ফেসবুকে প্রশ্নপত্র বিক্রির ‘বিজ্ঞাপন’

বি,এন ডেস্কঃ
‘শতভাগ কমন, প্রশ্নের জন্য যোগাযোগ করুন ইনবক্সে’—ফেসবুকে ‘এইচএসসি কোয়েশ্চন’ নামের একটি গ্রুপের মন্তব্যের বক্সে এই আহ্বান জানানো হয়। ‘এআর আকরাম’ নামের একটি আইডি থেকে দেওয়া এই ‘বিজ্ঞাপন’ ছিল এইচএসসি পরীক্ষার বাংলা প্রথমপত্রের প্রশ্নপত্র বিক্রির। তবে বেশি দূর এগোতে পারেননি কথিত বিক্রেতারা। ধরা পড়েন পুলিশের হাতে। গতকাল সোমবার ছিল বাংলা প্রথমপত্রের পরীক্ষা।
পরীক্ষার আগেই গতকাল দিবাগত রাত তিনটার দিকে সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারি ইউনিয়নের পূর্ব হাসনাবাদ গ্রামে অভিযান চালিয়ে পুলিশ তিনজনকে আটক করে। তাঁদের মধ্যে দুজন ভাটিয়ারি বিজয় স্মরণী কলেজের এবারের এইচএসসি পরীক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল জামান (২০) ও মো. আরিফ হোসেন (২০)। অন্যজন মো. আল আমিন (১৯) একই কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র। সবাই মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী।
পুলিশ জানায়, আটক তিন শিক্ষার্থী চলতি এইচএসসি পরীক্ষায় বাংলা প্রশ্নপত্র ফাঁস করার কথা বলে ফেসবুকের মাধ্যমে টাকা আদায় করেন। আটকের পর তাঁদের কাছ থেকে ১০টি মোবাইল সিম পাওয়া যায়।
 সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইফতেখার হাসান বলেন, সোমবার ছিল এইচএসসি বাংলা প্রথমপত্রের পরীক্ষা। দুদিন ধরে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিতে থাকে প্রতারক চক্রটি। এটি পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের নজরে আসে। পরে অভিযান চালানো হয়। তবে তাঁদের কাছে কোনো প্রশ্নপত্র পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় প্রতারণার মামলা হবে।
পুলিশের উপস্থিতিতে থানায় আবদুল্লাহ আল জামান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের কাছে কোনো প্রশ্ন ছিল না। আরিফ হোসেনের পরামর্শে তিনি এআর আকরাম নামের একটি ভুয়া ফেসবুক আইডি খোলেন। সেটি থেকে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে বাংলা প্রথমপত্রের প্রশ্ন শতভাগ কমন পড়ারও নিশ্চয়তা দেন। এ জন্য প্রতি প্রশ্নের জন্য ৬০০ টাকা করে দেওয়ার জন্য বলা হয়। যারা প্রশ্ন নেবে তাদের ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারের ইনবক্সে যোগাযোগ করতে বলা হয়। যোগাযোগের পর গ্রাহকদের একটি বিকাশ নম্বর দেওয়া হয়। সেখানে দুই হাজার টাকার মতো পেয়েছেন তাঁরা।
সীতাকুণ্ড থানার উপপরিদর্শক মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, প্রথমে পূর্ব হাসনাবাদ গ্রাম থেকে আবদুল্লাহ আল জামান ও আল আমিনকে আটক করা হয়। পরে তাঁদের স্বীকারোক্তিতে আটক করা হয় আরিফ হোসেনকে। অভিযানের সময় তাঁদের কাছ থেকে তিনটি মুঠোফোন জব্দ করা হয়। এ সময় মুঠোফোনে বিকাশে টাকা লেনদেনের খুদে বার্তা পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে বিজয় স্মরণী কলেজের উপাধ্যক্ষ হারেছ আহমদ বলেন, বিষয়টি তিনি জানেন না। কারণ, এটি কেন্দ্রের কোনো ঘটনা নয়। এ ছাড়া আটক হওয়া তিনজন তাঁদের কলেজের ছাত্র কি না তা তিনি নিশ্চিত নন।
আবদুল্লাহ আল জামানের বড় ভাই আবদুল্লাহ আল হাসান বলেন, ‘আমার ভাই নিজেই পরীক্ষার্থী। সেই এ ধরনের প্রতারণা করবে বলে আমাদের বিশ্বাস হয় না। তারপরও তদন্ত হোক। তাহলেই সব বেরিয়ে আসবে।’
ফেসবুকে এই ধরনের কোনো কিছু দেখলে টাকার লেনদেন না করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মসিউদ্দৌলা রেজা। তিনি বলেন, এটি প্রতারণা ফাঁদ। তিনি এ ধরনের কিছু দেখলে পুলিশকে জানানোর অনুরোধ করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, মাদ্রাসাসহ সীতাকুণ্ডে মোট চারটি কেন্দ্রে পরীক্ষার্থী ছিল ১ হাজার ৬১২ জন। এর মধ্যে ১৭ জন শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল।
সুত্রঃ প্রথম আলো

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ