রথীশ হত্যাকাণ্ড : কারাগারে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দেয়া মোহন্তের মৃত্যু

বিএন ডেস্কঃ
স্ত্রীর পরকীয়ার জেরে খুন হওয়া রংপুর বিশেষ জজ আদালতের বিশেষ পিপি এবং জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকোট রথীশ চন্দ্র ভৌমিক বাবু সোনা হত্যা মামলায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়া তার অফিস সহকারী মিলন মোহন্ত মারা গেছেন। শুক্রবার দিবাগত রাত দেড়টায় রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান তিনি।
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন সেলের ওয়ার্ড বয় সালেকুজ্জামান জানান, গত ৬ এপ্রিল মিলন মোহন্তকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন সেলের ওয়ার্ডে চিকিত্সার জন্য আনা হয়। সেখানে চিকিত্সাধীন অবস্থায় তিনি শুক্রবার রাত দেড়টায় মারা যান। ময়না তদন্তের জন্য তার লাশ মর্গে রাখা হয়েছে।
গত ৬ এপ্রিল রাত সাড়ে ১০ টায় দুপুরে রংপুর অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের বিচারক আরিফা ইয়াসমিন মুক্তার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন নিহত এ্যডভোকেট রথীশের সহকারী এবং স্ত্রী দীপার ঘনিষ্টজন মদন চন্দ্র বর্মন মিলন মোহন্ত। এরপর তাকে কারাগারে নেয়া হয়। সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন ওয়ার্ডে আনা হয়।
রংপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান সাইফ জানান, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০ টায় রংপুর অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের বিচারক আরিফা ইয়াসমিন মুক্তার আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আল-আমিন ১০ দিনের রিমান্ডে থাকা রথিশের স্ত্রী দীপা ভৌমিকের বয়ফ্রেন্ড কামরুল ইসলামকে হাজির করেন। পরে ওই আদালতের বিচারকের কাছে কামরুল স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দেন। একই আদালতে গত ৬ এপ্রিল রাতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন এ্যডভোকেট বথীশের স্ত্রী স্নিগ্ধা সরকার দীপা ভৌমিক, তাজহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই ছাত্র রোকনুজ্জামান ও সবুজ ইসলাম এবং দুপুরে একই আদালতে এ্যডভোকেট রথীশের সহকারী এবং স্ত্রী দীপার ঘনিষ্টজন মদন চন্দ্র বর্মন মিলনও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন।
গত ২৯ মার্চ রাত ১০ টার দিকে রংপুর মহানগরীর তাজহাট বাবু পাড়ায় এ্যডভোকেট রথীশ চন্দ্র ভৌমিককে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে গলায় ওড়না পেচিয়ে হত্যা করে স্ত্রী স্নিগ্ধা সরকার দীপা ভৌমিক ও তার প্রেমিক কামরুল ইসলামও তার সহযোগিরা। এরপর রথীশের বিছানায় দীপা ও কামরুল রাত কাটায়। তারা পর দিন ৩০ মার্চ সকাল ১১ টার মধ্যে দিনের আলোতে বাড়ির আলমিরাতে লাশ ভর্তি করে বাইরে বের করে গুমের উদ্দেশ্যে মাটি খুড়ে পুতে রাখে। ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে জঙ্গি, দেবোত্তর সম্পত্তিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বাবু সোনা নিখোঁজের নাটক সাজিয়ে বিভিন্ন প্রপাগান্ডা চালান দীপা ভৌমিক ও প্রেমিক কামরুল ইসলাম। ৫ দিন পর দীপা ভৌমিকে র‌্যাব তুলে নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি বাবু সোনাকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। একপর্যায়ে তার দেখিয়ে দেয়া নগরীর তাজহাট মোল্লাপাড়ার পরিত্যাক্ত বাড়ির দরজা জানালাবিহীন রুমের মাটির নিচে বস্তাবন্দি অবস্থায় লাশ উদ্ধার করে। ২৬ মার্চ কামরুল ও দীপা নিজ স্কুলের দুই শিক্ষার্থী রোকন ও সবুজকে দিয়ে কামরুলের বড় ভাই খাদেমুল ইসলামের পরিত্যক্ত বাড়ির দরজাজানালা বিহীন ঘরের মেঝে খুরে গর্ত করে রেখেছিল। বুধবার ময়না তদন্ত শেষে তার লাশ দাহ করা হয়।
রংপুরের আইন, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠার এবং নগরবাসির কাছে একনামে পরিচিত খুন হওয়া এ্যডভোকেট রথীশ চন্দ্র ভৌমিক বাবু সোনার একমাত্র পুত্র ঢাকায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে লেখাপড়া করছেন। একমাত্র মেয়ে সরকারী বালিকা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী।
সূত্রঃ এন/ডি

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ