পর্যটনে সমৃদ্ধ বাঁশখালীর চা বাগান

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় পুকুরিয়ায় শুস্ক মৌসুম শুরু হওয়ার সাথে সাথে বাঁশখালী উপজেলা ছাড়াও দুর-দুরান্ত থেকে বিভিন্ন দর্শনার্থী ছাড়াও পিকনিক ফোগ্রাম নিয়ে ভিড় করতে দেখা যাচ্ছে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার পুকুরিয়া চাঁনপুর-বৈলগাঁও চা বাগানে। বর্তমানে চা বাগানে কচি পাতা গজিয়ে উঠছে। ক্লোন চা উৎপাদন করায় এই বাগানটি বর্তমানে দেশের অন্যতম শীর্ষ স্থানে রয়েছে। 
বাঁশখালীতে অবস্থিত ৩ হাজার ৪ শত ৭২.৫৩ একর জায়গাজুড়ে অবস্থিত এই চা-বাগানটি। লোক মুখে জানা গেছে, ১৯১২ সালে ইংরেজরা বাগানটি শুরু করেন তখন বাগানের ম্যানেজার ছিলেন হিঙ্গিন। তবে রেকর্ড পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, চট্টগ্রাম জেলাধীন বাঁশখালী উপজেলার লট হল ও লট চানপুর মৌজায় অবস্থিত চাঁদপুর বেলগাঁও চা-বাগানটি ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর থেকে মালিকানার অনুপস্থিতিতে অব্যবস্থাপনার সম্মুখীন হয়। ক্রমান্বয়ে বাগানের অধিকাংশ জমি স্থানীয় অধিবাসীদের অবৈধ দখলে চলে যায়। 
পরবর্তীতে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত রায় বাহাদুর জমিদারের মালিকানায় ছিল। জমিদার রায় বাহাদুরের জন্ম ছিল কুন্ড পরিবারে। তাই এই বাগান পূর্বে কুন্ড চা-বাগান নামে খ্যাত ছিল। ১৯৬৫ সালের একটি গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে বাগানটি অর্পিত চা-বাগানসমূহের চিফ কাস্টুডিয়ান চা-বোর্ডের উপর ন্যস্ত করা হয়। 
পরবর্তীতে ১৯৭২ সালের ৯ মার্চের একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তৎকালীন ইপিএমবি এর ব্যবস্থাপনাধীন আরও কতিপয় চা-বাগানসহ চাঁদপুর বেলগাঁও চা-বাগানটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পরিত্যক্ত চা-বাগানগুলো পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ চা-বোর্ডের আওতায় গঠিত বাংলাদেশ টি ইন্ডাস্ট্রিজ ম্যানেজম্যান্ট কমিটির (বিটিআইএমসি) উপর ন্যস্ত করা হয়। কিন্তু ইপিএমবি ও বিটিআইএমসি কোনো প্রতিষ্ঠানই চায়ের অস্তিত্ব বিহীন এ বাগানটির বেদখলীয় জমির দখল উদ্ধার করে চা-চাষাবাদ করতে পারেনি। ১৯৬৫ সাল থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ২০ বছর বাগানটি পরিত্যক্ত ছিল। এই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৮৫ সালে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্বকে) মাধ্যমে চা-বোর্ড প্রায় ৮ (আট) একর জমির উপর চা-চাষ শুরু করে। 
অতপর মাত্র ৮ (আট) একর চা-বাগানটি বাংলাদেশ চা-বোর্ড ১৯৯২ সালে মে মাসের ৫ তারিখে স্বাক্ষরিত চুক্তিপত্র অনুযায়ী চাঁদপুর বেলগাঁও চা-বাগানটি ব্যবস্থাপনার জন্য জনাব রাগীব আলীর স্বত্বাধিকারী বাঁশখালী টি কোম্পানীর নিকট হস্তান্তর করেন। অতপর ২০০৩ সালে বাঁশখালীটি কোম্পানির সমূদয় শেয়ার ব্র্যাক ক্রয় করে এবং কোম্পানি আইন ১৯৯৪ এর বিধান অনুযায়ী এ কোম্পানিকে ব্র্যাক বাঁশখালী টি কোম্পানি লিঃ নামকরণ করেন। এখানে প্রতিদিন ৭ শতাধিক শ্রমিক এই চা বাগানে তাদের শ্রমের মাধ্যমে নতুন পাতা উৎপাদন ট্রেসিং থেকে শুরু করে চা-বাগানের সামগ্রিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। 
বাঁশখালীর চা সারাদেশে মানের দিক দিয়ে অন্যতম স্থানে অবস্থান করলেও চট্টগ্রামে প্রথম স্থানে রয়েছে বলে জানান চা বাগানের ম্যানেজার আবুল বাশার। চলতি ২০১৮সাল বছরে ৩ লাখ ৫০ হাজার কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে চা বাগান কর্তৃপক্ষ তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। প্রতি বছর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে চা-পাতা তোলা না হলেও অপরাপর সময়ে চা-শ্রমিকরা তাদের কর্মঘণ্টা অনুসারে ২৫ কেজি চাপাতা তুলে থাকেন। শ্রমিকরা প্রতিদিন চাপাতা বাগান থেকে তুলে থাকেন। চা বাগানের অভ্যন্তরে ৭ শতাধিক কর্মচারী নাগরিক সুযোগ-সুবিধা, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষাসহ অন্যান্য সার্বিক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে বলে জানান চা-বাগানের ম্যানেজার আবুল বাশার। দেশের ১ম স্থান অধিকারী সিলেটের মধুপুর চা-বাগান। এর পরপরই বাঁশখালীর এই বাগানের অবস্থান। এদিকে চা-বাগান কর্তৃপক্ষ নিজস্ব উদ্যোগে প্রতিদিন বাগানের সর্বত্র আধুনিক উপায়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করায় প্রতিদিনই নতুন নতুন কচি পাতা গজে উঠছে। বর্তমান শীত মৌসুম আসতে না আসতেই এই চা-বাগানে পর্যটকরা ভিড় জমাচ্ছেন বাগানের নতুন কচি পাতা গজে উঠার দৃশ্য দেখার জন্য। বাঁশখালীর বৈলগাঁও পুকুরিয়া সরকার চা বাগান পরিদর্শনকালে বাগানের ম্যানেজার আবুল বাশারের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, বাঁশখালীর এই বিশাল চা বাগানের চা পাতা সারা দেশে সুখ্যাতি রয়েছে। যার ফলে দেশের যত সব চা বাগান রয়েছে বাঁশখালীর চা বাগানের পাতা মানের দিক দিয়ে অন্যতম স্থানে রয়েছে এবং চট্টগ্রামে অন্যতম স্থানে রয়েছে। এই মানের জন্য চা বাগানের কর্মরতরা প্রতিদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের উৎপাদন যত বৃদ্ধি পায় সরকার রাজস্ব তত বেশি পায়। 
বর্তমানে চা পাতার বিক্রিত অর্থ থেকে সরকার ১৫% হারে ভ্যাট পান। তবে তিনি বাগানের কিছু সমস্যার কথা উল্লেখ করে বলেন, পুকুরিয়া সড়ক থেকে চা বাগান পর্যন্ত আসতে প্রায় ৩ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নের প্রস্তাব পাঠালেও এখনো পর্যন্ত কোন তার কোন সুরহা হয়নি। তবে প্রশাসনিক কর্মকর্তা দুর দুরান্ত থেকে আসা পর্যটক বাগানের পরিচর্যা কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের জন্য অত্র সড়কটি অতিব জরুরী ভিক্তিতে সড়কটি সংস্কারের প্রয়োজন বলে জানান চা বাগানের ম্যানেজার আবুল বাশার। চা বাগানের চার পাশে ঘেরা বেড়া না থাকায় প্রতিদিন হাতির পাল চা বাগানে ছুটে আসে। ফলে শ্রমিক-কর্মচারীরা প্রায় সময় শংকিত অবস্থায় থাকে। 
ক্লান চা উৎপাদন করায় দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখার পাশাপাশি পর্যটনে মুখরিত হচ্ছে বাঁশখালীর চা বাগান তিনি সরকারি এই রাজস্ব আয়ের অন্যতম চা-বাগানকে আরও বেশি পৃষ্ঠপোষকতার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
সুত্রঃ দৈনিক সংগ্রাম

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ