সাংবাদিক! পিওনের কথায় যখন চাকরী থাকেনা

সাংবাদিকের চাকরিচ্যুতি প্রচলিত মনগড়া মৌখিক সিষ্টেমে কোন ঘটনা নয়। যেখানে আইন কিংবা নীতিমালা নেই সেখানে মুখের কথাই যথেষ্ট। মুখের কথায় গণমাধ্যম চলছে বলেই প্রতিনিধি সাংবাদিকের জামানতের টাকা ফেরত হয়না। গণমাধ্যম মালিকদের কাছে জামানত মানে জনমকেলিয়ে।

আর তাই গণমাধ্যমে প্রতিনিয়ত সাংবাদিক ছাটাই/ চাকরিচ্যুতি/ মাইনাস প্রক্রিয়া চলছেই। যে মাধ্যমে কোন নিয়ম-নীতি নাই তারই নাম গণমাধ্যম। দেড় লাইনের নোটিশে প্রথম সারির ৬৫ জন সাংবাদিককে  চাকরীচ্যুতের ঘটনা আমাদের অজানা নয়।

আমরা সাংবাদিক! মানুষের অধিকার বাস্তবায়নে লড়াই করি। কিন্তু নিজ ঘরেই পরবাসি। মিডিয়ার একজন পিওন, কম্পিউটার অপারেটরের কথায় যখন সাংবাদিকের চাকরী থাকেনা। সাংবাদিকের চাকরী যেন কচু পাতায় পানি। এ নিয়ে গত দু' সপ্তাহ আগে একটি নিবন্ধ তৈরী করেছিলাম। অনেকগুলো মিডিয়ায় প্রকাশ করা হয়েছে। অনেকে লেখাটির জন্য ফোনে এবং কমেন্টসে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তাদের উদ্দ্যেশেই আজকের এ লেখা।

বিএমএসএফ'র কথা: বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম গণমাধ্যমের এ সকল নষ্ট কালচারের প্রতিবাদ জানিয়ে ২০১৩ সাল থেকে সরকার ও গণমাধ্যমসমুহের কাছে সাংবাদিক নিয়োগ নীতিমালা প্রণয়নের দাবি করে আসছে। আসুন, আপনিও নিজ পেশার মর্যাদা ও অস্তিত্ব রক্ষায় সাংবাদিক নিয়োগ নীতিমালা প্রণয়নের দাবি তুলুন।

আপনি কেন সাংবাদিক নিয়োগ নীতিমালার পক্ষে থাকবেন: হ্যাঁ, নি:সন্দেহে আজ সময় এসেছে আপনি কোন পক্ষের? ধরুন, আপনি সম্পাদক-প্রকাশক কিংবা মালিক। আপনার মিডিয়ায় ৫-৭ বছর ধরে প্রতিনিধিত্ব করছে জনৈক বাতেন। আপনার অফিস পিওন সুরুজ আলীর সাথে মনোমালিন্য হওয়ায় নালিশ দেয়ায় আজকেই আপনি বাতেনকে চাকরিচ্যুত করবেন!  এটা কি হয়, বলুন? বাতেনতো আপনাকে ৩০টি হাজার টাকা ছাগল বিক্রি করে দিয়েছিল। মনে নেই যেদিন আপনি ফকিরাপুলে আপনার পত্রিকার প্রেসের টাকার জন্য তিনদিন ধরে ছাপা বন্ধ। যেদিন আপনি ডিএফপিতে টাকা জমা না দিলে আপনার পত্রিকাটি ৮ম ওয়েজবোর্ডের আওতায় আসতোনা। এখন মনে পড়? সে গত ৪ বছর আগের কথা। গুলিস্তানের একটি রেষ্টুরেন্টের পাশে দাঁড়িয়ে টাকাটা ছো মেরে নিয়ে চলে গেলেন। এক কাপ রং চায়ের অফারও করেননি তাকে। বরং সাড়ে ৩শ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে আপনার বিপদের সময় ওই বাতেন তার মা'র বর্গা ছাগল বিক্রি করে আপনার পাশে দাঁড়িয়েছিল। মনে পড়ে এখন বাতেনকে! না মনে পড়ার কথা নয়। এখন আপনি মতিঝিলে অফিস নিয়ে রমরমা বানিজ্য করছেন। যেমনি নিয়োগ বানিজ্য, তেমনি টোটকা বানিজ্য। বাতেনকে আজই চাকরিচ্যুত করতেই হবে। এ যেন আপনার কছম। একবার থামুন। ভেবে দেখুন, বাতেনটা কে? কেনইবা ওর মত পিওনের কথায় আপনি চাকরিচ্যুত করবেন! যেই হোক, আপনি মালিক আমি প্রতিনিধি যেই হোকনা কেন। এ ধরনের অন্যায় অযৌক্তিক কারনে আপনি কোন প্রতিনিধিকে বাদ কিংবা চাকরিচ্যুত করতে পারেন না।

আপনাদের এ ধরনের হটকারী সিদ্ধান্তে দেশে এসএ টিভি, গাজী টিভি, এশিান টিভি, আলোকিত বাংলাদেশসহ বহু মিডিয়া দেশে মহামারী করোনাকালেও শতাধিক সাংবাদিককে চাকরিচ্যুত করলেন। দেশব্যাপী ধিক্কার জানানো ছাড়া এই মূহুর্তে সাংবাদিকরা রাস্তাঘাটে আন্দোলন করতে পারলে আপনাদের মুখোশ খুলে দিতো। আদালত খুললে এশিয়ান টিভির বিরুদ্ধে মামলার হুমকিও দিয়েছেন চাকরিচ্যুত সাংবাদিকেরা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বললেন করোনাকালে যেন কাউকে ছাটাই করা না হয়। কোন মোহে প্রতিদিন চলে আপনার হাউজে সাংবাদিক ছাটাই?

দাবি তুলুন, সাংবাদিক নিয়োগ নীতিমালা প্রণয়নের। নীতিমালা প্রণীত হলে কথায় কাজে সাংবাদিকের চাকরিচ্যুতির ঘটনা ঘটবেনা, আর যে কেউ সাংবাদিক হতে পারবেনা। সাংবাদিক হতে হলে তাকে অবশ্যই শিক্ষিত হতে হবে তবে নুন্যতম এইচএসসি পাস।

আসুন, এভাবে আর চলতে পারেনা। আপনি মালিকই হোন বা প্রতিনিধি হোন। গণমাধ্যম অঙ্গনটি আপনার-আমার সকলের। তাই এটি সুরক্ষার দায়িত্বও সকলের। আসুন, আমরা একটি সুস্থ্যধারার গণমাধ্যম বিনির্মানে আওয়াজ তুলি। যে আওয়াজ ৪৯ বছরের গণমাধ্যমের সমস্ত দালাল ও কালিমামুক্ত করতে আওয়াজটি হতে হবে সাহসী ও জোড়ালো।

আহমেদ আবু জাফর, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম, কেন্দ্রীয় কমিটি, ১১ মে ২০২০ যোগাযোগ: ০১৭১২৩০৬৫০১।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ