“বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ (দ.) আবির্ভাব দিবস উপলক্ষে প্রাসঙ্গিক আলোচনা”- আল্লামা ছুফি ছৈয়দ জাফর ছাদেক শাহ (মা.)


 মোহাম্মদ হায়দার আলী, নিজস্ব প্রতিনিধি

সাকিয়ে কাউছার, শাফিয়ে মাহশার আমাদের বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অনেক ছূরাত রয়েছে। যেমন: ছূরাতে হাক্কী, ছূরাতে মালাকী ও ছূরাতে বাশারী ইত্যাদি।


নবীজি (দ.) ৫৭০ খৃষ্টাব্দ মোতাবেক ২৯ আগস্ট তথা আরবি ১২ রবিউল আউয়াল বশরী ছূরাত নিয়ে আমাদের ওপর দয়াপরবশ হয়ে এই দুনিয়াতে তশরীফ আনেন। মূলত তাঁর সৃষ্টির রহস্য একমাত্র আল্লাহই সম্যক জ্ঞাত। যা মহাগ্রন্থ আল কুরআন ও পবিত্র হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। 


পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের নবীজি (দ.)’র আগমনী বার্তা প্রকাশ করতে গিয়ে একবার ও ‘ওলিদা’ বা ‘জন্মগ্রহণ’ করেছেন এমন কোন শব্দ উল্লেখ করেন নি; বরং তিনি উল্লেখ করেছেন ‘আরসালা’ ‘তিনি (আল্লাহ) প্রেরণ করেছেন, ‘বা’আছা’, ‘তিনি (আল্লাহ) পাঠিয়েছেন’ ও ‘যা’আ’ ‘তিনি {মোহাম্মদ (দ.)} আগমন করেছেন’ এমন শব্দগুলো ব্যবহার করেছেন। 


এছাড়াও হাদীস শরীফে আছে– ‘হযরত আবু হুরাইরা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তারা (উপস্থিত সাহাবাগণ) আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (দ.) আপনার জন্য কখন নবুয়ত অবধারিত হয়েছিল? তিনি (রাসূল দ.) এরশাদ করলেন, ‘ঐ সময় আদমের অবস্থান ছিল রুহ এবং শরীরে’ (সুনামে তিরমিজী)। 


তবে আমার মহান রাসূলে করীম (দ.)’র আবির্ভাবের দিনটিতে ‘মিলাদুন্নবী’ শিরোনামে উৎসব উদযাপন করেন তাদের সাথে আমাদের কোন বিরোধ নেই। সভ্যতার বিকাশে ও তথ্য প্রযুক্তির ক্রম অগ্রসরমান ধারায় বিশ্বে অনেক কিছুই পরিবর্তিত হচ্ছে। 


সকল পরিবর্তন মহান আল্লাহ তা’য়ালার পক্ষ থেকে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘কুল্লা এয়াওমিন হুয়া ফি শা’ন’ অর্থাৎ আল্লাহ প্রত্যহ নিত্য নতুন অবস্থাতে বিরাজমান। (সুরা আর রহমান, আয়াত–২৯)।


পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে আরবি ক্যালেন্ডারের প্রচলন নেই। একইভাবে আমরা যদি বাংলা সন অনুযায়ী তথা ১২ বা ১৪ ভাদ্র তারিখে নবীজির আবির্ভাব দিবস পালন করি তাহলে পৃথিবীব্যাপী নবীর আগমনী বার্তাটা ছড়ানো সম্ভব নয়। কেননা বাংলা ক্যালেন্ডারটিও বাংলাদেশ, ভারতের বাংলা ত্রিপুরা ও আসামের কিছু এলাকায় সীমাবদ্ধ। 


অপরপক্ষে মধ্যপ্রাচ্য, দূরপ্রাচ্য বা আফ্রিকা সহ সকল দেশে গ্রেগরিয় বা ইংরেজি ক্যালেন্ডার একই ধারায় প্রচলিত রয়েছে। যার ফলে ২৯ আগস্ট নবী (দ.) এর আগমনী দিনকে সকলে সহজেই একত্রে পালনে সক্ষম হবে। 


তাই পুরো পৃথিবীব্যাপী কামলি ওয়ালা (দ.)’র আবির্ভাব দিবস তথা ২৯ আগস্ট ছড়িয়ে দিতেই সৌরবার্ষিকী অনুসারে নবীর আগমনী দিন পালনের এই প্রয়াস।

অধিকাংশ ঐতিহাসিক ও জ্যোতির্বিদ একমত হয়েছেন যে, গ্রেগোরিয়ান ক্যালেন্ডার হিসেবে দয়াল নবীজির (দ.) আবির্ভাবের দিনটি ছিল ৫৭০ ইংরেজির ২৯ আগস্ট। 


আধুনিক যুগের সে সকল সর্বজন শ্রদ্বেয় লেখক ও গবেষকগণ নবী (দ.) এর আবির্ভাব দিবসটি স্বীয় গ্রন্থে আগস্ট ২৯, ৫৭০ ইংরেজি বলে উল্লেখ করেছেন; তাদের মধ্যে বিশ্ববিখ্যাত ইসলামিক অনলবর্ষী বক্তা প্রয়াত আহমদ দীদাতের গ্রন্থ ‘মোহাম্মদ দ্যা ন্যাচারাল সাকসেসর অব ক্রিস্ট’ এবং স্যার ছৈয়দ আমির আলীর ‘দ্যা স্প্রিট অব ইসলাম’ বিশ্বজুড়ে ব্যাপকভাবে সমাদৃত। 


এছাড়াও বর্তমান সরকারের মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের নবম ও দশম শ্রেণির ইসলামের ইতিহাস পাঠ্য পুস্তকের ২৬ পৃষ্ঠায় নবীজির আবির্ভাব দিনটি ৫৭০ খৃষ্টাব্দ ২৯ আগস্ট ১২ রবিউল আউয়াল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।


চট্টগ্রাম দরবার শরীফ ( রাহে ভাণ্ডার কধুরখীল দরবার শরীফের) পক্ষ হতে ২০০০ সাল থেকে দরবারের নিজস্ব পরিমণ্ডলে ক্ষুদ্র পরিসরে সৌরবার্ষিকী হিসাব অনুযায়ী আমাদের প্রিয় নবীজি (দ.)’র দুনিয়ায় শুভাগমনের দিন তথা ২৯ আগস্ট পালন করে 


আসলেও বিগত ২০১৩ সালের ২৯ আগস্ট থেকে এই দিনকে বাংলায় মহান ‘নবী দিবস’ শিরোনামের মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো বৃহৎ পরিসরে নগরীতে ছামা মিছিল, মোটর শোভাযাত্রা ও সেমিনার সহ ব্যাপক আয়োজনের মাধ্যমে উদযাপন করা হচ্ছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ