপদ জীবনের প্রত্যাশায় ৬০% শতাংশ মানুষ  অন্যত্র স্থানান্তরিত হতে আগ্রহী কিন্তু আর্থিক সীমাবদ্ধতায় ইচ্ছা বাস্তবায়ন করতে পারছে না। যদিও দরিদ্র মানুষের জন্য বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন সুরক্ষা ভাতার ব্যবস্থা থাকলেও জলবায়ু স্থানচ্যুত মানুষেরা বঞ্চিত হয় বলে তাদের ক্ষোভ রয়েছে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৯৩% মানুষ প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে স্থানচ্যুতির ফলে কোন ধরণের সাহায্য সহযোগিতা পায়নি।


আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন বাংলাদেশ সরকার জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকি ও অভিযোজন সর্ম্পকিত বেশ কিছু আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন করলেও কোনটিতেই জলবায়ু স্থানচ্যুত মানুষের বিভিন্ন সমস্যা মোকাবেলার উপায় সমূহ সুস্পষ্টভাবে বিবেচনায় আনা হয়নি। সাম্প্রতিক সময়ের অভিজ্ঞতা থেকে এটি সুস্পষ্ট যে, জলবায়ু স্থানচ্যুত মানুষের বাসস্থান, ভূমি ও সম্পত্তির অধিকার নিশ্চিতকরণে বিদ্যমান প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা এবং নীতিমালা সমূহে যথেষ্ট ঘাটতি ও দুর্বলতা রয়েছে। জলবায়ু স্থানচ্যুতির বিষয়ে কার্যকরী সাড়া প্রদানের জন্য অধিকার ভিত্তিক আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন এবং সুষ্ঠু প্রয়োগ প্রয়োজন। জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক অনেক আইন ও নীতিমালা ইতোমধ্যেই বিদ্যমান রয়েছে এবং এ সকল বিদ্যমান আইন ও নীতিমালায় জলবায়ু স্থানচ্যুত মানুষের অধিকারের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা একান্ত জরুরী।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা  মোমেনা আক্তার  বলেন বাঁশখালী উপজেলা চট্টগ্রাম জেলার অর্ন্তভূক্ত একটি জলবায়ু দুর্যোগপ্রবণ এলাকা। এখানে প্রতিটি দুর্যোগের ফলে মানুষ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ ও গৃহহারা হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে স্থানচ্যুত মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। ক্রমবর্ধমান প্রয়োজনীয়তা স্বত্বেও স্থানচ্যুত মানুষের জন্য সাহায্য সুরক্ষার পরিমাণ প্রয়োজনের তূলনায় অপ্রতুল। এ ধরনের ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের জন্য সামগ্রিক ভাবে স্বেচ্ছা এবং পরিকল্পিত পুনর্বাসন এর বিকল্প নেই যাতে করে তারা ঝুঁকিপ্রবণ এলাকা থেকে নিরাপদ বসবাসযোগ্য স্থানে বাস করতে পারেন এবং সব রকমের মৌলিক চাহিদা পেতে পারেন। তিনি বাঁশখালীর পানি নিষ্কাশনের অন্যতম প্রবাহ জলকদর খালের সংস্কার এবং দখলমুক্তির ব্যবস্থা অচিরেই করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন। এছাড়া তিনি বলেন পুকুরিয়া ইউনিয়নের বাস্তুচ্যুত মানুষদের বাস্তবায়নাধীন আশ্রয়ন প্রকল্পে ঘর পাবার ব্যবস্থা, বেড়িবাঁধের সংস্কার, স্থানচ্যুত মানুষেদের তালিকা করা, ভূমিহীন আর স্থানচ্যুত ২৫০ পরিবারের জন্য নতুন আশ্রয়ন প্রকল্প ব্যবস্থা করা এবং দক্ষতা উন্নয়ন মূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে জানান। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডা. মোমিন জলবায়ু স্থানচ্যুত মানুষদের জীবিকা ভিত্তিক দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণ আয়োজনের পাশাপাশি ভবিষ্

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ