বাঁশখালী ভূমি অফিস ‘দুর্নীতিমুক্ত’ সাইনবোর্ডে, বাস্তবে ভিন্নচিত্র

বিএন ডেস্কঃ বাঁশখালী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফুল হক মৃদুল পদোন্নতিজনিত কারণে জেলা প্রশাসকের কার্যলয়ে বদলি হয়েছেন। বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার স্থানীয় সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বাঁশখালী ভূমি অফিসকে দালালমুক্ত ও বহিরাগত ব্যক্তি দিয়ে অফিস কার্যক্রম বন্ধ করা হবে। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বদলি হওয়ার পর ১৫ সেপ্টেম্বর দুপুরে পুরাতন কর্মস্থল পরিদর্শন করেছেন।
জানা যায়, বাঁশখালী উপজেলা ভূমি অফিসে ‘আমি এবং আমার অফিস দুর্নীতি মুক্ত’ লেখা সাইনবোর্ড থাকলেও বাস্তব ভিন্ন। এ অফিসে দালাল ও বহিরাগতদের দৌরাত্ম্য আশংকাজনভাবে বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অফিসে অনিয়ম, দুর্নীতি, খতিয়ান সৃজনে হয়রানির অভিযোগ সংক্রান্ত বাক্স থাকলেও তা অকার্যকর অবস্থায় পড়ে থাকা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে অভিযোগের অন্ত নেই।
বাঁশখালী উপজেলার জলদী, খানখানাবাদ নতুন, খানখানাবাদ পুরাতন, কোকদ-ী, চাম্বল, বাণীগ্রামে ইউনিয়ন ভূমি অফিস রয়েছে। এ অফিসগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ৬ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত চাম্বল ভূমি অফিসে অনিয়ম, দুর্নীতি ও হয়রানি বেশি বলে অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে গত ২২ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসক জিল্লুর রহমান চৌধুরী স্মারক নং- ০৫.৪২.১৫০০.৩০২.০১.০০৮.১৫-৩৪৩ মূলে চাম্বলের তহসিলদার চন্দন দাশকে ১০ দিনের মধ্যে বোয়ালখালী উপজেলায় যোগদানের জন্য নির্দেশ দেন। সে সময় অতিক্রান্তে উক্ত তহসিলদার কর্মস্থল হতে অবমুক্ত বলে গণ্য হবেন বলে উল্লেখ থাকে। এছাড়া গত ৩০ জানুয়ারি জেলা প্রশাসক কার্যালয় হতে অপর এক আদেশে উপজেলা ভূমি অফিসের প্রধান সহকারী শুকলাল মিত্রকে জেলা প্রশাসকের শিক্ষা শাখায় বদলির আদেশ দেন। কিন্ত তিনিও জেলা প্রশাসকের আদেশটি অমান্য করে বিভিন্ন তদবিরের মাধ্যমে পুনরায় একই পদে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। বাঁশখালী এলাকায় জায়গা জমির নতুন খতিয়ান সৃজন, ডিসিআর, দাখিলা কর্তন, মিচ কেইসসহ বিভিন্ন কাজে প্রতিনিয়ত মানুষ ভূমি অফিসে আসা যাওয়া করে থাকেন। এই বাঁশখালী ভূমি অফিসে তহসিলদার ও সহকারী তহসিলদারের পাশে সহকারী হিসাবে ২ জন ৩ জন কোন কোন ক্ষেত্রে ৪ জনও দৈনিক টাকার বিনিময়ে সরকারি কাগজপত্রে লেখনির কাজ করছিলেন। তাদের সহযোগী ছিলেন অর্ধ শতাধিক কমিটিভুক্ত দালাল। এই দালালদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ভুক্তভোগীরা জেলা প্রশাসকসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তবুও দালালদের খপ্পর থেকে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির শেষ ছিলনা। ভূমি অফিসের দালালদের বিষয়ে দুদক’র গণ শুনানিতেও অনেকে হয়রানির শিকার হয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
সরল ইউনিয়নের মনকিচরের গ্রামের ফাতেমা বেগম জানান, ভূমি অফিসে নুরুল ইসলাম নামে এক দালালকে নামজারি খতিয়ান সৃজনের জন্য ১ বছর পূর্বে ১০ হাজার টাকা প্রদান করেছেন। ১১শ ৫০ টাকায় নামজারি খতিয়ান সৃজনের নিয়ম থাকলেও ১০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে।
পূর্ব চাম্বল ৬নং ওয়ার্ডের আবদুর ছালাম, আইয়ুব আলী ও মকবুল আলী জানালেন, ভূমি অফিসের কর্মচারী বাসুদেবকে ২টি নামজারি খতিয়ান সৃজনের জন্য ২২ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে।
কাথারিয়া গ্রামের বাসিন্দা জালাল উদ্দিনের ১৯৭৮ সালের বায়না দলিলে ক্রয়কৃত জমির খতিয়ান সৃজনের জন্য (ফাইন নং- ৪১২ ও ৪১৬) ১ বছর ধরে ভূমি অফিসে ঘুরপাক খাচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত নামজারি খতিয়ান করতে পারেননি বলে তার পরিবার সূত্রে জানা গেছে।
বাঁশখালী চাম্বল ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহসিলদার চন্দন দাশ বদলি হওয়ার বিষয়টি শিকার করে তিনি বলেন, এ অফিসে অন্যান্য অফিসের চেয়ে নামজারি খতিয়ান সৃজন, ডিসিআর, খাজনার দাখিলাসহ বিভিন্ন কাজ বেশি। এজন্য কর্তৃপক্ষ আমাকে আবার সুযোগ দিয়েছে। অনিয়ম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কাজ করলে একটু ভুল হবে। সরকারি কর্মচারী আছি ৪ জন, এখানে প্রয়োজন ৮ জন। এজন্য বাইর থেকে মো. ইব্রাহীম, পারভেজ, অনুপম নাথ ও মোজাম্মেলকে সহযোগী হিসাবে রাখা হয়েছে।
এদিকে প্রধান সহকারী শুকলাল মিত্রের কাছে ভূমি অফিসের তালিকাভুক্ত দালাল এবং বহিরাগত লোক দিয়ে অফিসের ফাইলপত্রে লেখা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেন।
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার বলেন, ‘বাঁশখালী ভূমি অফিসকে দালাল মুক্ত ও বহিরাগত লোক দিয়ে অফিসের কার্যক্রম তদারকির মাধ্যমে বন্ধ করা হবে। এ নিয়মটা বাধ্যতামূলকভাবে ঘোষণা দিতে চাই। যদি কেউ অনিয়মের সাথে যুক্ত থাকে তার বিরুদ্ধে আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।
/পূর্বকোণ!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ