বাঁশখালীতে ফ্লাইট সার্জেন্ট মহিআলম চৌধুরী সড়কের ফলক উন্মোচন করেন চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন চৌধুরী খোকা

মোহাম্মদ এরশাদঃ  
সুশীল দে টুটু'র ওয়াল থেকে- বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ সার্জেন্ট মহি আলম(এফ এফ গ্রুপ কমান্ডার ও অপারেশন নেতা)একাত্তর একটি বিশ্বাস, একটি ভয়ংকর ও মহৎ অভিজ্ঞতা, একটি দূর্মর স্মৃতি, চেতনার জলসানো বিভাজনরেখা।একাত্তরের ন'টি মাসে পুরো জাতির সাথে ঘঠনাপ্রবাহে জড়িয়ে আছে হত্যা, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষন, বিভীষিকা, মুক্তিসেনাদের অভিযান, ব্যর্থতা, সাফল্য, আত্মত্যাগ, গোষ্ঠী বিশেষের বিশ্বাসঘাতকতা। এ সবই আমাদের জীবনকে কতটুকু পুড়িয়েছে, কতটুকু খাঁটি সোনা করেছে, আজ এই প্রশ্ন উঠেছে। আজও এর কোন উত্তর মেলে না। যে লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি তারই একটি নাম সার্জেন্ট মহি আলম।জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানটির জন্ম বরিশালের মেহেদিগঞ্জ থানার উলুনিয়া গ্রামে।
পটিয়া থানার গৈড়লার টেক এলাকায় একটি খাল ও একই এলাকায় আর একটি রাস্তা উনার নামে নামকরন করা হয়েছে এবং বাঁশখালীর  বাণীগ্রাম এলাকায় উনার নামে একটি রাস্তা আছে যদিও নামফলকটা এখন বিলীন। আর পাহাড়ের নাম আলমের টিলা হিসেবেই এলাকায় পরিচিত।। সেই ৭১ এ উত্তাল দিনগুলোতে বাঁশখালীর প্রত্যন্ত অঞ্চলে নেতৃত্বদান করে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেওয়া অকুতোভয় এক যোদ্ধা শহীদ সার্জেন্ট মহি আলম। স্বাধীনতার মাত্র ২৮ দিন আগে বাঁশখালীর সাধনপুর সাহেবের হাটের পূর্বে বোর্ড অফিসে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর রাজাকারের বুলেটের আঘাতে মৃত্যুবরণ করেন জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানটি। তখন সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা রা তার লাশ কাঁধে করে প্রায় ৫ কিঃমিঃ দুর্গম পাহাড় লাম্বাকাডা নামক স্থানে সমাধি করেন। তার স্বজন'রা অনেকদিন  জানতোও না তাদের প্রিয় মানুষটি বাঁশখালীর দূর্গম পাহাড়ে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন। জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানটিকে নিয়ে যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকেে আমার ফ্রেন্ড লিষ্ট জয়েন থাকা বন্ধু বাণীগ্রাম এলাকার
সুশীল দে টুটু' প্রায় সময় শহীদ সার্জেন্ট মহি আলমকে নিয়ে লেখা লেখি করতেন , একদিন সেই বিষয় নিয়ে তাহার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান ছোটকালে প্রায় ৩৫ বছর আগে বন্ধুদের সাথে পাহাড়ে কাঠ কাটতে গেলে প্রায় সময় দেখতে পেতাম একটি কবর, সেই কবরটির উপর কিছু ইট দাঁড়িয়ে আছে, সংরক্ষনের অভাবে পুরোটা বিলিন প্রায়, বাসায় এসে সেই কবরটি বিষয়ে সব সময় বাবা সহ স্থানীয় দের কাছ থেকে জানতে পারি সেই ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সমরনায়ক,শহিদ ফ্লাইট সার্জেন্ট এ.এইচ.এম.মহিআলম চৌধুরী কবর,
সেই থেকে আমার বুকের ভেতর লালিত হয়েছিলেন তিনি , বয়স বেড়ে চলতেছে সকল মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হচ্ছে ও বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় এবং মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা লেখি হচ্ছে, সেই সব বই গুলি সব সময় আমি পড়ি তাকি হঠাৎ একদিন সেই শহিদ ফ্লাইট সার্জেন্ট এ.এইচ.এম.মহিআলম চৌধুরীকে নিয়ে একটি পত্রিকায় লিখেছে সেই কানে লিখা ছিল
২নং সাধনপুর ইউনিয়ন পরিষদেরস্থ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর রাজাকারের বুলেটে গুলীবিদ্ধ হয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন,সেই থেকে শুরু  বিগত কিছু আগে সেই কবরটি দেখতে গিয়ে দেখলাম জায়গাটা চেনার কোন উপায় নাই পাহাড়ধ্বসে পুরো কবরটাও বিলীন হয়ে গেছে, মনে মনে একপ্রকার জেদ করে নিলাম যেভাবেই হোক বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ সার্জেন্ট মহি আলম এর বিলীন হয়ে যাওয়া কবরস্থান"টা খুঁজে বের করব। হঠাৎ বিগত ৩০/৩/২০১৮ইং সকালে -আমি, স্নেহভাজন মোঃ হুমায়ূন, অনুপম কুমার, শিমুল দেব ও বঙ্কিম কে নিয়ে রওয়ানা দিলাম দূর্গম পাহাড় লাম্বাকাডা (প্রকাশ উতরের চেউঙ্গা) উদ্দেশ্যে। চলতিপথে শুধু অজানা একটা ভয় ছিল কখন বন্য হাতির পাল এসে আক্রমন করে তাই সতর্কতার সহিত এগোতে এগোতে একসময় পৌঁছেও গেলাম। প্রথমেই পুরো টিম হতবিহ্বল হয়ে গেলাম প্রকৃতি তার রুপ কতটা পরিবর্তন করতে পারে, না দেখে বিশ্বাস করা যাবেনা, পাহাড় ধ্বসে একেবারে বিলীন, তারপরও আমরা একসাথে খোঁজা শুরু করে দিলাম  আমাদের পুরো টিমে তখন সবার মাঝে একপ্রকার টান টান উত্তেজনা। আমাদের প্রথম উদ্দেশ্য কবর হয়ত খু্ঁজে পাওয়া যাবেনা অন্তত একটা ইট যদি খুঁজে বের করতে পারি তাহলে আমরা সফল মনে করব, প্রায় ৩ ঘন্টা খুঁজাখুঁজির পরও কোন আশার মুখ না দেখে একসময় চলে আসার সিদ্ধান্ত নিলাম। এরই মধ্যে আমাদের সহযোগীতায় এগিয়ে এলো পাহাড়ে লাকড়ি আনতে যাওয়া আমাদের পাড়ার লুলু দা ও বাণীগ্রাম এলাকার একজন মহিলা। তারা আমাদেরকে সহযোগীতা করাতে একসময় খুঁজে পেলাম জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ মহি আলমের বিলুপ্ত কবরস্থান টি যা মুল জায়গা থেকে প্রায় ২৫, ৩০ ফুট নীঁচে। লুলু'দা জানাল বছর দুয়েক আগেও মাথার খুলিটা নাকি দেখেছে। আমি একটা ইটকে কাঠি দিয়ে পরিস্কার করতে গিয়ে দেখলাম ইটের গায়ে লিখা M. 71পুরো টিম তখন একপ্রকার নির্বাক হয়ে চেয়ে রইলাম। জানতে পারলাম দেশ স্বাধীনের পরবর্তী সময়ে বাণীগ্রাম সাধনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের তৎকালীন ছাত্ররা নিজেরা ইট বহন করে নিয়ে ওখানে কবরস্থান টা সংস্কার করেছিল।প্রায় সাড়ে ৪ ঘন্টার অনুসন্ধান শেষ করে ফিরে আসার সময় টিমে সবার মধ্যে তখন এক প্রকার আনন্দ যেমন দেখলাম একপ্রকার ক্ষোভও ছিল।মুক্তিযোদ্ধা রা (জীবিত কিংবা মৃত) জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান।  হয়ত দুর্ভাগ্য আমরা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য জীবিত অনেক মুক্তিযোদ্ধা রা তাদের সহযোদ্ধা দের খবর নেওয়া তো দুরে থাক বিভিন্ন মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক আলোচনা সভায়ও তাদের স্মরণ করার প্রয়োজন মনে করেন না অথচ সরকার মুক্তিযোদ্ধা দের সর্বোত্তম সহযোগীতা করে নজির স্থাপন করে চলেছে।বাঁশখালীর মুক্তিযোদ্ধা দের প্রতি বিনীত অনুরোধ বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ সার্জেন্ট মহি আলমের স্মৃতি রক্ষায় এগিয়ে আসুন, আমরা আপনাদের সহযোগীতা করব।।আগামী ১৭ই নভেম্বর সকাল ১০টায় সাধনপুর ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণ ও বিকাল ৫টায়- চট্টগ্রাম থিয়েটার ইনিস্টিউটে আলাদাভাবে বৃহৎ পরিসরে শহীদ সার্জেন্ট মহি আলমের স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়েছে - এ মহান কাজে জড়িতদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।।
চোখের পানি সবসময় দুঃখের হয়না অনেক সময় তা আনন্দের বার্তাও বহন করে। আজ এতোদিন পর তাই যেন উপলব্ধি করলাম।।দীর্ঘ ৪৮ বছর পর অবশেষে আলোর মুখ দেখলো বিলীন হয়ে যাওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ সার্জেন্ট মহি আলমের স্মৃতি রক্ষার মহান উদ্যোগ। আজ  ৮ নভেম্বর বিকালে
সেই মুক্তিযুদ্ধের সমরনায়ক,শহিদ ফ্লাইট সার্জেন্ট এ.এইচ.এম.মহিআলম চৌধুরী সড়কের ফলক উন্মোচন সাধনপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদুর রশিদের সভাপতিত্বে ও সুশীল দে টুটু 'র সঞ্চালনায় ২নং সাধনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন চৌধুরী খোকা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মুক্তিযুদ্ধের সমরনায়ক,শহিদ ফ্লাইট সার্জেন্ট এ.এইচ.এম.মহিআলম চৌধুরী সড়কের ফলক উন্মোচন করেন।আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই বাঁশখালীর
২নং সাধনপুর  ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ, কৃষক লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দদের।১. শহীদ সার্জেন্ট মহি আলম সড়কের নামফলক স্থাপন।২. দুর্গম পাহাড় আলমের টিলায় শহীদ সার্জেন্ট মহি আলমের কবর সংরক্ষণ।
প্রক্রিয়াধীন প্রকল্পঃসাধনপুর ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে যেখানে  শহীদ সার্জেন্ট মহি আলম গুলীবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করে।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ