আর কোন শফিউল আলমের জন্ম হবে না উখিয়া টেকনাফে



আব্দুল আলীম নোবেলঃ কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত হওয়া, গতকিছু দিন আগে রোহিঙ্গা ইস্যুতে সেমিনারে এক বক্তা বললেন, আগামী ৫০ বছরেও উখিয়া টেকনাফে আরো কোন শফিউল আলমের জন্ম হবে না। ওই বক্তার বক্তব্য যে একেবারে অমূলক নয় তার যতেষ্ট কারণ ও  যৌক্তিকতা রয়েছে। রোহিঙ্গা ও সর্বনাশা ইয়াবা আগ্রাসনে এই জনপদের আগামী প্রজন্ম যেভাবে শেষ হয়ে যাচ্ছে সেটি কল্পনাতীত। অত্যন্ত ক্ষোভ ও গভীর চিন্তা থেকে তার কাছ বের হওয়া কথাটির একদিন বাস্তবে রূপ নিতে পারে এমন পরিস্থিতি এখানে চলছে এখন। কক্সবাজারের উখিয়ার মৃত্তিকার সন্তান বর্তমানে সরকারী চাকুরীর সর্বোচ্চ পদ বহনকারি মন্ত্রীপরিষদ সচিব শফিউল আলমকে উদাহরণ টেনে এই কথাটি বুঝাতে চেয়েছেন তিনি। তাহার মেধা,শ্ররম ও সৎ সাহস দিয়ে গর্বিত করেছেন সবাইকে এ সফল মানুষটি। 
এমনিতে উখিয়া টেকনাফে শিক্ষার হার কম। সর্বনাশা ইয়াবা আর রোহিঙ্গার কারণে এই জনপদের শিক্ষা খাতের উপর খড়গ নেমে এসেছে। চোখের সামনে আপনার আদরের সন্তান শেষ হয়ে যাচ্ছে, সেটি একটিবারও চিন্তা করছি না। আরো নিজেকে জাহির করছি আমার ছেলে দামী গাড়ি নিয়ে ঘুরাফেরা করে। ওই ছেলেকে কি কোন দিন প্রশ্ন করে দেখেছ এই দামী গড়ি কোথা থেকে নিয়েছে। এমন প্রশ্ন করবে কিভাবে আপনিতো সবকিছুই জানেন।  এই সমাজের একজন পাপি বাবা অথবা অভিভাবক আপনি। আপনার মত বাবাকে ধিক্কার জানাই। অবৈধ আর পাপের টাকা নিয়ে তৈরি করা বিলাশ বহুল বাড়ি গাড়ি নিয়ে গর্ব করেন তাই না। পড়া লেখার কোন বালাই নেই নিজের ছেলের, টাকাই সব টাকাই সব কিছু। মনে রাখবেন এখানে শেষ নয়। তোমার ছেলের হাকডাক আলিশান চলাফেরা অপরজনকে এই অন্ধকারের পথে পা বাড়াতে উৎসাহিত করছে। সেটিতো আরেক বড় অপরাধের জন্ম দিচ্ছে আপনার মতো পাপি বাবা ছেলে। তোদের কারণে আজ সমাজের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে ক্যান্সারের মতো পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়ছে মাদক, একটিবার চিন্তা করেছ। চোখের সামনে একটি প্রজন্ম শেষ হয়েছে যাচ্ছে। উখিয়া টেকনাফের স্কুল কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থী ও তরুণরা অত্যন্ত নির্লজ্জভাবে জড়িয়ে পড়ছে মাদকের অপরাধ রাজ্যে। এই চিত্র পুরো দেশে ছড়িয়ে যেতে আর বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে না। পত্রিকা আর টিভি খুলল্লে চোখে পড়ে ইয়াবা আর ইয়াবার সংবাদ।
কক্সবাজারের একটি জনসভায় খোদ দেশের প্রধানমন্ত্রী ইয়াবার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স এবং এর পরে টেকনাফে পুলিশের মহাপরির্দশক একই কথা বলেছিলেন। এমন বক্তব্যের ফলাফল একটু দেরিতে আসায় অনেকই চরম শঙ্কায় ছিলেন কোন দিন কি নিস্তার পাবো না মাদক আগ্রসন থেকে। এবার একটু আশাবাণী।  গতকয়েক দিন থেকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর মাদকের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযানে নামায় কিছুটা হলে আশার সঞ্চার হয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কজন মাদক ব্যবসায়ী পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধে মারা পেড়েছে। এবার বুঝি নিস্তার নেই মাদকের কালো তালিকায় থাকা অমানুষদের। এবার  অপেক্ষর পালা। বাকি টুকু সময় বলে দেবে।
অপর দিকে উখিয়া টেকনাফের মানুষের উপর ভর করেছে আরেকটি শনিরদশা। অনুমানিক ১৫ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা এখানে।  মূল জনসংখ্যার দ্বিগুন। তাদের কারণে এই এলাকার পরিবেশ প্রতিবেশসহ তাদের জীবনযাত্রার উপর ভিন্ন মাত্রায় চাপ পড়েছে। তাদের কারণে অভাবনীয় কষ্ট রয়েছে হোস্টকিউনিটি(স্থানীয়রা)। রোহিঙ্গাদের সেবার নামে ১১৬ টি এনজিও ও  কিছু ইউএন এজেন্সি কাজ করছে তাদেরকে ঘিরে। এই সংস্থা গুলোর চড়কদার বিজ্ঞাপন দেখে হামাঘুড়ি দিয়ে পড়েছে এই এলাকার শিক্ষার্থীরা। যারা ছিল কিছুদিন আগেও বিভিন্ন কলেজ মাদ্রাসার  নিয়মিত শিক্ষার্থী। একজন ইন্টারমিডিয়েট পাশ করা ছেলে মেয়ের বেতন যদি ২০ থেকে ৪০ হাজার টাকার উপরে। এই লোভে সবাই ঢুকে পড়েছে চাকুরীতে। বুঝতেই তো পারছেন, মাঠে মরা পড়ছে তার লেখা পড়া ও  ছোট থেকে লালন করা বহু আগামীর স্বপ্ন।
খোঁজ নিয়ে দেখেন এই এলাকার কলেজের শিক্ষরা এখন  ক্লাসে পড়াতে শিক্ষার্থী পায়না। বেশি বেতনের চাকুরীর লোভে এখন হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী আর কলেজে যায় না। এটি  সাময়িক, কিছুদিন পর হয়তো এই চাকুরী চলেও যেতে পারে। একটু গভীরে গিয়ে দেখলেই  রোহিঙ্গার কারণে শিক্ষা খাতেও চরম ধাক্কা লেগেছে। এই সবের উত্তরণে আমাদের আরো বেশি সচেতনতা বড় প্রয়োজন। সময় এসেছে বিবেককে জাগ্রত রাখে সুন্দর আগামীর জন্য একটি বিপদগামী প্রজন্মকে রক্ষা করা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ