বাঁশখালীর পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগ

চট্টগ্রামের বাঁশখালীর পৌর মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগ আহ্বায়ক সেলিমুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন পৌরসভার চার কাউন্সিলর।

ভূয়া টেন্ডারের ফাইল তৈরি করে টাকা আত্মসাৎ, বিভিন্ন ওয়ার্ডে উন্নয়নের কোটেশন দেখিয়ে, বিদ্যুৎতের মালামাল ক্রয় সংক্রান্ত কোটেশন দেখিয়ে, বিচারের নামে টাকা আত্মসাৎ, নিয়োগ দুর্নীতি, টেন্ডারে অনিয়ম, ঘুষ গ্রহণসহ বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ দায়ের করেন তারা।
এসব অভিযোগ তদন্তে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালককে নির্দেশ দিয়েছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব দীপক চক্রবর্তী। ১৫ সেপ্টেম্বর দেওয়া এই চিঠিতে অভিযোগ তদন্ত করে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। অবশ্য মেয়র এসব অভিযোগ অস্বীকার করছেন।
মেয়েরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির আনিত অভিযোগকারীরা হলেন, ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দিলীপ চক্রবর্তী, ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নজরুল কবীর সিকদার, ৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ববলা কুমার দাস, ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-১ দেলোয়ার হোসেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অভিযোগ দেওয়া স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক দীপক চক্রবর্তী স্বাক্ষরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘চট্টগ্রাম জেলাধীন বাঁশখালী পৌরসভার ৫, ৬, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা বাঁশখালী পৌরসভা মেয়র সেলিমুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে পৌর পরিষদের মাসিক সভায় কাউন্সিলরদের মতামত কিংবা পরামর্শ মেয়র এড়িয়ে চলেন ও টেন্ডারে অনিয়ম, অর্থ আত্মসাৎ, অবৈধ নিয়োগ প্রদান, ঘুষ গ্রহণসহ খাসকামরার নামে অফিসের পাশে আলাদা একটি কক্ষে মহিলা কর্মচারীদের সঙ্গে অনৈতিক আচরণ সংক্রান্তসহ ১২টি অভিযোগ করেছেন।
সরেজমিন তদন্ত করে সুস্পষ্ট মতামতসহ প্রতিবেদন ১৫ দিনের মধ্যে দাখিল করতে আবেদনপত্রটি এতদসঙ্গে পাঠানো হল।’ অভিযোগসূত্রে জানা যায়, বাঁশখালী পৌরসভার ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মিয়ার বাজার ইজারার ১৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশ করে মেয়র আত্মসাৎ করেন।
একইভাবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মিয়ার বাজারের ইজারা মূল্য ১৬ লাখ ৪৩ হাজার ৭৫০ টাকা হলেও এর মধ্যে ১০ লাখ ৪৩ হাজার ৭৫০ টাকা ইজারাদার জামালের কাছ থেকে মেয়র নিজ ক্ষমতাবলে গ্রহণ করেন। এই টাকাও পৌরসভার কোষাগারে জমা হয়নি বলে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
পৌরসভা সদরের সামনে ১১ লাখ টাকা ব্যয়ে চারটি দোকান নির্মাণ করা হয়। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন না দিয়ে মেয়রের মনোনীত চার ব্যক্তিকে দোকানগুলো দিয়ে দেয়া হয়। দোকান প্রতি ৩ লাখ টাকা করে সেলামির নামে নিলেও তা পৌরসভার অ্যাকাউন্টে জমা না দিয়ে মেয়র আত্মসাৎ করেন।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে গ্যাস প্রকল্পের (ক্ষতিপূরণ বাবদ) ২২ লাখ ২৭ হাজার টাকা বাঁশখালী পৌরসভা কর্তৃপক্ষ পায়। ওই টাকা প্রাইম ব্যাংক বাঁশখালী শাখায় জমা করা হয়। পরে মেয়র সেলিমুল হক চৌধুরী একক স্বাক্ষরে প্রাইম ব্যাংক থেকে ১০ লাখ টাকা উত্তোলন করেন।
এ ছাড়াও জরুরি ভিত্তিতে রাস্তার সংস্কার করার জন্য ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দীলিপ চক্রবর্তীর নামে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার চেক ইস্যু করা হয়। কিন্তু মেয়র ওই কাউন্সিলরকে না জানিয়ে ওই টাকা তুলতে কাউন্সিলরের পক্ষে স্বাক্ষর করেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, বাঁশখালী পৌরসভার সৈয়দ শাহ মাজারের পাশে ১শ’ ফুট কাভার ড্রেন তৈরি করা হয়। ১শ’ ফুটের মধ্যে মাওলানা ছিদ্দিক ৭৫ ফুটের খরচ বহন করেন। অপর ২৫ ফুটের খরচ বহন করেন নারায়ণ দাশ নামে এক ব্যক্তি। ওই কাজের খরচ দেখিয়ে চলতি অর্থবছরে ভুয়া কাজের ফাইল দেখিয়ে তিন লাখ ৯৯ হাজার টাকা মেয়র নিজে উত্তোলন করেন। বর্তমানে বাঁশখালী পৌরসভায় কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকা সত্ত্বেও মেয়র সেলিমুল হক চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে ৬৮ জনকে নিয়োগ দেন। নিজের স্বেচ্ছাচারিতা ও ক্ষমতাবলে এসব কর্মচারী নিয়োগে পরিষদের সম্মতি নেয়া হয়নি। অস্থায়ী কর্মচারী নিয়োগে মেয়র প্রতি জনের কাছ থেকে ২-৩ লাখ টাকা করে ঘুষ নেন বলে অভিযোগ করা হয়। একইভাবে ১৬ জনকে স্থায়ী করার কথা বলে জনপ্রতি ৪-৫ লাখ টাকা ঘুষ নেন মেয়র এমন অভিযোগও তারা দাখিল করেন।
বিচার নিষ্পত্তির নামে টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে মৌলানা মামুন প্রতিবেদক’কে বলেন, আমার মেয়ের তালাক সংক্রান্ত বিচারের ২লক্ষ টাকা মেয়রের কাছে জমা ছিল। বিচার নিষ্পত্তি হওয়ার পরও আমি মেয়ের পাওয়ানা টাকা ফেরত পাইনি। এভাবে বিচার সংক্রান্ত উষারুদ্রের ৩০হাজার টাকা, পারভিন আক্তার নামে একজনের ৭০ হাজার টাকা বিচার নিষ্পত্তিবাবদ ফেরত পায়নি এমনও অভিযোগ করেন। ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দীলিপ চক্রবর্তী প্রতিবেদক’কে বলেন, ‘মেয়র নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছেন।
এ কারণে আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ বিভিন্ন দফতরে চিঠি দিয়েছি। স্থানীয় সরকার বিভাগ তদন্ত শুরু করেছে। এ সংক্রান্ত চিঠি আমরা হাতে পেয়েছি।’ ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর বাবলা কুমার দাস বলেন, মেয়রের অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে এলাকার কোনো উন্নয়ন করতে পারছি না।
প্যানেল-মেয়র দেলোয়ার হোসেন বলেন, পৌরসভার অভ্যন্তরে বেশ কয়েকটি সড়কের অবস্থা বেহাল। স্কুল-মাদরাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ সাধারণপথচারীদের চলাচলে সমস্যা অনেক সড়ক একটুকরো পাকা ইটও দেখেনি। আমরা এলাকায় লোকজনদের মুখ দেখাতে পারিনা।
/আজকের পত্রিকা! 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ