চট্টলা থেকে যেভাবে এশিয়ায় সৈয়দ শাহাবউদ্দিন শামীম

মোহাম্মদ এরশাদঃ বাংলা ভাষায় প্রথম দাবা বিষয়ক অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘চেসবিডি.কম’ এর সম্মানিত চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাবউদ্দিন শামীম ভাই এখন এশিয়ান ৩.২ জোনের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন।

জর্জিয়ার বাতুমি শহরে ৩ অক্টোবর এশিয়ান জোনের নির্বাচন পরিচালনা করেন এশিয়ান চেস ফেডারেশনের সভাপতি শেখ সুলতান বিন খলিফা আল নাহিয়ান ও কমনওয়েলথ চেস এসোসিয়েশনের সভাপতি ভরত সিং চৌহান।

এর আগে বাংলাদেশের কোন সংগঠকই আন্তর্জাতিক দাবা অঙ্গনে এমন সাংগঠনিক দক্ষতার পরিচয় দিয়ে নিজেকে সর্বোচ্চ অাসনে নিয়ে যেতে পারেননি।ব্যতিক্রম কেবল সৈয়দ শাহাবউদ্দিন শামীমই। জাতীয় পর্যায়ে বিশেষ করে দাবায় মাত্র সাত বছরের অভিজ্ঞতায় তিনি জোনের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে রীতিমতো চমকই দেখালেন।চট্টলা থেকে এশিয়ায় এ ভাবেই নিজেকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেলেন।

সৈয়দ শাহাবউদ্দিন শামীম চট্টগ্রামের একটি সভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি চট্টগ্রাম সরকারী কলেজিয়েট স্কুল থেকে এস এস সি, চট্টগ্রাম সরকারী কলেজ হতে এইচ এস সি এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হতে এম এস সি পাশ করে কর্মজীবন শুরু করেন।

শিক্ষা জীবনে বিভিন্ন খেলাধুলায় অংশগ্রহণের পর তিনি ১৯৮৮ সালে ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের যুগ্মসম্পাদক পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর জাতীয় পর্যায়ের ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ১৯৯১ সালে চট্টগ্রাম মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হওয়ার পর অদ্যাবধি এ দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

১৯৯৬ সালে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাহী সদস্য হওয়ার পর থেকে তিনবার কোষাধ্যক্ষ ও তিনবার অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক পদে অধিষ্ঠিত। এ এফ সি এর সুপারিশ মতে জেলা ফুটবল এসোসিয়েশন গঠন হওয়ার পর চট্টগ্রাম জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের প্রথম সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের দুইবার ফাইন্যান্স কমিটির ডেপুটি চেয়ারম্যান ছিলেন । ১৯৯৬ সাল থেকে চার বছর চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার দাবা কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন।

২০১২ সালে বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের নির্বাচনে সর্বাধিক ভোট পেয়ে সিনিয়র সহসভাপতি পদে নির্বাচিত হন। ২০১২ সালে তুরস্কে বিশ্ব দাবা সংস্থার ৮৩তম কংগ্রেসে বাংলাদেশের ডেলিগেট হিসেবে এবং ২০১৪ সালে নরওয়ের ট্রমসোয় বিশ্ব দাবা সংস্থার ৮৫তম কংগ্রেস ও ৪১তম বিশ্ব দাবা অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশ দলের চিফ দ্য মিশন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবীতে বিশ্ব দাবা সংস্থার ৮৬তম কংগ্রেসেরও বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। বাংলাদেশে প্রথম প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক দাবা একাডেমি এলিগেন্ট ইন্টারন্যাশনাল চেস একাডেমির চেয়ারম্যানও ছিলেন।

বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের সহসভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি নিজ উদ্যোগে দীর্ঘকাল পর চট্টগ্রামে একটি গ্র্যান্ডমাস্টার দাবা প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জৈষ্ঠ্য পুত্র মরহুম শেখ কামালের স্মৃতির উদ্দ্যেশে প্রতিষ্ঠিত শেখ কামাল স্পোর্টিং ক্লাবের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি শেখ কামাল আন্তর্জাতিক রেটিং দাবা প্রতিযোগিতার আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা করেন।

শুধু তাই নয়, পর পর দুইবার মরহুম শেখ কামালের স্ত্রী জাতীয় অ্যাথলেট মরহুমা সুলতানা কামালের নামে জাতীয় মহিলা দাবা চ্যাম্পিয়নশিপের আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা করেন। ২০১৫ সালে এলিগ্যান্ট জাতীয় মহিলা দাবা চ্যাম্পিয়নশিপেরও পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন সময়ে আন্তর্জাতিক দাবা ইভেন্টে অংশগ্রহণের জন্য গ্র্যান্ডমাস্টার, আন্তর্জাতিক মাস্টার, মহিলা ফিদেমাস্টারকে আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা করে তিনি বিদেশে পাঠিয়েছেন।

এমন কী সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবীতে এশিয়ান নেশন কাপে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশ জাতীয় দাবা, উজবেকিস্তানের তাশখন্দে এশিয়ান কন্টিনেন্টাল দাবার মহিলা দলকে পৃষ্ঠপোষকতা করেন। বৃহত্তর চট্টগ্রামে সিনিয়র ডিভিশন ক্লাব সমিতির সভাপতি ও চট্টগ্রাম স্পোর্টস ফোরামের সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।

বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশন নির্বাচনে ২০১৬ সালে বাংলাদেশ জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক পরিষদ সমর্থিত সমমনা দাবা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হবার পর থেকে দাবা উন্নয়নে কাজ করে চলেছেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ