রাশেদকে আরো ১০ দিনের রিমান্ড

বিএন ডেস্ক
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের মামলা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের (ভিসি) বাসভবনে ভাঙচুরের মামলায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা মুহাম্মদ রাশেদ খানকে ১০ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিত  রোববার ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর হাকিম মুহাম্মাদ আসাদুজ্জামান নূর এ আদেশ দেন।
এর আগে রোববারই তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে রাশেদকে আদালতে হাজির করে পুলিশ।
আদালত সূত্র জানায়, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের মামলায় রাশেদকে পুনরায় ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, রাশেদের ফেসবুক মেসেঞ্জার, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বিকাশ, রকেটের মাধ্যমে টাকার লেনদেন হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম আদালতকে জানান, রাশেদের হিসাবে সাত লাখ টাকার লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তখন রাশেদের আইনজীবী জায়েদুর রহমান আদালতকে বলেন, এ টাকা কোনো ব্যবসায়ী দেননি। ঢাকাসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীরা এ টাকা দিয়েছেন। কেউ দিয়েছেন ১০০ টাকা, কেউবা ৫০০ টাকা। ব্যানার, ফেস্টুন, মাইকের ভাড়া বাবদ খরচ চালানোর জন্য এ টাকা দিয়েছেন আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীরা। তখন রাশেদের আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘এ কেমন আন্দোলন যে আন্দোলন করতে সাত লাখ টাকা লাগে!’ রাশেদের আইনজীবী তখন আদালতকে বলেন, এ টাকা ছাত্রদের টাকা।
এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবনের হামলার ঘটনায় শাহবাগ থানায় করা মামলায় রাশেদকে ১০ দিন রিমান্ড নেওয়ার আবেদন করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এ ঘটনায় রাশেদের জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে বলে রিমান্ড আবেদনে বলা হয়। আদালত শুনানি শেষে দুই মামলায় রাশেদের ৫ দিন করে ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রাশেদকে ১ জুলাই রোববার রাজধানীর ভাষানটেক থেকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরদিন তাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে। আদালত রাশেদের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রাশেদের বাবা নবাই বিশ্বাস পেশায় রাজমিস্ত্রি। মা সালেহা বেগম গৃহিণী। দুপুরের পর তারা আদালতে আসেন। সরেজমিনে দেখা যায়, রাশেদের মা-বাবা ছাড়াও তার স্ত্রী রাবেয়া আলো আদালতে হাজির ছিলেন। রাশেদকে আদালতে তোলার পর তার মা-বাবাকে কাঁদতে দেখা যায়। রাশেদের মা বলেন, রাশেদ গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে ঝিনাইদহ গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকায় এসেছেন। তিনি অসুস্থ। রাশেদের বাবা বলেন, তিন বছর আগে বাসার ভিটেবাড়ি ব্যাংকের কাছে বন্ধক রেখে ছেলের লেখাপড়ার খরচ জুগিয়েছি। চেয়েছিলাম, ছেলে লেখাপড়া শেষ করে ভালো একটা চাকরি ধরবে। অথচ ছেলে তার জেলে।
রাশেদের বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলাটি করেন ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক আল নাহিয়ান খান। এজাহারে বলা হয়, গত ২৭ জুন রাত ৮টা ৮ মিনিটে রাশেদ খান ফেসবুক লাইভে মিথ্যা, মানহানিকর ও নাশকতা ছড়ানোর উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন। কিছু বক্তব্য সুস্পষ্টভাবে প্রধানমন্ত্রীর মানহানিকর ছিল।
আরো পড়ুন : আন্দোলনে জঙ্গিদের মতো নারীদের ব্যবহার করা হচ্ছে : ঢাবি ভিসি
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
কোটা সংস্কারের দাবি জানিয়ে শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন করছে সেখানে জঙ্গিবাদের ছায়া দেখতে পাচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) আখতারুজ্জামান। তার মতে এই আন্দোলনে জঙ্গিদের মতো নারীদের ব্যবহার করা হচ্ছে।  আখতারুজ্জামান বলেছেন, ‘তালেবান জঙ্গিরা বিভিন্ন গোপন আস্তানা থেকে যে রকম উসকানিমূলক ভিডিও বার্তা পাঠায়, তার অবিকল উগ্র চরমপন্থী মতাদর্শী প্রচারণামূলক ভিডিও আমি নিজে দেখেছি।’
রোববার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে কোটা আন্দোলন নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এসব কথা বলেন। উপাচার্য বলেন, ‘তালেবান নেতা মোল্লা ওমর ও ওসামা বিন লাদেনের মতো ভিডিও বার্তা পাঠানো হচ্ছে।’ তিনি বলেন, জঙ্গিরা যেভাবে শেষ অস্ত্র হিসেবে নারীদের ব্যবহার করে, সেভাবে কোটা আন্দোলনেও ছাত্রীদের ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয় এসব মেনে নেবে না। ফৌজদারি অপরাধ করলে আইনের শাসন কার্যকর হতে হবে।
কোটা আন্দোলনের সাথে কোনো জঙ্গি সংগঠনের যোগাযোগ আছে কি না, সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে আখতারুজ্জামান বলেন, ‘কোন সংগঠন জানি না। কিন্তু ফেসবুকে যে ভিডিও দেখেছি, সে ভিডিও জঙ্গিদের ধরনের। সেখানে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার কথা বলা হয়েছে। এসব দেখে মনে হয়েছে অশুভ কোনো শক্তির তৎপরতা রয়েছে।’
শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নিতে চায় উল্লেখ করে উপাচার্য বলেন, অশুভ শক্তির তৎপরতায় ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন চলছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অশুভ শক্তি ঢুকতে চাচ্ছে। তার প্রমাণ হিসেবে তিনি বলেন, লন্ডন থেকে ফোন করে তাদের এক সহকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
আখতারুজ্জামান বলেন, শিক্ষার্থীদের শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় শিথিলতা দেখিয়েছে। প্রক্টর অফিস ভাঙচুর ও উপাচার্য বাসভবনে হামলা হয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের হামলায় অপরাধীদের ধরতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে বলে জানান। তিনি শিক্ষার্থীদের দায়িত্বশীল আচরণ করার জন্য বলেন। কোনো শিক্ষার্থী আক্রান্ত হলে তারা ব্যথিত হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ভালো। তবে অশুভ তৎপরতা আছে। কোনো অশান্ত পরিবেশ বরদাশত করা হবে না।
এ সময় উপাচার্যের সাথে আরও উপস্থিত ছিলেন, সহ-উপাচার্য মোহাম্মদ সামাদ ও প্রক্টর গোলাম রব্বানী।
সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার আগে প্রগতিশীল ছাত্র জোট উপাচার্যের কাছে চারটি দাবি নিয়ে স্মারকলিপি দেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সন্ত্রাস-সহিংসতা, দখলদারি মুক্ত শিক্ষায় গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকরী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পুলিশি হয়রানি ও গ্রেপ্তার বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আটক শিক্ষার্থীদের মুক্তির জন্য আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে।
স্মারকলিপির ব্যাপারে উপাচার্য বলেন, তিনি এসব বিবেচনা করবেন। তবে স্মারকলিপির ভাষার ব্যাপারে আরও যত্নশীল হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন।
রোববার বেলা ১১টায় ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকবৃন্দের’ ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকসহ বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে পদযাত্রা বের করেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ও ক্যাম্পাসের বাইরে সাম্প্রতিক নিপীড়ন, গ্রেপ্তার, সহিংসতা ও হয়রানির প্রতিবাদে এই পদযাত্রার আয়োজন করা হয়। পদযাত্রাটি শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ