ক্ষমতাসীনদের মধ্যে বাড়ছে সঙ্ঘাত

বিএন ডেস্কঃ
ক্ষমতাসীনদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সঙ্ঘাত বাড়ছে, বাড়ছে খুনোখুনি। আধিপত্য বিস্তারের লড়াই, মতার দ্বন্দ্বের কারণে এসব ঘটনা ঘটেছে। গত আট মাসে তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে পৌনে দুই শ’র মতো সঙ্ঘাতের ঘটনা ঘটেছে। নিহত হয়েছেন ২৫ জন। আহত হয়েছেন প্রায় দুই হাজার। অনেক ঘটনা রয়েছে যেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের কাছে অসহায়। সঙ্ঘাতময় উভয় গ্রুপ থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হুমকি-ধমকি দেয়ার ঘটনাও রয়েছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ক্ষমতাসীনদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটছে। সর্বশেষ গত ৩১ আগস্ট রাতে সিলেটে ছুরিকাঘাতে এস এম আবদুল আহাদ নামে এক আওয়ামী লীগ নেতা খুন হয়েছেন। জিন্দাবাজার এলাকার সিটি সেন্টারের সামনে এ ঘটনা ঘটে। নিহত এস এম আবদুল আহাদ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কুয়েত শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। ১৫ আগস্ট কক্সবাজারের মহেশখালীর আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ উল্লাহর বিরুদ্ধে যুবলীগ নেতা জিয়াবুলকে খুন করার অভিযোগ ওঠে।
১ আগস্ট ময়মনসিংহ মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আজাদ শেখকে (৩৫) গুলি করে ও গলাকেটে হত্যা করা হয়। এই ঘটনার এক মাস পরে গত শুক্রবার রাতে আজাদ শেখের স্ত্রী দিলারা আক্তার বাদি হয়ে ধর্মমন্ত্রীর ছেলে ও ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহিতুর রহমান শান্তসহ ২৫ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। রাজধানীতে দুখু ও ফরহাদসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জের ধরে।
১৫ জুন ডিশ ব্যবসায়ের নিয়ন্ত্রণ, পরিবহন থেকে চাঁদাবাজি এবং ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের জেরে বাড্ডায় আওয়ামী লীগ নেতা ফরহাদ হোসেন (৫০) খুন হন। তিনি উত্তর বাড্ডা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
গত ১ জুলাই গোপালগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আসাদুজ্জামান ওরফে টিটো শরীফকে (৪৪) খুন করা হয়। ৩ জুলাই ময়মনসিংহের ত্রিশালে মঠবাড়ী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি ছিলেন। আবদুল মতিন মাস্টার (৬৫) নামে এক মুক্তিযোদ্ধার গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়।
৯ জুলাই ছুরিকাঘাতে নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলায় আওয়ামী লীগ নেতা মশিউর রহমান বাবু (৪৫) নিহত হন। তিনি ধামইরহাট উপজেলার আড়ানগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন।
৫ জুন চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে মহিলা আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শাহিনা সুলতানা ফেন্সি (৫৭) খুন হন। ১৮ জুন নেত্রকোনা সদর উপজেলার মৌগাতি ইউনিয়নের ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি হারেছ মিয়া ছুরিকাঘাতে খুন হন।
১৩ মে খুন হয়েছেন যশোর জেলা তরুণ লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ মনিরুল ইসলাম (৩৮)।
এভাবেই ঘটছে একের পর এক খুনের ঘটনা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত আট মাসে ক্ষমতাসীন দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে প্রায় পৌনে দুই শ’ সহিংস ঘটনা ঘটে। এতে নিহত হয়েছেন ২৫ জন। আহত হয়েছেন দুই হাজারের ওপরে।
মানবাধিকার সংগঠন অধিকার-এর এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ক্ষমতাসীনরা ক্ষুদ্র স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্বে জড়িয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটাচ্ছে। এসব ঘটনায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের বিচারের আওতায় আনা যায় না।
আরো পড়ুন :
দাগনভূঞায় ছাত্রলীগ-স্বেচ্ছাসেবকলীগ সংঘর্ষ
দাগনভূঞা (ফেনী) সংবাদদাতা, ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৮
ফেনীর দাগনভূঞায় ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবকলীগের দুই নেতার অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষে ব্যবসায়ীসহ কমপক্ষে ৭ জন আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৩ রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে পুলিশ। শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় এ প্রতিবেদন লেখার সময়ও এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
পুলিশ, দলীয় সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আবু নাসের চৌধুরি আসিফ ও দাগনভূঞা পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক সাইফুল ইসলামের অনুসারীদের মাঝে দাগনভূঞা বাজার এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত দুইদিন ধরে উত্তেজনা চলছিল। শনিবার বিকেল ৪টার দিকে স্থানীয় একটি মাঠে ফুটবল খেলা দেখতে গিয়ে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে ছাত্রলীগের দুই কর্মী।
বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয় সওদাগর বাড়ি ও জগৎপুরের বেশকিছু বাসিন্দা এসে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। খবর পেয়ে আসিফ ও সাইফুল নিজ নিজ অনুসারিদের নিয়ে সেখানে গেলে উভয় পক্ষে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এক পক্ষ অপর পক্ষের উপর ইট, লাঠি, ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এসময় ইটের আঘাতে বাজারের ব্যাবসায়ী আবুল বাশার আহত হন। তিনি একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
সংঘর্ষে কমপক্ষে ৭ জন আহত হয়েছেন বলে জানায় দলীয় একাধিক সূত্র। তবে এরা গোপনে চিকিৎসা নেয়ায় তাদের নাম জানা যায়নি। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ ১৩ রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে।
এ বিষয়ে কথা বলতে প্যানেল মেয়র ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সাইফুল ইসলাম এবং ছাত্রলীগ নেতা আসিফকে মুঠোফোনে বার বার চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।
দাগনভূঞা থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে ফাঁকা গুলি চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এলাকায় উত্তেজনা রয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, বাজারে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ