সুপার সার্ভিসের নামে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অবিযোগ

চট্টগ্রাম বাঁশখালী পিএবি (পটিয়া-আনোয়ারা-বাঁশখালী) সড়কে চলাচলরত নিয়মিত বাস যাত্রীরা মালিক শ্রমিকদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। সরকারি নিয়ম-নীতি ও মালিকদের নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা উপেক্ষা করে প্রতি বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার নতুন ব্রিজ থেকে লোকাল বাসগুলো জলদী পর্যন্ত ৪৫ টাকা ভাড়ার পরিবর্তে রিজার্ভ বোর্ড টাঙ্গিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে ৮০/১০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া আদায় করে নিচ্ছে। স্পেশাল সার্ভিস বাসগুলোতে যাত্রীবাহী নাম ব্যবহার হলেও বাসের ভিতরে মালামাল ও ছাঁদের উপর মুরগির খাঁচা, মাছের ড্রাম, অতিরিক্ত মালামাল ও যাত্রী বোঝায় করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী যাত্রীরা প্রশাসনের কাছে ধরণা দিয়েও কোন প্রতিকার পাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়কে কেন্দ্র করে যে কোন সময় যাত্রী ও শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষের আশংকা রয়েছে।যাত্রীদের অভিযোগ ও শ্রমিক সংগঠন সূত্রে জানা যায়, বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে বাঁশখালী পৌর সদর জলদীর দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার ও প্রেম বাজার পর্যন্ত দূরত্ব ৬০ কিলোমিটার। বহদ্দারহাট থেকে ছেড়ে আসা বাসগুলো পিএবি (পটিয়া-আনোয়ারা-বাঁশখালী) সড়ক হয়ে স্পেশাল সার্ভিস নগরীর নতুন ব্রিজ হতে মালিকদের নির্ধারিত ভাড়া জলদী পর্যন্ত ৬৫ টাকা ও সুপার সার্ভিস নগরীর নতুন ব্রিজ হতে জলদী পর্যন্ত ৮০ টাকা ও টৈটং পর্যন্ত ১০৫ টাকা ভাড়ায় বাসগুলো যাত্রীদের পৌঁছানো হয়। এ সড়কে নতুন ব্রিজ এলাকা থেকে লোকাল বাসগুলো জলদী পর্যন্ত চলাচল করে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে নতুন ব্রিজ থেকে লোকাল বাসগুলো যেখানেই যাত্রী নামানো হয় (২০ কিলোমিটার পর্যন্ত) ৮০ টাকা ভাড়া আদায় করা হয়। সরকারি নিয়ম অনুসারে প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া আদায় হওয়ার কথা ১.৪৫ টাকা কিন্তু সেই নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে ভাড়া আদায় করা হয় প্রতি কিলোমিটার ২ টাকার বেশি। কিছু বাস ছাড়া অধিকাংশ বাস লক্কর-ঝক্কর অবস্থায় চলাচল করছে। এ বাসগুলো সাইনবোর্ড পরিবর্তন করে সপ্তাহে ৩ দিন স্পেশাল ও সুপার সার্ভিস নাম দিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। বহদ্দারহাট থেকে ছেঁড়ে আসা বাসগুলো নতুন ব্রিজ এলাকায় স্পেশাল ও সুপার সার্ভিস নাম দিয়ে যতক্ষণ পর্যন্ত যাত্রী সিট পরিপূর্ণ না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। ঐ সময় শ্রমিকরা হাঁকডাক দিয়ে বাঁশখালী, বাঁশখালী বলে যাত্রীদের ডাক দিতে থাকে। বাস পূর্ণ হলেই নতুন ব্রিজ থেকে বাঁশখালী গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। বাসগুলো নতুন ব্রিজ এলাকায় দীর্ঘক্ষণ যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করা নিয়ে চালক, শ্রমিক ও যাত্রীদের সাথে প্রতিনিয়ত তর্ক বিতর্ক, বাকবিত-া চলতে থাকে।
বাঁশখালী সড়কে চলাচলরত নিয়মিত যাত্রী শিক্ষক আহমদ সৈয়দ, চাকুরিজীবী আবুল কালাম, ব্যবসায়ী গোফরান উদ্দিন অভিযোগ করেন, চট্টগ্রাম বাঁশখালী সড়কের যাত্রীরা মালিক শ্রমিকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। প্রতি বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার ঈদ মৌসুমের মত নগরীর নতুন ব্রিজ থেকে যাত্রীদের কাছ থেকে পুকুরিয়ার ২৫ টাকার ভাড়ার স্থলে ৮০/১০০ টাকা নেয়া হয়। এ সড়কে চলাচলরত বাসগুলো আনোয়ারা কালারমার দিঘি থেকে জলদী পর্যন্ত যেখানে যাত্রী নামানো হয় নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে ৮০/১০০ টাকা ভাড়া দিতে বাধ্য হয়। প্রতিবাদ করলেই শ্রমিকদের হাতে যাত্রীরা লাঞ্ছিত হয়। নগরীর নতুন ব্রিজ থেকে মোহাম্মদ রাশেদ নামের এক যাত্রীর কাছ থেকে পুকুরিয়া ইউনিয়নের চৌমুহনী এলাকার ভাড়া ২৫ টাকার স্থলে শ্রমিকরা ৮০ টাকা আদায় করে নেয়। এ নিয়ে প্রতিবাদ করতে গিয়ে শ্রমিকদের সাথে স্থানীয়দের সংঘর্ষ হয়। এ সড়কে ঐ সময় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপে যানবাহন চলাচল আবার শুরু হয়।বাঁশখালী বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম বলেন, পিএবি সড়কের বাসগুলোকে যাত্রীসেবার জন্য পরিবর্তন আনা হয়েছে। মালিকদের নির্দেশিকা তালিকা অনুযায়ী ভাড়া আদায়ের জন্য বলা হয়েছে। শ্রমিকদেরকে নির্দেশ দেয়া আছে অতিরিক্ত ভাড়া না নেয়ার। কিন্তু শ্রমিকরা সে নিয়ম মানেনা, তাদেরকে এ বিষয়ে বকাঝঁকাও করা হয়।বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান মোল্লা বলেন, আইন শৃঙ্খলা ও উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় প্রধান সড়কের বাস চলাচলে যানজট নিরসনের জন্য অবৈধ স্টেশন উচ্ছেদের জন্য জনপ্রতিনিধির প্রস্তাব এসেছে। বাস মালিকদের সাথে এ ব্যাপারে কথা হয়েছে। বাস চলাচল উন্নত করার জন্য মালিকদেরকে বলা হয়েছে। এছাড়াও উপজেলা প্রশাসনের সামনে থেকে বাসগুলো সরিয়ে নেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বাঁশখালী উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ জহিরুল ইসলাম বলেন, উপজেলা মাসিক সভায়ও বাঁশখালী বাসগুলোর অনিয়মের ব্যাপারে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন থেকেও মালিক শ্রমিকদেরকে যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধির জন্য অনেকবার তাগাদা দেয়া হয়েছে।
সুত্রঃ দৈনিক পূর্বকোণ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ