বাংলাদেশ সরকারের প্রথম প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় নেতা শহীদ তাজউদ্দীন আহমদের ৯৩তম জন্মবার্ষিকী

গাজী গোফরানঃ
মহান মুক্তিযোদ্ধার নেতৃত্বদানকারী গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রথম প্রধান মন্ত্রী, জাতীয় নেতা শহীদ তাজউদ্দীন আহমদের ৯৩তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলনে এ মৃদুভাষী ছোটখাটো গড়নের মানুষটির সাংগঠনিক দক্ষতা বিশেষভাবে নজরে আসে। ১৯৬৬ সালে,বঙ্গবন্ধু যখন বাঙালির মুক্তির সনদ "৬ দফা " দাবী উত্থাপন করলেন তখন আওয়ামীলীগের প্রথম সারির অনেক নেতৃবৃন্দ সহ কিছু ছাত্রলীগ নেতা প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে ৬ দফা আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। অন্যদিকে জাতির পরম সৌভাগ্য যে, এই ৬৬ সালেই তাজউদ্দীন আহমদ আওয়ামীলীগের সাধারণ সসম্পাদক নির্বাচিত হন।সৈয়দ নজরুল, মনসুর আলী, কামরুজ্জামান, এম এ আজীজ,জহুর আহমদ চৌধুরীর মত কতিপয় জেলা পর্যায়ের স্বল্পখ্যাত নেতৃবৃন্দ ৬ দফার স্বপক্ষে প্রচার প্রচারনায়,নিজেদের সর্বস্ব বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পরেন। শেখ মনি, সিরাজুল আলম খাঁন,আব্দুর রাজ্জাক,কাজী আরেফ, তোফায়েল আহমদ প্রমুখ মিলে প্রায় পুরো ছাত্রলীগকে এ আন্দোলনে সফল ভাবে সম্পৃক্ত করতে পেরেছিলেন। অতপর ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০ এর নির্বাচনী সাফল্য, রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে "মুজিব নগর" সরকারের নেতৃত্বদান - এর সবখানেই পাওয়া যাবে তাজউদ্দীনের বিচক্ষণতা,দেশপ্রেম,সততা আর যোগ্যতার অনুপম উদাহরণ। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরঃ বাঙালির হাজার বছরের মুক্তির সংগ্রামের সফল পরিণতি স্বাধীন বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রীসভায় অর্থ মন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ। কোষাগার শূন্য, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও শূন্য। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে তাজউদ্দীন যখন স্বদেশ পূণঃনির্মাণে আত্মনিয়োগ করলেন,ঠিক তখনই চিহ্নিত ষড়যন্ত্রকারী (মোশতাক-ঠাকুর গং) পরাজিত শক্তির সহযোগিতায় "বঙ্গবন্ধু- তাজউদ্দীন" যুগলবন্দীতে ফাটল ধরানোর চেষ্টায় লিপ্ত হয়। দুঃখজনক সত্য যে, ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হয়েছিল। দৃশ্যপট থেকে সরে যেতে হলো তাজউদ্দীনকে। বঙ্গবন্ধুর প্রভাবশালী আত্মীয়দের কেউ কেউ এ ক্ষেত্রে বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে ব্যর্থ হন। যার বিষাদময় পরিণতি ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট। জাতির জনকের অবিশ্বাস্য, অনাকাঙ্ক্ষিত হত্যাকাণ্ডের পর অনেক অতি মুজিবপ্রেমী খুনিদের মন্ত্রী পরিষদে অংশ নিয়ে বোল পাল্টেছিলেন। কিন্তু তাজউদ্দীন, সৈয়দ নজরুল, মনসুর আলী আর কামরুজ্জামান জীবদ্দশায় যেমন বঙ্গবন্ধুর সহযোগী ছিলেন ; তেমনি জীবন দিয়ে হলেন নিহত বঙ্গবন্ধুুর রক্তাক্ত সহযাত্রী। তাজউদ্দীন ছিলেন একাধারে মেধাবী, ধীরস্থির,ভালো সংগঠক।এ রকম গুনের অধিকারী মানুষ আমাদের সমাজে বিরল নয়। বিরল হচ্ছে, দেশপ্রেম আর ঈমানের প্রশ্নে জীবনকে তুচ্ছজ্ঞান করতে পারার মত বীরপুরুষ। এখানেই ছোটখাটো গড়নের তাজউদ্দীন'রা অন্য অনেকের চেয়ে বিশাল! আজ শহীদ তাজউদ্দীন আহমদের জন্মদিন। এ মহামানবের স্মৃতিতে বিনম্র শ্রদ্ধা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ